এক্সক্লুসিভক্রাইমটেকনাফরোহিঙ্গা সমাচারসারাদেশ

রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার তিন বছর আজ

রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তিন বছর ও টেকনাফের বর্তমান অবস্থা

মুহাম্মদ জুবাইর:
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সে দেশের সামরিকজান্তারা হত্যা,ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষিতে জীবন বাঁচাতে নাফনদী পাড়ি দিয়ে লাখলাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, গেল ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট। তখন হতে এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রোহিঙ্গারা।

গেল ২ বছর বিভিন্নভাবে দিবসটি পালন করা হলেও এবারে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে একটি সুত্রে জানায়। তবে রোহিঙ্গা নেতারা পুরনো দাবীর গল্প এখনো বলে আসছে। প্রত্যাবাসনের দুটি দিন তারিখ ঠিক হলেও আয়োজনের সব প্রস্তুতি থাকা সত্বেও দু’বারই ভেস্তে যায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। প্রথম দফায় ২০১৮ সালের ২৩ শে জানুয়ারিপ্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও প্রত্যাবাসনে রাজী না হয়ে উল্টো বিভিন্ন দাবী জুড়ে দিয়েছে রোহিঙ্গারা।

দাবীর মধ্যে ছিলো, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়ীঘর জমি ফেরত পাবার নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো। এসব দাবি নিয়ে তখন বিক্ষোভ করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। দ্বিতীয় দফা ২২শে অগাস্ট প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রকাশের পর ও মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজী হয়নি তারা। তখন রোহিঙ্গা নেতারা বলেছিলেন প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি আছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে প্রত্যাবাসনে কেউ রাজী হবেন না বলে জানিয়েছিলএ তখনকারও পাঁচটি দাবির একটি তালিকা সম্বলিত লিফলেট তখন ক্যাম্পগুলোতে প্রচার করছে-৩৯;ভয়েস অফ রোহিঙ্গা-৩৯; নামের একটি সংগঠন। এবারও তাদের দাবি ছিল, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

প্রথম দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কিছুটা আলাপ আলোচনা হলেও বর্তমানে থমকে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন । মাঝখানে দুই বার সরকারি ভাবে প্রত্যাবাসনের আয়োজন হলেও কোন রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি হয়নি নিজ দেশে। বরং জুড়ে দিয়েছে নানা শর্ত এতে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এদিকে ৩ বছরে রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে কেবল অতিষ্ঠ নয় বরং রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতংকে দিন কাটছে স্থানীয়দের। কারণ রোহিঙ্গারাই এখন স্থানীয়দের গুম খুন সহ নানান অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। আর সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত থাকে একটি সুবিধাভোগী মহল। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামি দিনের কথা চিন্তা করে রীতিমত অস্থিরতায় আছে স্থানীয়রা। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা অন্যকোন দেশে স্থানান্তর করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের ৩৪ টি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দু’বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ ঠিক হলেও নতুন করে নিপীড়নের মধ্যে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের উদ্যোগকে ’প্রতারণা’ বলছেন কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠনের কয়েকজন নেতা। গত তিন বছরে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ এবং কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহতথাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বিভিন্ন দাবি- দাওয়া পূরণের অজুহাতে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে বার বার প্রত্যাবাসন আটকে রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘস্থায়িত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগবাড়ছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাস্তবে আগ্রহী না হলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা ছলচাতুরি করছে।

রোহিঙ্গারা মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্য এখনো নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি। আবার সেখানে ফিরে গেলে মিয়ানমার তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে না এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের জন্য তৈরি করা ক্যাম্পে প্রায় জিম্মি অবস্থায় তাদের রাখা হবে। এ ধরনের নানা রকম অবিশ্বাস কাজ করছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। টেকনাফ রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে উখিয়া টেকনাফের ১২ টি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। আগে আসা রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে ৩৪ টি ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যেটা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ইতি মধ্যে ঘোষণা হয়েছে। আমরা দেখেছিলাম সরকার প্রথম দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কয়েকটি চুক্তি করেছিল মিয়ানমারের প্রতিনিধি এসেছিল,বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিয়ানমারে গিয়েছিল প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছিল কিন্তু সম্প্রতি বছর খানেক ধরে সেই আলোচনাও আর দেখা যাচ্ছেনা। আর রোহিঙ্গাদের কারণে এখন স্থানীয়রা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কারণ তারাই এখন স্থানীয়দের অপহরণ করে গুম খুন করতে দ্বিধা করছেনা।

টেকনাফ-উখিয়ার ব্যবসায়ি সহ অসংখ্য স্থানীয়দের অপহরণ করে হত্যা সহ চাঁদা আদায় করেছে রোহিঙ্গারা কিন্তু সেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কি বা ব্যবস্থা নিয়েছে? বরং সুবিধাভোগী মহলের পৃষ্টপোষকতায় তারা পার পেয়ে গেছে। এখন আমাদের রোহিঙ্গাদের সমীহ করে চলার মত অবস্থা হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। তাই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা তৃতীয় কোন দেশে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার দাবী জানান তিনি।রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জায়গা এখনও নিরাপদ নয়। তাদের নিয়ে যদি ক্যাম্পে রাখা হয় তাহলে বাংলাদেশের ক্যাম্পই তাদের জন্য ভালো।

Comment here