এক্সক্লুসিভটেকনাফদৃষ্টিপাত

এখনো চিহ্নিত হয়নি অর্ধশতাধিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা! টেকনাফে মুক্তিযোদ্ধা সমাধি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেবে কে ?


জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ :
স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও টেকনাফে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন গুলো সংরক্ষন করা হয়নি। যদিও বা টেকনাফ হয়নি সরাসরি বন্দুক যুদ্ধ। তবে এখানে ছিলো পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর টর্চাও সেল। এই এখানে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের আশপাশের মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নির্মম নিযার্তন করা হতো। হত্যা করা হতো স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সেনানীদের। চকোরিয়ার কৃতিসন্তান , চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্র শহীদ আব্দুল হামিদকে এখানে অত্যাচার-নিযার্তন চালিয়ে শহীদ করা হয়েছিলো। পরে বর্তমান উপজেলা পরিষদের উত্তর-পশ্চিম অংশের হেচ্ছার খালের পাদদেশে গণ কবর দেওয়া হয়। এ বধ্যভূমিতে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধারে হত্যা করা হয়। যাদের বেশীর ভাগই অন্য এলাকার হওয়ায় কেউ পরিচিত ছিলো না। দেশ স্বাধীনের কয়েক দিন পরে শুধু মাত্র শহীদ আব্দুল হামিদের মৃতদেহ চিহ্নিত করতে পেরেিেছলো স্বজনরা। পরে তারঁ মৃদদেহ নিজ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হলেও প্রায় ৫০ জনের অধিক অপরিচিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার দেহ ও হাড় সংগ্রহ করে টেকনাফ পৌর সভার বড় করর স্থানের উত্তর পার্শ্বে আলাদা ভাবে সমাহিত করা হয়। প্রয়াত মোহাম্মদ হোসেন কন্ট্রাটর, মো: হোসনসহ অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মৃতদেহ বহনে সহায়তা করেছেন বলেও জানা যায়। সে সময়ের স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সাথে কথা বলে জানান গেছে এসব তথ্য। ৮০’ দশকে এই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কিছু উঠতি যুবকনেতা ফারুক বাবুল, কায়সার পারভেজ চৌধুরী, মুজাম্মেল হক, মুকুল চৌধুরীরা একটি মিনার নির্মাণ করে। জাতীয় দিবস সমুহে এটি শহীদ মিনার মনে করে এখানে এক সময় পু®পমাল্য দেওয়া হতো। সম্প্রতি এটি অযত্ব অবহেলায় পড়ে রয়েছে। কেউ এই সমাধিস্থলটির যতœ বা দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেনি। উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এ নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রস্তাব করা হলেও ্এখনো আলোর মূখ দেখেনি নাম না জানা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেও সমাধিস্থলটি। বরং বিভিন্ন সময়ে এখানের স্মৃতিচিহ্নটি ভেঙ্গে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এদিকে ২০১৩ সালের দিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম শাহ হাবীবুর রহমানের নেতৃত্বে বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত স্থান চিহ্নিত ও সংরক্ষনে গঠিত কমিঠির সদস্যরা টেকনাফে বধ্যভূমি ও শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের সমাধিস্থল পরিদর্শন করেছেন । এসময় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক মাষ্টার আব্দুস শুকুর ও প্রত্যক্ষদর্শী আবু হারেছ কাউন্সিলর তাদের দেখা ঘটনার বর্ণনা দেন । পরে কমিটির সদস্যরা পৌর কবরস্থান সংলগ্ন শহীদ কবরস্থানটি পরিদর্শন করেছিলেন। এর পর কোন উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মাষ্টার আব্দুস শুকুর বলেন, শহীদ আব্দুল হামিদের মৃতদেহ উদ্ধারের মধ্যদিয়ে ওখানের অন্যান্য নাম না জানা অর্ধ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ টেকনাফ বড় করর স্থানের উত্তর পাশ্বের্র মিনার চিহ্নিত স্থানে সমাহিত করা হয়। এটি সংরক্ষনে এখানে কোন সরকারী না নেওয়া বেদনাজনক।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের টেকনাফ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হেচ্ছার খালের বধ্যভূমিতে পাকবাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করতো। স্বাধিনতার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা এ বধ্যভূমিটি আবিস্কার করেন। পরবর্তীতে এখান থেকে প্রায় ৭৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করে পৌর কবরস্থানের পাশে সমাহিত করা হয়েছিল ।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, টেকনাফের মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। যা দ্রæত সময়ে সরকারী ভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। না হয় ইতিহাস বিকৃত হবে অতীতের মতো তাতে সন্দেহ নেই। তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এ প্রসংগে টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন, যেহেতু বধ্যভূমি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি স্থান পৌর এলাকায়। তাই এটি পৌরসভা কতৃপক্ষ উদ্যোগ নিতে পারেন। এ ব্যাপারে করনীয় ঠিক করতে তিনি পৌর মেয়ারসহ সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান।

Comment here