জাতীয়

আমার ওপর ভরসা রাখুন

কোনো দুর্নীতিবাজ ছাড় পাবে না ।। মুজিববর্ষ জাতিকে দেবে নতুন জীবনীশক্তি ।। সরকারের বছর পুর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক :

সরকারের বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দুর্নীতি দমন করে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি দেশবাসীকে বলেছেন, আমার ওপর ভরসা রাখুন।
২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসীন শেখ হাসিনা পরের দুটি নির্বাচনে আরও বড় জয় নিয়ে এখন টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
গতকার মঙ্গলবার সেই সরকারের বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন তিনি, যাতে তিনি বিগত সময়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতারোহণের সঙ্গে এখনকার তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এদেশের মানুষ ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খবর বিডিনিউজের। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামাত আবার ক্ষমতায় আসে। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেওয়া হয়। ‘হাওয়া ভবন’ খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাতের ‘অগ্নি সন্ত্রাস’ তুলে ধরে তাদের হুঁশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে আমরা বরদাশত করব না। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া হবে না।
২০০৯ সাল থেকে একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সব মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা তার সরকারের লক্ষ্য। ২০০৯ সাল থেকে আমরা একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনা করছি। আর সে লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনাদের জন্য কী করতে চেয়েছিলাম আর কী করতে পেরেছি, এ বিষয়ে আমরা সবসময়ই সচেতন। আপনারাও নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমরা মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা তা-ই বলি, যা আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ্য রয়েছে।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে উন্নীত করা, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার হওয়া, দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে কমে আসা, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৫ শতাংশে উন্নীত হওয়া, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল স্থাপন, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ছোটোখাটো অভিঘাত এই অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।
গত এক দশকে দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়নের সুফল যেন সবাই পায়, সেজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধা করব না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই, দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
গত বছরের কাজের মূল্যায়নের ভার জনগণের ওপর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। আমরা সব ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি, তা দাবি করব না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত বছরের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় দেইনি। জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মহল গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। আমরা জনগণের সহায়তায় দ্রুত সেসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।
ডেঙ্গু মোকাবেলার গত বছরের ব্যর্থতার নিরিখে এবার আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর গত বছর সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে এই রোগে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এডিস মশার বিস্তার রোধে আগে থেকেই সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন থেকে প্রেরণা নিয়ে নতুন পথ চলার কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। আসুন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা দল-মত নির্বিশেষে সকলে মিলে তার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসামপ্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন করে শপথ নেই।

Comment here