খেলাধুলা

ইমরুল ধামাকায় জয় টাইগারদের

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
দুই দফায় বিপর্যয়। দুবারই ত্রাণকর্তা ইমরুল কায়েস। সপ্তম উইকেটে সাইফউদ্দিনকে নিয়ে খেললেন রেকর্ড গড়া ইনিংস। আসল বীরত্বমাখা চকচকে ১৪৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। প্রথম ওয়ানডেতে তাতেই শক্ত পুঁজি বাংলাদেশের (৮ উইকেটে ২৭১)। জবাব দিতে বার বারই খেই হারিয়ে ফেলা জিম্বাবুয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও অল আউট হয়নি। ৯ উইকেটে সংগ্রহ ২৪৩। ইমরুল ধামাকায় ২৮ রানের জয়ে শুরুটা মনের মতোই হলো টাইগারদের।

বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা উড়ন্ত ছিল জিম্বাবুয়ের। ওপেনিংয়ে ক্যাপ্টেন মাসাকাদজা ও জহুয়ার ব্যাটিং ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিক শিবিরে। তবে সেই ভয় স্বস্তিতে ফিরিয়ে আনেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৪৮ রানের মাথায় বোল্ড জহুয়া (৩৫)। উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্নের পর আর কক্ষে ফিরতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ধারাবাহিক বিরতিতে পড়েছে উইকেট। কখনো মিরাজ, কখনো বা অপুর নাগিন ছোবলে কাত তারা। পথের কাঁটা ভয়ঙ্কর মাসাকাদজার রানআউটের পরই জয়ের সুবাস ছড়াতে শুরু করে টাইগার শিবির। তারপরও সপ্তম উইকেটে জমে যাওয়ার আভাস দিচ্ছিল শন উইলিয়ামস ও পিটার মুর (৪৫ রানের জুটি)। দলীয় ১৪৫ রানের মাথায় মুরকে এলবির ফাঁদে ফেলে সেই শঙ্কাও দূর করেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন রান যোগ হতেই রানআউট তিরিপানো। ম্যাচ তখন মাশরাফিদের হাতের মুঠোয়। শেষের দিকে ঝামেলা পাকিয়েছিল নবম উইকেটে শন উইলিয়ামস ও জারভিস। এই জুটি যোগ করে সর্বোচ্চ ৬৭। জারভিস ৩৭ রানে মাহমুদউল্লাহর শিকার হলেও ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন শন উইলিয়ামস। বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। অপু দুটি, রিয়াদ ও মোস্তাফিজুর নেন একটি করে উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের জন্য অনুমিতভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন ইমরুল কায়েস।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বড্ড বাজে ছিল বাংলাদেশের। দলীয় ১৭ রানে বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস (৪) ও অভিষিক্ত ফজলে রাব্বি (০)। দুজনই চাতারার শিকার। ৪ বল খেলেও থিতু হতে পারেননি রাব্বি। অভিষেকটাই তাই ধূসর হলো তার। তবে এরপর থেকেই খণ্ড খণ্ড জুটিতে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন ইমরুল কায়েস। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ইমরুলের অবদান ৪৯ রান। বাজে শটে মুশফিক (১৫) বিদায় নিলে ইমরুলের সঙ্গে শক্ত জুটি গড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। এই জুটি থেকে আসে ৭১ রান। ইনিংস মেরামতে যা কাজে দিয়েছে বেশ। মিঠুন ৩৭ রানে সাজঘরে ফিরলে আবার বিপর্যয়ের ধাক্কা বাংলাদেশ শিবিরে। দুই রানের মধ্যে নেই মাহমুদউল্লাহ (০) ও মিরাজের (১) উইকেট। এই ধাক্কাও সামলেছেন ইমরুল কায়েস। সপ্তম উইকেটে তার সঙ্গী তখন তরুণ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন।

ম্যাচে এই জুটির মাহাত্ম্যই অনেক। জিম্বাবুয়ের বোলারদের নাচিয়ে ছেড়েছেন দুজন। রান এসেছে তরতরিয়ে। ১১৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ব্যক্তিগত ৫ রানে নতুন জীবন পাওয়া ইমরুল কায়েস। তার সেঞ্চুরির উদযাপন ছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রবার্তো বেবেতোর মতো। শূন্য হাতে শিশুকে দোল খাওয়ানোর ভঙ্গি করেছিলেন বেবেতো। ইমরুল করলেন তা ব্যাট দিয়ে। কিছুদিন আগে সন্তানের জনক হয়েছেন ইমরুল। মায়াবী ইনিংসটা সেই সন্তানকেই উৎসর্গ করা হলো, তা বুঝতে কারো বাকি থাকেনি। সেঞ্চুরির পর ইমরুলের ব্যাট যেন আরো ধারালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় রানের ফুলঝুরি। বল কখনো মাটি কামড়ে, কখনো বা বাতাসে ছুঁয়ে আছড়ে পড়তে থাকে মিরপুরের গ্যালারিতে। সঙ্গে সাইফও ছিলেন দুর্দান্ত। একসময় মনে হচ্ছিল তামিমের সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের ইনিংসটা আজ ভেঙেই ফেলবেন ইমরুল। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তিনি স্বস্তি দিয়েছেন তামিমকে। থামেন ১৪০ বলে ১৪৪ রানে। যার মধ্যে ছিল ১৩টি বাউন্ডারি ও ৬টি ছক্কার মার। তাতেই স্পর্শ করেন দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক মুশফিকুর রহিমকে। মুশফিক তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ১৪৪ রান করেছিলেন গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুবাইয়ে।

ইমরুল বিদায় নিলেও সপ্তম উইকেট জুটির রেকর্ড হয়েছে এদিন। সপ্তম উইকেটে ইমরুল-সাইফ উদ্দিনের ১২৭ রানই এখন সর্বোচ্চ। আগেরটি ছিল মুশফিক-নাঈমের, ১০১। ইমরুলের বীরত্বের দিনে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির দেখা পান সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুয়ের হয়ে সফল বোলার কাইল জারভিস। নেন সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট। তেন্দাই চাতারা ৩টি, ব্রান্ডন মাভুটা নেন ১ উইকেট।

Comment here