আন্তর্জাতিকরোহিঙ্গা সমাচার

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আরাকানে গেলেন সু চি !

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে জর্জরিত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকানাঞ্চলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়ায় সফর করছেন রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংসান সু চি । গত ২৭ বছরে এ প্রথম আরাকানে পা রাখলেন সু চি । ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে সু চি আরাকান সফর করেন । সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, একদিনের এই সফরে রাখাইনের উত্তর মংডুর তুমব্রæ ও দক্ষিণ মংডুর পেংডে প্রাং গ্রামে যান।
আরাকানের যে এলাকা থেকে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা মুসলিম সেনা নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, সু চি সেরকম একটি এলাকা সফর করেন। আজ বৃহস্পতিবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে রাখাইনের রাজধানী সিত্তুইয়ে থেকে সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মংডু যান।
রয়টার্সের খবরে প্রকাশ, আরাকান প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপের সদস্য ক্রিস লেওয়া জানিয়েছেন, সু চি সেখানে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের একটি অংশের সাথে আলাপ করেন।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় কঠোর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী সু চি। কিন্তু মিয়ানমার জাতিগত নিধনের বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০টি চৌকিকে আক্রমণ করেছে।
সু চি রাখাইন পরিদর্শনকালে সেখানে কয়েকজন রোহিঙ্গা ধর্মীয় নেতার সাথে আলাপ করেন। তাদেরকে তিনটি কথা বলেন বলে জানিয়েছেন ক্রিস লেওয়া। কথাগুলো হলো- শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করো, সরকার তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং পরস্পর ঝগড়া করো না।
সু চি ২০১৫ সালে নির্বাচনে বিপুল জয়লাভের পর আর কখনো রাখাইন যাননি। এ রাজ্যের উত্তরাংশে মংডু পর্যন্ত বসবাসকারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে জানিয়েছে, এ পরিদর্শনকালে ২০ জন সু চির সঙ্গী হয়েছেন। তারা সেনাবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টারে সেখানে যান।
আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যবসায়ী জ জ-ও সু চির সাথে রয়েছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাকান্ড এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান না নেয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে এরই মধ্যে বেশ সমালোচিত হয়েছেন সু চি। সরকারের একজন মুখপাত্র গন্যমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সু চি বৃহস্পতিবার সকাল পৌনেঁ ৯ টার সময় আরাকানের রাজধানী সিত্তুয়ে হতে হেলিকপ্টার যোগে মংডু আসেন।
তিনি মংডু থানার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দুটি এলাকা তুমব্রæ ও পেংডে প্রাং সফর করেন এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন।
বুধবার মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির মুখপাত্র জ্য হতেই অভিযোগ করেন, আরাকান প্রদেশ থেকে যে লক্ষ লক্ষ মুসলিম গত দু’মাসে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে গেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের কাজে বাংলাদেশের জন্যই দেরি হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় দৈনিক গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারকে তিনি বলেন, যে কোনো সময় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত বার্মা। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরতের এই প্রক্রিয়া হবে ১৯৯০ সালের চুক্তির ভিত্তিতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেই চুক্তির শর্তাবলী এখনো উপেক্ষা করছে।
রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জ্য হতেই বলেন, ‘আমরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত, কিন্তু অন্যপক্ষ এখনো শর্তাবলী মেনে নেয়নি এবং ফেরতের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। এটাই হচ্ছে প্রথম সত্য।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিশাল আশ্রয়শিবির তৈরির পরিকল্পনার কারণেই বাংলাদেশ বিলম্ব করছে বলে অভিযোগ করেন জ্য হতেই। সু চির এই মুখপাত্র বলেন, বর্তমানে তারা ৪০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এই অর্থ পাওয়ায় আমরা এখন শরাণার্থী প্রত্যবাসন কর্মসূচি বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কায় আছি। তিনি বলেন, ‘তারা আন্তর্জাতিক ভর্তুকি পেয়েছে। আমরা এখন শঙ্কিত যে, তারা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে অন্য চিন্তা করতে পারে।’
এর আগে সু চি বলেছেন, যারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে তথ্য-প্রমাণ দিতে পারবেন তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

গত আগস্টে বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে তারা পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

Comment here