এক্সক্লুসিভজাতীয়টেকনাফসারাদেশ

টেকনাফে প্রভাবশালী মহলের কুনজর প্রেসক্লাবে ; প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সীমান্ত জনপদ টেকনাফে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টেকনাফ প্রেসক্লাব দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকার পর বেসরকারী উন্নয়স সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় সংস্কার কাজ এগিয়ে চলাকালীন কক্সবাজার-৪ আসনের আলোচিত-সমালোচিত সাবেক সাংসদ বিশেষ মহলের প্ররোচনায় অর্তকিতভাবে টেকনাফ প্রেসক্লাব সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার পর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকেরা সাবেক সাংসদ বদির সাথে আলোচনার পর প্রেসক্লাব ভবনটির পূর্ণতা দানের চেষ্টা করলেও তাঁহার রহস্যজনক কর্মকান্ডে টেকনাফে কর্মরত সাংবাদিকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তাই বিষয়টি সুষ্ঠু সুরাহার জন্য টেকনাফের সাংবাদিকেরা প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গত ২২নভেম্বর টেকনাফ পৌরসভার জন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা,ড্রেন,কালভার্ট ও সড়ক বাতিসহ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে যাবার সময় টেকনাফ প্রেসক্লাবের জরাজীর্ণ ভবন নির্মান কাজে দায়িত্বরত এনজিও ফোরামের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নাঈমকে মারধর ও প্রেসক্লাবের ব্যানার ছিঁড়ে ছুড়ে মারেন এবং প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে এসে এটা কি মগের মুল্লুক নাকি শব্দ উচ্চার করে তাঁর চাচা পৌর মেয়র হাজী ইসলামকে ভবনটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়। এসময় পাশে থাকা বর্তমান সাংসদ শাহীন আকতার এক প্রকার বিব্রতকর ও অসহায় পরিলক্ষিত হয়।
ঘটনার পর টেকনাফ প্রেসক্লাব মনোনীত দায়িত্বশীল প্রতিনিধি দলের সাথে সাবেক এমপি বদির আমন্ত্রণে দফায় দফায় বৈঠক হয়। বৈঠকে সাংবাদিক প্রতিনিধিদের বলেন,শুধু ভবন নির্মান কেন করবেন এবার তোমাদের সুবর্ণ সুযোগ ভবনের জমিটি প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্ধ মূলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তি পেতে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন লিখে তাঁর হাতে জমা দেন। ওখানে এমপি সুপারিশ করে দেবে এবং যেমনটি পৌরসভা কার্যালয় ও মাদরাসা ভবনটি তড়িৎ আমি করে দিয়েছি। তখন তোমাদের ভবিষ্যতেও কোন প্রকার ঝামেলা হবে না। দরখাস্ত জমা হবার পরপরই পুনঃরায় কাজ চালু করে দেব। এমন আশ্বাস পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রেসক্লাবের ভোগ-দখলীয় ভবন ও জমিটির ভূমি আইন মতে প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্ধ পাওয়ার নিমিত্তে এমপি বদির কথা মতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন তৈরী করে আবেদনসহ সাক্ষাৎ করলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকে। তাঁর এমন আচরনে সন্দেহ হয় যে,প্রেসক্লাবটি নির্মাণ কাজ বিলম্ব করে কোন অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের পাঁয়তারা করছে। এছাড়া সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পিত কর্মকৌশল ও ঐক্য বানচালের জন্য ছলছাতুরী চালিয়েছে। সাবেক এমপির এমন আচরনে সর্বত্রে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে । একজন সাবেক সাংসদ নির্মানাধীন প্রেসক্লাবের ভিতরে ঢুকে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তা দেশের সম্পূর্ন প্রচলিত আইন পরিপন্থী কাজ বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয় সচেতনমহল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
টেকনাফ প্রেসক্লাবের নীতি নির্ধারকরা বলেন দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারে ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়া ওই ভবনটি “টেকনাফ প্রেসক্লাব” যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবেই সংস্কার ও পুনঃ নির্মাণ কাজ চলছিল।
প্রেসক্লাবের নির্মাণ কাজ, ভবন ও জমি অবৈধ হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি নিজেই আইন অমান্য করে একটি বিতর্কিত ও অনাকাংকিত ঘটনার জন্ম দিয়ে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে অপরকে আইনের শিক্ষায় শাসিত করছেন। যা খুবই দুঃখ ও উদ্বেগজনক। একজন সাবেক সাংসদের কাছে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ কখনো এ দৃষ্টতা আশা করেনি।
