ক্রাইমজাতীয়টেকনাফসারাদেশ

ওসি প্রদীপের অন্ধকারের ডায়েরী: যে জনপদে বিচারের বানী নিরবে কাঁদে!

বিশেষ প্রতিবেদক :
সদ্য বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নগ্ন থাবা থেকে যেমন রেহাই মেলেনি রাত জেগে থানার আঙ্গিনা পাহারা দেওয়া কুকুরটির। তেমনি রেহাই মেলেনি সমাজের কোন শ্রেনীর নারী পুরুষের। এবার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার নির্যাতনের পর অভিযোগ নিয়ে বার্তা বাজারের কাছে মুখ খুললেন কক্সবাজার জেলার আরেক প্রবীণ সাংবাদিক, টেকনাফ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব ছৈয়দ হোসেন।
বিশেষ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে ওসি প্রদীপের আরেক নোংরামির চিত্র। তিনি জানান, পিতৃহীন ও মানসিক ভারসাম্যহীন এক মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। নাম তার ফাতেমা প্রকাশ টূনি। মানবিকবোধ থেকে স্বপ্রনোদিত হয়ে ৪ বছর বয়স কাল থেকে শিশুটির লালল পালনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সমাজে সবাই জানতো টুনি আমার পালিত কন্যা। তবে তাকে আমি নিজের কন্যার মতো জানতাম।
দিনটি ছিলো চলতি বছরের ৭ মার্চ। হঠাৎ অতর্কিত ভাবে কোন এক বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসালয়ে চিকৎসা পরবর্তী উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম সুন্দর হাট নামক এলাকায় একটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ মার্চ শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। মৃতুর পর ধর্মীয় অনুশাসন মতে দাফন কাফনের জন্য মৃতদেহ নিয়ে এলাকায় ফেরার পথে টেকনাফ মডেল থানার এসআই সাব্বির ওসি প্রদীপের ব্যক্তিগত আইনের পাতানো এক পরোয়ানা নিয়ে হাজির। শুনালেন প্রদীপ বন্ধনা, যেতে হবে ওসি প্রদীপের খাস কামরায়। সংবাদ পেয়ে থানায় গেলাম। সেই কর্মকর্তা আমাকে নিয়ে গেলেন ওসি প্রদীপের সিংহাসনে।
একটু পরে সিনেমাটিক ভিলেনের একটি সিকোয়েন্সের রিয়েলিটি শো উপস্থাপন করলো। আমার পালিত শিশু কন্যার পাতানো ওয়ারিশ দাবিদার কিছু লোক হাজির হলো। তাদের পক্ষ হয়ে ওসি প্রদীপ দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলেন। নয়তো অনেক ড্রামার সূচনা হবে এবং সবশেষে তার সাথে মেরিন ড্রাইভে ভ্রমনে নিয়ে যাবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন। আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করার সাথে সাথেই আমার উপর শাররিক নির্যাতন শুরু করে দিলো। তার হুকুমের তাবেদার এসআই সাব্বির আমাকে প্রদীপের অন্ধকার টর্চার সেলে বন্দি করলো। সেলে ঢুকে একটু পরে আবিষ্কার করলাম ছড়ানো ছিটানো বেশ কিছু রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। রক্ত মাখা নারীদের কাপড়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ। এভাবে ভয়ে ভয়ে অজানা শঙ্কা নিয়ে রাত কাটলো। দুপুরে কক্সবাজার আদালতে নিয়ে হস্তান্তর করা হলো। আদালতের নিকট জামিন আবেদন করা হলে শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে আসার পর তার অপকর্মের ব্যাপারে মুখ না খুলতে এমনকি স্থানীয় ও জেলার সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করলো। অবশেষে প্রাণ নাশের ভয়ে আমি চুপে গেলাম। এভাবে প্রদীপ যুগের অপ্রকাশিত অসংখ্য চরম সত্য চাপাপড়ে রয়েছে টেকনাফের মতো জনপদে। যেখানে প্রতিদিন বিচারের বানী নিরবে কাঁদে।

Comment here