উখিয়াকক্সবাজারজাতীয়টেকনাফরাজনীতি

ফেস-বুকে পক্ষে-বিপক্ষে ঝড় : উখিয়া-টেকনাফ আসনে এমপি বদির বিকল্প আ’লীগের ৬ প্রার্থী মাঠে

কক্সবাজার  প্রতিনিধি :
কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ১১ জাতীয় সংসদ নিবার্বনকে সামনে রেখে প্রায় হাফ ডজন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশার ঘোনষা দিয়েছেন। এতো দিন ধরে এ আসনের পর পর দু’র নিবার্চিত জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিকল্প নেয় মনে করতেন তার সমর্থকরা। হাল সময়ে বেশ কয়েকজন প্রার্থী অনেকটা আটঘাট বেধেঁ নিবাচর্নী গনসংযোগের ঢং এ প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাওয়ায় নানান সমিকরণ শুরু হয়েছে দলীয় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। এমনিতে চলমান মাদক বিরুধী অভিযানের পর থেকে ফের আব্দুর রহমান বদির বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। জাতীয় থেকে স্থানীয়ভাবে অনেকে আব্দুর রহমান বদিকে বাংলাদেশে আলোচিত মাদক ইয়াবা বিস্তারের প্রধান সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। যদিও বা বার বার তিনি তা নাকচ করে প্রমাণ দেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েন। এরপরও বিভিন্ন ভাবে তিনি সমালোচিত। বিশেষ করে সাধারণ দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তিনি জামায়াত- বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত। বিগত ইউপি নিবার্চনে টেকনাফ উপজেলায় নৌকার প্রতীকের বিরুদ্ধে সেন্টমার্টিন, সাবরাং, টেকনাফ সদর ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে নেগেটিভ ভূমিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ। এর মধ্যে হোয়াইক্যং ইউনিয়নে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী নূর আহমদ আনোয়ারীকে বিজয়ী করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন বলে জানান আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফরিদুল আলম জুয়েল। এ ছাড়া অপর ৩ টিকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিজয়ী করার সব কৌশন এমপি বদির বলে মনে করেন স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা। একই ভাবে উখিয়া উপজেলা ৫ টি ইউপিতে ৩ টিতে বিএনপি সমর্থক জিতেছে। আর ২ টি জিতেছে আওয়ামীলীগ। এর মধ্যে একজন উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ও এমপি বদির শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, অপর জন উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ও বর্তমান সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো: সফিঊল আলমের ভাই অধ্যক্ষ মো: শাহ আলম। বর্তমানে এ দু’ চেয়ারম্যনই আসন্ন সংসদ নিবার্চনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা ইতিমধ্যে পোষ্টারিং, ব্যানার লটকানা সহ গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।
এ প্রসংগে হলদিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো: শাহ আলম বলেন, মাদকদের বদনাম ঘোচাতে হলে এ আসনে পরিবর্তন দরকার। তাই সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে চাই। রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, আত্বীয়তা পারিবারিক বিষয়, দলীয় মনোনয়ন রাজনৈতিক বিষয়। জনগণের সেবা করে যাচ্ছি, মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আমার রাজনৈতিক অধিকার। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করে তরুণ নেতৃত্ব আগামী প্রজন্মকে মাদক ও জঙ্গি মুক্ত দেশ গড়তে পারবে তাহলে আমাকেও মনোনয়ন দিতে পারেন। আমি সেই লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
মাঠে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর। কক্সবাজার মহুকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমএনএ মরহুম এডভোকেট নুর আহমদ এর জৈষ্ঠ ছেলে সোহেল আহমদ বাহাদুর সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফের দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত কলে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দেখা সাক্ষাত হয়েছে। এরপর থেকে মনে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের সেবা করতে চাই। দল মনোনয়ন দিলে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।

এ ছাড়া আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী , উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় তাতীঁ লীগের কার্যকরী সভাপতি সাধনা দাস গুপ্তা । এসব নেতারা বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় করে এ আসনে মনোনয়ন পরির্বতনের দাবী জানান। এ সব বিষযে আব্দুর রহমান বদি বরাবরই গণমাধ্যমকে বলে আসছেন, এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। দলের যে কেউ মনোনয়ন চায়তে পারেন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। আসনটি ধরে রাখতে হবে। তাই দলীয় ঐক্যের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে হঠাৎ কক্সবাজার-৪ উখিয়া টেকনাফ নিবাচর্নী আসনে গণহারে মনোনয়ন প্রার্থীতা ঘোষনাকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ শুরু করে দিয়েছে। কেউ এমপি বদির পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে মতামতও প্রকাশ করে চলেছেন। সব মিলে এ আসন নিয়ে নতুন করে ভাবনায় পড়েছেন এমপি বদি। এ প্রসংগে এমপি বদির আত্বীয় ও টেকনাফ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আলম বাহাদুর তার ফেস বুক ওয়ালে লিখেছেন, “কক্সবাজার জেলার চারটি সংসদীয় আসন তার মধ্যে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে যে আসনটি শত ভাগ পাওয়ার নিশ্চয়তা আসে সেই আসনটি নিয়ে শুরু হয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র? ”
টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গুরা মিয়া লিখেছেন, “সম্ভাব্য সকল প্রার্থী প্রকৃত আ’লীগের কাছে সমান। শুধু মাথা খারাপ হাই ব্রীড আ’লীগের। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। ” উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোলতান মাহমুদ চৌধুরী লিখেছেন, “ উখিয়া টেকনাফের কলংক মোচন করতে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করুন। ”
মো: হোসাইন নামের একজন লিখেছেন, “ বসন্ত কালে বসন্ত কুকিল ত আসবেই বসন্তকাল চলে গেলে আর খুজে পাবেনা। ”
টেকনাফে বাহারছড়া এলাকার প্রভাবশালী সমাজপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম শামসুদ্দিন আহমদের ছেলে শহিদ উল্লাহ লিখেছেন , “ ভোট কিন্তু বিরবিজ্জা (মসৃন) , এখনো টের পায়নি ”
আফসান খান নামের একজন লিখেছেন, উখিয়া টেকনাফকে মাদক মুক্ত করতে সত্যিকারের আওয়ামী ঘরনার প্রার্থী চাই। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এটি এখন মূল বিবেচ্য বিষয়। ”
উখিয়া উপজেলা পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদে বিগত নিবার্চনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোছাইন জুয়েল তা ফেস বুক ওয়ালে লিখেছেন “ সার্কাসের নগরী উখিয়া-টেকনাফ । ”
উল্লেখ্য কক্সবাজার-৪ আসনে বিগত ২০১৪ সালের ১০ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ৩৩ হাজার ১১৪ জন। এর মধ্যে উখিয়া উপজেলাতে ছিলো ১ লাখ ৬ হাজার ৪৪৫ জন এবং টেকনাফ উপজেলায় ছিলো ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৬৯ জন। এবার ভোটের সংখ্যা আরো হাজার দশেক বৃদ্ধি পাবে।
এসব ভোটারের মন জয় করে বিজয়ী হতে সকলকে একযোগে কাজ করতে বলে মত প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব মো: শফিক মিয়া।

Comment here