কক্সবাজাররোহিঙ্গা সমাচার

রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে, তবে…


জাবেদ ইকবাল চৌধুরী :
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দ্রæত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে তারা আশা করছেন বাংলাদেশ বা জাতি সংঘ মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করবেন। না হয় অতীতের মতো বার বার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হবে।  বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের  দু-দেশের মধ্যে সমযোতা স্বারক সই হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি মিয়ানমার সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। টেকনাফের দেদা, জাদিমোড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে শহরের চাক্কি পাড়ার (আকিয়াব) বাসিন্দা আবুল হাসিম জানান, ১৯৯১ সালে তার পরিবার প্রথম বাংলাদেশে পালিয়ে আাসে। এরপর শরনার্থী হিসেবে নয়া পাড়া ক্যাম্প বেশ কয়েক বছর থাকার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ১৯৯২ সালের চুক্তির আওয়ায় মিয়ানমারের ফিরে যান। কিন্তু সেখানে বেশী দিন থাকতে পারেনি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করার সুযোগ থাকছে না। সর্বোপরি ফেলে আসা বাড়ী-ঘরে আর বসতি গড়তে দেওয়া হয় না। নিজ দেশে শরনার্থীর মতো থাকার চেয়ে বাংলাদেশে থাকা অনেক ভাল। তাই প্রায় ১০/১২ বছর আগে ফের বাংলাদেশে পালিয়ে আসে আবুল হাসিম। তিনি দাবী করেন, বাংলাদেশ সরকার যেন তাদেও নিরাপত্তা ও নাগরিকতার ফায়সালা করেই মিয়ানমারের ফেরতের ব্যবস্থা করে। না হয় বাংলাদেশে বোমা মেওে হত্যা করলে ভালো হবে। অন্তত জানাযা পড়াবার ব্যবস্থা হবে। ওখানে মুসলিম হিসেবে দাফনেরও ব্যবস্থা নেই। একই সুরে কথা বলেন, মংডু বড় গওজিবিলের মো: আবুল বছর। তিনি বলেন, এখানে আমরা (রোহিঙ্গা) খাওয়ারের অভাবে আসিনি। আমরা বিচার চাইতে এসেছি। আমরা অবশ্যই আমাদের দেশে ফিওে যাবো। তবে আমাদের পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ী ঘর, গবাধিপশূও ক্ষতি পূরনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠি যেভাবে মিয়ানমারের নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে। রোহিঙ্গাদেরও সে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
জামিমোড়া এলাকায় কথা হয়, মিয়ানমারের মংডু আলী তইনজা (হাইস্সুরাতা) গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে হত্যা করতে দেখেছি। মিয়ানমারের সেনা ও উগ্রপন্থি মগেরা এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে। অন্য গ্রামে পালিয়ে গিয়ে পরে বাংলাদেশে চলে এসেছি শুধু জীবন বাচাতেঁ। ওখানে আমাদের ব্যবসা বানিজ্য ছিলো। বড় দোকান ছিলো। দোকানের মালামাল লুট করে নিয়েছে। বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন কি সেগুলো ফিরে পাবো। গত ২০১২ সালে আকিয়াবে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গার বাড়ী ঘর উচ্ছেদ কওে শরনার্থীর মতো করে রাখা হয়েছে। তাদেও নেই অন্ন বস্ত্র। নেই লেখা পড়া। আগে এদের স্ব স্ব জায়গা জমি ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। সেসব রোহিঙ্গাদেও পূর্নবাসন করলে বুঝতে পারবো বাংলাদেশে আ¤্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কি হাল হবে। রোহিঙ্গা নারী সেতারা ও সখিনা বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তবেই আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাবো। না হয় এখানেই মরবো।

Comment here