রোহিঙ্গা সমাচার

আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা : মিয়ানমারে ফেরাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

টেকনাফ ভিশন ডেস্ক :
২২ আগস্ট হতে সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে পর্যায়ক্রমে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে সম্মত হওয়ায় বাংলাদেশও প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ১৮ আগস্ট রবিবার কক্সবাজারে এ সংক্রান্ত টার্স্কর্ফোস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত বলে নিশ্চিত করেছেন চ্ট্রগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল আলম নিজামী।
সুত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে টেকনাফের কেরুনতলী নৌ পথে ও বান্দরবানের ঘুমধুমে স্থলপথে দুটি প্রত্যাবাসন ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে এ দুটি ট্রানজিট ক্যাম্পের যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেওয়ার পর মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের স্বদেশে স্বাগত জানাবেন। এভাবেই আগামী ২২ আগস্ট বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি দল মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে ১৮ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফ প্রত্যাবাসন পয়েন্টে কোন রোহিঙ্গা পরিবারের অবস্থান দেখা যায় নি। এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে সরেজমিন পরিদর্শণে গিয়ে অনেকের বাড়ী ঘর তালাবদ্ধ। অনেকে নিজ কক্ষ ছেড়ে অন্য জনের কক্ষে গোপনে অবস্থান নিয়েছে। কেউ কেউ পালিয়ে অন্য ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস এন্ড হিউম্যান রাইট্স (এআরএসপিএইচ)’ সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ জানান, মিয়ানমান সরকারের একটি প্রতিনিধি টিম ও আসিয়ানের ৫ সদস্যসহ গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ করেছেন। সেখানে তারা আমাদের সাথে কথা বলেছৈন। সেখানে কথা ছিলো দেশে প্রত্যাবাসনের আগে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি ও আসিয়ান প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক বসে এ সমস্যার সমাধান বের করবে। কিন্ত্র এখানে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের মনে বার বার মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রæতি ভংগ করছে এমন মনোভাব তৈরী হয়েছে। এরফলে মূলত রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তার ক্ষেত্র তৈরী করছে মিয়ানমার। তিনি আরো জানান, অনেক রোহিঙ্গা বাড়ী ঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করতে শুরু করেছে। আসলে তারা যানেই না কাদের নাম মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনের জন্য চুড়ান্ত করেছে।
গত বছর ১৫ নভেম্বরে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র পাওয়া জামতলীর দিল মোহাম্মদ জানান, ওই সময় একটি এনজিও’র লোকজন খবর দিয়েছিলো তালিকায় তাদের নাম আছে তাই যে কোন দিন মিয়ানমারের ফেরত যেতে হবে। এবার এখনো কিছু বলা হয়নি। তিনি আরো জানান বাংলাদেশ সরকার থেকে বা অন্যকোন ভাবে তাদের উপর চাপ দেওয়া হয়নি। তবে ২২ আগস্ট মিয়ানমারে ফিরে যেতে হতে পারে এমন খবরে পার্শ্বের অনেকে পালিয়ে গেলেও তিনি প্রতিবন্ধি হওয়ার কারনে কোথাও পালিয়ে যেতে পারেন নি।
তিনি বলেন, আমাদের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার নির্যাতনের এখনো বিচারই হয়নি। এ অবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেয়ে এখানে আত্বহত্যা করা অনেক ভালো হবে বলেও মত দেন তিনি। একই সুরে কথা বলেন প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গা আব্দুর রশিদ, মোহাম্মদ সোয়াইব। তারা বলেন, পূর্ণ নাগরিকতা দেওয়ার সাথে সাথে কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে থাকবে না। স্বইচ্ছাই সবাই এমনিতেই চলে যাবে মিয়ানমারে।
এদিকে প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গা আতংকিত। অন্যদিকে জাতিসংঘ থেকে শুরু কওে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার এখনো মিয়ানমারের পরিবেশ ঠিক হয়নি বলে মত প্রকাশ করায় ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন শুরু হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরও প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের তাদেও নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যেতে অনিহা প্রকাশ কওে বিক্ষোভ করায় তা সফল হয়নি।
বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মো. আবুল কালাম বলেন, মিয়ানমার সরকার হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে চেষ্টা করছে। আমরাও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রত্যাবাসনের সঙ্গে যেহেতু মিয়ানমার সম্পৃক্ত তাই বিষয়টি উভয় দেশের সম্মতির ওপর নিভর্র করবে বলেও জানান তিনি।
আবুল কালাম আরো জানান, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত করা আছে । এর মধ্যে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম অথবা টেকনাফ উপজেলার কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প রয়েছে। তবে মিয়ানমারে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের জোর করা হবে না বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছে। বাছাইকৃত পরিবারের সদস্যদের তালিকা মিয়ানমারও ফের বাংলাদেশে দেয় । বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের শনাক্তকরণের কাজও শেষ করতে হবে। এরপরই প্রত্যাবাসনের আনুষ্ঠানিকতা।
স¤প্রতি দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রত্যাবাসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। মিয়ানমার আগামী ২২ আগস্ট হতে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। তবে এর আগেও গত বছল ১৫ নভেম্বর প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রত্যাবাসনের চেষ্টা বিফল হয়েছিলো। এবারও ্একই অবস্থার সৃষ্টি হলে আর্শ্চয্য হওয়ার কিছুই থাকবে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

Comment here