উখিয়াকক্সবাজারটেকনাফ

টেকনাফে বাম্পার ফলেছে সুপারি : বেকার ও কর্মহীন মানুষের মূখে হাসি

টেকনাফে বাম্পার ফলেছে সুপারি :

বেকার ও কর্মহীন মানুষের মূখে হাসি

মুহাম্মদ জুবায়ের :

টেকনাফের সুপারি এখানকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অন্যমত ভূমিকা রাখছে। সুপারি ব্যবসায় যুক্ত হয়ে বেকার ও কর্মহীন মানুষের মূখে হাসি ফুটেছে। তবে ন্যায্য মূল্য পচ্চে না এমন
ভিন্ন কথাও বলছেন চাষিরা।
এ বছর কক্সবাজার জেলার তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় এক কোটি ২৭ লাথ ৫০ হাজারটি গাছে ১২ হাজার ২৫০ মেট্রিকটন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে।
প্রতি টন সুপারি বিক্রি হয় দুই লাখ টাকায়। সর্বমোট যার দাম ২৪৫ কোটি টাকা।
এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়।
কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিসার কবির হোসেন জানান, জেলার উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় দুই হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। এর মধ্যে টেকনাফে এক হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি ফলন হয়েছে চলতি মৌসুমে।
টেকনাফ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, টেকনাফে ১২ শত ৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। বিশেষ করে উপকুলীয় অঞ্চল বাহারছড়া ইউনিয়ন, টেকনাফ সদর ও সাবরাং এলাকাসহ পুরো উপজেলায় সুপারি চাষ ব্যাপক বেড়েছে। এর মধ্যে উপজলার সাবরাং ইউপিতে সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হচ্ছে।
এদিকে টেকনাফের পৌর সভা, সাবরাং ও শামলাপুর সুপারি বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়,
প্রতি বছর স্থানীয় ভাবে উপাদিত সুপারি দেশ ছড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। ফলে সামান্য পুঁজিতেই ঘুরিয়ে দেয়া যায় ভাগ্যের চাকা। এ ধরনের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের বাসিন্দাদের। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা সাগর ও নদীতে মাছ শিকার, লবণ উপাদন ও সুপারী চাষ।
তারই মাঝে অল্প পুঁজিতে সুপারির ব্যবসা করে অসংখ্য বেকার ও কর্মহীন মানুষ আজ স্বাবলম্বী। অল্প দিনেই হয়েছেন লাখপতি। তবে চলতি মৌসূমে ন্যায্য মুল্য পাচ্চে না বাগান মালিক। সে জন্য হতাশায় ভূগছেন তারা। এমন আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার নুরুল ইসলাম কালু। তিনি বলেন,” চলতি বছর সুপারির বাজার মূল্য কম। তাই বাগান মালিক বা চাষিরা উচ্চ মূল্য পাচ্ছে না।”
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার অধিকাংশ বসতবাড়ির আশপাশ, পড়ে থাকা জমিতে শত শত সুপারি গাছ। প্রতিটি গাছে ধরে আছে থোকায় থোকায় হলদে-সবুজ রঙের সুপারি। আরো দেখা গেছে, এক সময় যেখানে ছিল জীর্ণশীর্ণ ঘর। সেখানেই আজ ইট-সিমেন্ট ও টিন দিয়ে বানানো পাকা বাড়ি, দালান।
সুপারি চাষে সফল হয়েছেন এমন অনেকেই জানান, বড় মূলধন ছাড়াই নিজদের বসতভিটার আশপাশে ও অনাবাদি জমিতে সুপারি বাগান করে ভালো উপার্জন করছেন তারা। তাদের দেখে আরো অনেকেই এখন সুপারি চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ডেগিল্যার বিল এলাকার মাও: মুহিব উল্লাহ বলেন, সুপারি চাষে বাড়তি ব্যয় ছাড়াই অধিক আয়ের সুযোগ রয়েছে। আমার বসতভিটায় প্রায় ৫ হাজারের অধিক গাছ রয়েছে। এসব গাছের সুপারি বিক্রি করে প্রতি বছর আমার কয়েক লাখ টাকা আয় হয়।
তিনি আরো বলেন, এ বছর সবে মাত্র সুপারির মৌসুম শুরু হয়েছে। এদিকে গত মৌসুমের সংরক্ষিত মজা সুপারি মুল্য না থাকায় এখনো অবিক্রিত রয়ে গেছে অনেকের। নিজস্ব উপাদিত বাগানের সুপারি হিসাবে লোকসানের আশংকা কম হলেও তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়ের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছরে ৮০ টি (এক পণ) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩৫০ টাকায়। যা অন্যান্য বছর বিক্রি হতো ৪/৫” শ টাকায়। আমাদের বাগান থেকে সুপারি কিনে অনেকেই ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ব্যবসায়ী রশিদ আলম মেম্বার বলেন, টেকনাফ থেকে প্রতিদিন টনটন সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে রংপুর এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া টেকনাফের সুপারি দেশ পেরিয়ে বিদেশে ও রপ্তানী হচ্ছে। এখন ১০৮০ টি সুপারি (এক কণ) পাচঁ থেকে ছয় হাজার টাকায় টেকনাফ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, রবি ও বৃহস্পতিবার টেকনাফ পৌর বাজার ও সাবরাং বাজার এবং শনি ও মঙ্গলবার টেকনাফের বাহারছড়ায় শামলাপুর বাজারে সুপারি হাট বসে। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যায়।

টেকনাফ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, ১২ শত ৬০হেক্টর জমিতে সুপারী বাগান রয়েছে। বিশেষ করে উপকুলীয় অঞ্চল বাহারছড়া ইউনিয়ন, টেকনাফ সদর ও সাবরাং এলাকাসহ পুরো উপজেলায় সুপারি চাষ ব্যাপক বেড়েছে। এর মধ্যে উপজলার সাবরাং ইউপিতে সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হচ্ছে।

Comment here