আন্তর্জাতিককক্সবাজারটেকনাফ

মিথ্যুক অং সান সুচি! আইসিজে’র খবর জানতে রোহিঙ্গাদের চোখ টিভি-মোবাইলে

টেকনাফ প্রতিনিধি::

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সুচি দেওয়া বক্তব্যেকে নির্লজ্জা মিথ্যাচার বলে মন্তব্যে করেছেন কক্সবাজারের শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। কেউ কেউ অং সান সুচিকে মিথ্যুক বলতে ছাড়ছেন না।
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও আইসিজেতে চলমান শুনানির খবর জানতে বেশির রোহিঙ্গাদের দৃষ্টি ছিল টেলিভিশন, মোবাইল ও রেডির দিকে। বাংলাদেশের সময় ৩ টার দিকে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা কেউ মোবাইলে, কেউ চায়ের দোকানে খবর দেখতে ভীড় জমায়। এসময় মিয়ানমারের ষ্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি শুনানিতে অংশ নিয়ে গণহত্যা সমর্থনে দেওয়ার বক্ত্যবের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায়।

সরেজমিনে বুধবার বিকেলে গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডের হেগ-এ শুরু হওয়া মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনের খবর দেখতে কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের একটি চায়ের দোকানে ভীড় করেন। সেখানে বেশি বৃদ্ধসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা সেখানে টিভিতে খবর দেখেন। এতে ইংরেজিতে পারদর্শী রোহিঙ্গা যুবকরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া টেকনাফের নয়াপাড়া, শালবন, লেদা উখিয়ার লম্বাশিয়া, জামতলী, মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লোকজন টিভি ও মোবাইলে খবর দেখতে ব্যস্ত ছিল। কেননা অং সান সুচি কি বলছিল সেইটি দেখতে বেশি আগ্রহ ছিল তারা।

টিভিতে খবর দেখছিল রোহিঙ্গা মাঝি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়টি কিভাবে, গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করলেন অং সান সুচি । মানুষ কত নির্লজ্জ হলে এই কথা বলতে পারে তা ভাবিয়ে কূল পাচ্ছিনা। তবে গাম্বিয়া ও বাংলাদেশেকে ধন্যবাদ জানায়, অবেশেষে যে মিয়ানমার সরকারকে কাঠগড়ায় নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, টিভিতে দেখেছি কিভাবে পেঁচা মত তাকিয়ে ছিল অং সান সুচি। দেখে মনে হলে তিনি কিছু জানে না। নিজের স্বার্থে, যত দিন বেচেঁ থাকবেন সুচি তত দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষেই নিবেন। এটি খুব সহজে বোঝা গেল। আমরা আশা করছি রোহিঙ্গারা সুষ্ট বিচার পাবে।’

ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট্র একটি কসমেটিক দোকানে মোবাইলে খবর দেখছিল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘গাম্বিয়ার হেগে গণহত্যা মামলার শুনানি হওয়ায়, আশায় বুক বেঁধেছেন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। ন্যায়বিচার হলে শাস্তি পাবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মিয়ানমার সেনাবাহিনীরা। এতে করে নাগরিকত্ব পাওয়াসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে রাজি হবে। বুধবার থেকে ক্যাম্পের ইনটারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গাম্বিয়ার খবরটি রোহিঙ্গারা দেখতে সহজ হচ্ছে।’

রোহিঙ্গা নেতা নুর হোসেন ও মোহাম্মদ কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে, তার শাস্তি তাঁরা পাবে। এর জন্য হত কয়েকদিনে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে রোজা, দোয়া মাহাফিলসহ বিশেষ প্রাথনা করছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্টীদের ওপর বর্বরতার সাক্ষ্য দিতে ভিকটিম হিসেবে গাম্বিয়ার হেগে ৩ জন রোহিঙ্গা হেগে গেছেন। এর মধ্যে দুজন নারী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা সেখানে নির্মম ঘটনাগুলো তাঁরা সেখানে তুলে ধরবে। আমরা আশা করি আইসিজিতে সঠিক বিচার হবে। বিচার পেলে আমরা সেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব।

সংবাদ মাধ্যামের বরাত দিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সুচি দেওয়া বক্তব্যে মিথ্যাচার এবং সাজানো। কিভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর সংগঠিত গণহত্যাকে অস্বীকার করলেন তিনি। বিষষটি আমাদের মর্মাহত করেছে। এতে বুঝেছি আসলে তিনি নির্লজ্জ। আমরা আশা করছি রোহিঙ্গারা বিচার পাবে। এতে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর কাঠোর শাস্তি হবে।’

বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর কর্মকর্তা ও টেকনাফের শালবন, জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (উপ-সচিব) মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, ‘আন্তজার্তিক আদালতে দেয়া অং সান সুচি’র বক্ত্যব নিয়ে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের কোন ধরনের কর্মসূচি ছিলনা। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, আন্তজার্তি আদালতে বিচারের শুনানি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি।

Comment here