কক্সবাজারজাতীয়টেকনাফসারাদেশ

প্রদীপের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ২য় মামলায় আসামী ২৭ পুলিশ, ১ দফাদার

ডেস্ক নিউজ: টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান সহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফ আমলী আদালতে দায়ের করা মামলার ২৭ জন পুলিশ ও একজন দফাদারকে (গ্রাম পুলিশ) আসামি করা হয়েছে।

আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাং হেলাল উদ্দিন মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি’কে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এর নীচে নয়, এমন পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তার হলো-(১) টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান (২) টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (৩) এএসআই মোঃ আরিফুর রহমান (৪) এসআই সুজিত চন্দ্র দে (৫) এসআই অরুণ কুমার চাকমা (৬) এসআই মোঃ নাজিম উদ্দিন ভূইয়া (৭) এসআই নাজিম উদ্দিন (৮) এসআই কামরুজ্জামান (৯) এএসআই আমির হোসেন (১০) এএসআই কাজী সাইফুদ্দিন (১১) এএসআই নাজিম উদ্দিন (১২) এএসআই মাঈন উদ্দিন (১৩) এএসআই মাজহারুল ইসলাম (১৪) এএসআই নাঈমুল হক (১৫) এএসআই মিশকাত উদ্দিন (১৬) এএসআই রাম ধন চন্দ্র দাশ (১৭) কনস্টেবল সাগর দেব (১৮) কনস্টেবল রুবেল শর্মা (১৯) কনস্টেবল আবু হানিফ (২০) কনস্টেবল মোঃ শরিফুল ইসলাম (২১) কনস্টেবল মোঃ আজিজ (২২) কনস্টেবল দ্বীন ইসলাম (২৩) কনস্টেবল মোঃ বোরহান (২৪) কনস্টেবল মোঃ জসিম উদ্দিন (২৫) কনস্টেবল আবদুশ শুক্কুর (২৬) কনস্টেবল সিকান্দর (২৭) কনস্টেবল মহি উদ্দিন এবং (২৮) আধা পুলিশ হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মৃত কামালের পুত্র নুর আমিন প্রকাশ নুর উল্লাহ দফাদার।

মামলার বাদীনি টেকনাফের হ্নীলা মৌলভীবাজারের মৃত সুলতান আহমদ প্রকাশ বাদশা’র স্ত্রী গুল চেহের (৫২) তার ফৌজদারি দরখাস্ত বলেছেন, গত ৪ জুলাই সকাল ১০টার দিকে তার সন্তান সাদ্দাম হোসেন ও জাহেদ হোসেনকে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এর নির্দেশে হোয়াইক্ষ্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান তার দলবল নিয়ে ধরে হোয়াইক্ষ্যং পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। তাদের ছাড়িয়ে আনতে পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে ফাঁড়ি ইনচার্জ মশিউর রহমান ১০লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তার ছেলের লাশ প্রদান করা হবে বলে হুমকি দেয়। পরে গুল চেহের অনন্যোপায় হয়ে নিজে ৩ লক্ষ টাকা ফাঁড়ি ইনচার্জ মশিউর রহমানকে দেন। পরদিন ৫জুলাই মশিউর রহমানের বাহক হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মৃত কামালের পুত্র নুর আমিন প্রকাশ নুর উল্লাহ দফাদারের মাধ্যমে আরো ২ লক্ষ টাকা দেন। এরপর ৬ জুলাই গুল চেহেরের কনিষ্ঠ পুত্র জাহেদ হোসেনকে টেকনাফ থানার জিআর : ৫৬২/২০২০ নম্বর মামলায় আটক দেখিয়ে চালান দেওয়া হয়। তার অপর পুত্র সাদ্দাম হোসেনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ৩ দিন পর ৭ জুলাই রাত ১টার দিকে একই হ্নীলার এলাকার জনৈক হাসান মেম্বারের বাড়ির প্রায় ৩শ’ গজ দূরে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে ভোর রাত ৪টার দিকে সেখানকার দায়িত্বপালনরত চিকিৎসক সাদ্দাম হোসেনকে মৃত ঘোষনা করেন। ফৌজদারি দরখাস্তে গুল চেহের বলেন, ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় তার পুত্র সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁড়ি ইনচার্জ, মশিউর রহমান, এএসআই মোঃ আরিফুর রহমান তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে অন্যান্য আসামীরা সহ মিলে ‘ক্রস ফায়ার’ এর নামে গুলি করে হত্যা করেছে।

ফৌজদারি দরখাস্তে ১০জনকে ঘটনার সাক্ষী করা হয়েছে এবং ৩৮৬/৩০২/৩৪ দন্ড বিধিতে অভিযোগ আনা হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আবদুল বারী বাদীনির পক্ষে মামলাটির গ্রহনযোগ্যতা শুনানি করেন। মামলা নম্বর সিআর : ১১৯/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে আগামী ২৭ অক্টোবর।

Comment here