এরপর একদিকে প্রেসক্লাব প্রতিনিধিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক অব্যাহত রাখেন। অপরদিকে কথিত নামধারী সাংবাদিককে পাশে বসিয়ে টেকনাফ প্রেসক্লাব ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের নিয়ে অযাচিত, অবাস্থব মন্তব্য শুধু টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের দুঃখ দেয়নি বরং দেশের সকল মূল ধারার লেখক ও সাংবাদিক সমাজ এর হৃদয়ে আঘাত করেছেন। প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ সকল নিয়ম কানুন অনুসরণ করে ১৯৯৬সালে টেকনাফ থানা পরিষদ/নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে তৎকালিন পরিত্যক্ত অফিসার্স ক্লাবটি টেকনাফ প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্দ প্রদানের অনুমতি চেয়ে থানা পরিষদে আবেদন করিলে থানা অ/টেক/৫৩৩/বিবিধ/স্বা: ৯৬ তারিখ-৩০/০৯/৯৬ মূলে বরাদ্দ দেয়। তখনও পৌরসভা গঠিত হয়নি। ওইসময় আশপাশে প্রেসক্লাব ও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সেমি পাকা ভবন ছাড়া কোন স্থাপনা ছিলনা। টেকনাফ সদরের অংশ বিশেষকে পৌরসভা ঘোষণা দেয়ার পর-২০০১ সালে এই ভবনের অনুমতি/বরাদ্দ পাওয়ার জন্য পুনরায় প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ তৎকালিন টেকনাফ পৌর প্রশাসক এর কাছে লিখিতভাবে গত ২২/০৬/২০০১ সালে আবেদন জানালে স্বারক নং-৫৩৩ এর আলোকে টেকনাফ পৌর সভার স্বারক নং-১২২ তারিখ ০১.০৭.২০০১ মূলে ভবনটি টেকনাফ প্রেসক্লাবের স্বীকৃতি স্বরূপ সেখানেও বরাদ্দের অনুমতি মিলে। ১৯৯৬ ইং সাল হতে অদ্যবদি ওই ভবনটি প্রেস ক্লাবের নামে বরাদ্ধ দেওয়ার পর হতে তৎক্ষালীন সাংসদ সদস্যগণ, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আর্থিকসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছিল। স্বয়ং এমপি বদি নিজেই ভবনটি ব্যবহারের অকেঁজো হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করে দ্বিতল ভবন নির্মানের একাধিক বার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাঁর কথা কাজে কোন মিল থাকে না। সকালে বলে বিকালে ভুলে যায়। যাহার প্রমাণ এই টেকনাফ প্রেসক্লাবের লংকাকান্ড। দীর্ঘদিন পর হলেও প্রেসক্লাব এবং প্রতিবাদী মূল ধারার সাংবাদিকদের সাথে তাঁর অন্তরে জিঁইয়ে রাখা হিংসাত্মক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সর্বশেষ চলতি ২০২০সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রেসক্লাব সংস্কারের জন্য ইউএনএইচসিআর বরাবর আবেদন জানালে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর এর অর্থায়নে এবং এনজিওফোরাম’র সহযোগিতায় গত ২৮ অক্টোবর প্রেসক্লাবের উন্নয়ন কাজের সূচনা করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আকতার মিলি, গাউসিয়া কমিটি টেকনাফ উপজেলা সভাপতি, টেকনাফ প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ ছৈয়দ হোসাইন, সাবেক পৌর প্রশাসক এসএম ফারুক বাবুল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজাদী) সাবেক সহ-সভাপতি ও টেকনাফ সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী(দৈনিক কর্ণফুলী, দৈনিক কক্সবাজার-৭১), সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ তাহের নাঈম (যুগ্ম সম্পাদক কক্সবাজার-৭১), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও টেকনাফ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হক (দৈনিক সংবাদ,দৈনিক সৈকত) পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কায়সার পারভেজ চৌধুরী(দৈনিক চকোরী), টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন রশিদ (দৈনিক হিমছড়ি), পৌর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুর রহমান (দৈনিক সমকাল), প্রেসক্লাবের পরিবশে বিষয়ক সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র আবদুল্লাহ মনির দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ) সহ প্রেসক্লাবের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসক্লাবের ৮০% কাজ ইতি মধ্য সমাপ্তির পথে। সর্বশেষ প্রেসক্লাব বিরোধী স্বার্থপর বদির লালিত কিছু হলুদ সাংবাদিক, বন্দুক যুদ্ধ মামলার আসামীরা দিবালোকের ন্যায় সত্য একটি প্রতিষ্টান “প্রেসক্লাব” কে অবৈধ স্থাপনা,২০কোটি টাকা মুল্যের জমিতে মার্কেট নির্মাণ বলে অপপ্রচার চালিয়ে প্রেসক্লাবের সংস্কারমূলক নির্মাণ কাজ বাঁধাগ্রস্থ করতে তাঁরই ইশারায় সাংবাদিকদের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের অবতারনা করছে। অথচ বদি নিজেই এক স্বাক্ষাৎকারে এই প্রেসক্লাবে মাঝে মধ্যে আমিও সহযোগিতা করতাম বলে স্বীকার করেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রেসক্লাব ভবনের জমিটির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি থাকায় টেকনাফ প্রেসক্লাবের প্রতি বিশেষ মহলের কুনজর পড়েছে।
টেকনাফ প্রেসক্লাবকে এমপি বদির রোষানল থেকে মুক্ত করতে গণপ্রজাতšী¿ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা,তথ্যমন্ত্রী ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন টেকনাফ প্রেসক্লাব ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ। ###

Comment here