জাতীয়টেকনাফ

টেকনাফের রইক্ষ্যংয়ে এক সমিতির বন্দোবস্ত প্রাপ্ত ২৬একর জমি রোহিঙ্গা ও এনজিও কর্তৃক জবর দখল!

জিয়াউল হক জিয়া : টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং এলাকায় “বিত্তহীন সমবায় সমিতির” দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্তি প্রাপ্ত ৫০ একর জমির মধ্যে প্রায় ২৬একর জমি রোহিঙ্গা ও এনজিও কর্তৃক জবর দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি একাধিকবার টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে লিখিত ভাবে অবহিত করলে ও তার কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ “রইক্ষ্যং ভিত্তহীন সমবায় সমিতির”৬১ পরিবারের পক্ষে বাচা মিয়া(সভাপতি),মীর কাশেম(সাধারণ সম্পাদক),আব্দুসসুবহান(সহ-সভাপতি)ও হেলাল উদ্দিন।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের অবহেলিত রইক্ষ্যং নামক গ্রামে খেটে খাওয়া হতদরিদ্র ৬২ পরিবারের ৬২ সদস্য বিশিষ্ট “রইক্ষ্যং ভিত্তহীন সমবায় সমিতি” নামে একটি সমিতি আত্বপ্রকাশ পায়। তৎকালে রইক্ষ্যং এর মৃত বেচা আলী নামক এক সমাজপতির নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খাসজমির বন্দোবস্তি চেয়ে আবেদন জানালে -৪৭১/৮৮-৮৯ মূলে ৫০ একর জমি রইক্ষ্যং ভিত্তহীন সমবায় সমিতির ৬২ জন সদস্যের অনূকুলে বন্দোবস্তি প্রদান করেন। যা ১৯৯৬-৯৭ সনে খতিয়ান সৃজিত হয়। ৮৮সালের পর থেকে সমিতির সদস্যরা ভোগ দখলে থেকে শাক,সবজি,বেগুন,মুলা,টমাটু,করলা ইত্যাদির ৩ থেকে ৪ ফসলী উৎপাদন হতো। যার একর প্রতি আয় আসত প্রায় ৪ লাখ টাকা। বছরে প্রায় ১ কোটি টাকার আয় ইনকাম তাদের হাতে আসতো। সমিতির ভাতঘর খ্যাত ৫০ এর জমির মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২৬ একরই রোহিঙ্গা ও রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট এনজিও দের দখলে রয়েছে।এতে তাদেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাড়িছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। সমিতির নামে বন্দোবস্তিকৃত জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনের পর ক্ষতিপূরণ তো দুরের কথা তাদের কে এনজিও কর্তৃক পুনঃবাসনের কথা ও ভাবা হয়নি। ২৫ আগষ্ট ২০১৭ মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনার বাঁধভাঙ্গা পানির মত রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পর প্রধান সড়কে হাজার হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান দেখে বিজিবি উনছিপ্রাং এলাকার রইক্ষ্যং নামক গ্রামে আশ্রয় নিতে বলে। এতে সমিতির সদস্যরা বাধা দিলে বিজিবি তাদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ক্ষেতের ফসলের উপর ঝুপড়ি মেরে বসে। তখন সবজির ভরা মৌসুম। জমিতে মুলা, বেগুন, ছঁই ইত্যাদি ছিল ভরপুর।ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট করে শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ঘন বসতি। পাশাপশি এনজিও সংস্থা আইওএম,ব্রাক,গণ স্বাস্থ্য,ইউনিসেফ,এমএসেফ, ডাব্লিউ এফপি,এ্যকশান এইড,মোয়াস সহ নানা এনজিও এতে আস্তানা গাড়ে। বর্তমানে রইক্ষ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসতি গড়ে উঠছে। তম্মধ্যে কিছু ফরেষ্ট ল্যান্ড,বাকি বেশির ভাগই জোত জমি। রইক্ষ্যং ভিত্তহীন সমবায় সমিতির সভাপতি বাচা মিয়া জানান,ক্যাম্প এলাকায় দিন দিন আমাদের জমি জবর দখল করা হচ্ছে। সমিতির সদস্যরা এখন অসহায়। শীতের একটি মৌসুম চলে গেলে ও আমরা কোন প্রকার চাষাবাদ করতে পারিনি। চরম অভাবেই আমাদের পরিবার দিন কাটাচ্ছে। রইক্ষ্যং এর ক্ষতিগ্রস্থ মীর কাশেম জানান, রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের ৮মাস অতিক্রম করলে ও আমাদের কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। স্থানিয় সর্দার আব্দু সোবহান জানান,আমাদের সমিতির বন্দোবস্থি প্রাপ্ত প্রায় ২৬একর জমি রোহিঙ্গা ও এনজিও কর্তৃক জবর দখল করে রেখেছে। অবশিষ্ট খালি জমি সমূহে অফিস,ঘর,নালা ,খাল খনন করে তা ও নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদের আর আয় রোজগারের কোন ব্যবস্থা নেই। সমিতির অপর নেতা মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, আমাদের চাষাবাদের জমি তে বর্তমান একটি বাজার, গণস্বাস্থ্য, ব্রাক,আইওএম,এমএসেফ, ডাব্লিউএফপির অফিস স্থাপনা রয়েছে। দিন দিন আমাদের জমি গ্রাস করছে তারা। বিষয়টি স্থানিয় চেয়ারম্যান,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কে অবহিত করা হলে ও কোন ফলোদয় হয়নি। এ ব্যাপারে হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ সমিতির সদস্যরা আমাকে অবহিত করার পর আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। আমি তাদের উচিত ক্ষতিপূরণ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছি। এ জমি গুলি দীর্ঘকাল যাবত সমিতির সদস্যরা ভোগ দখলে ছিল। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কেউ আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে কোন রোহিঙ্গা বা এনজিও অবৈধ ভাবে জোত বা বন্দোবস্তিকৃত জমি জবর দখল করে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

Comment here