আন্তর্জাতিক

শিক্ষার অভাব রোহিঙ্গা তারুণদের হতাশাকে গভীর করে তুলছে- ইউনিসেফ : বাংলদেশে আশ্রয় নেয়া ৫ লাখেরও অধিক শিশুর মানসম্পন্ন শিক্ষা ও জীবন-দক্ষতা খুবই জরুরী

কক্সবাজার :
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা তরুণদের মধ্যে হতাশার ঝুঁকি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাচেছ বলে জানিয়েছে জাতি সংঘ শিশু তহবিল সংস্থা (ইউনিসেফ)। বেশির ভাগ শরণার্থী বাস করে এমন বড় বড় আশ্রয়কেন্দ্র ও তার আশেপাশে শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘের শিশু সংস্থা তাদের শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে জরুরী বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছে। চরম সহিংসতার ফলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের বাংলাদেশে আসার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই প্রতেবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
তাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত সামগ্রিক শিক্ষাখাত ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী ২ লক্ষ ৮০ হাজার শিশুকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। এ সকল শিশুদের মধ্যে থেকে ইউনিসেফ ও তার সহযোগিরা ২ হাজার ১৬৭টি শিক্ষা কেন্দ্রে ১ লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ২৫ হাজারের বেশি শিশু কোনো ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না । এর জন্য আরো অতিরিক্ত ৬৪০টি শিক্ষা কেন্দ্রের প্রয়োজন।
এছাড়াও ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের ৯৭ শতাংশ এখনো কোনো ধরনের শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, “বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশু ও তরুণদের জন্য শুধুমাত্র বেঁচে থাকাই যথেষ্ট নয়। তাদের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা প্রদান করা ভীষণ প্রয়োজন। এসব কারনে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় গুণগত শিক্ষা এবং দক্ষতা বিকাশের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
আশ্রয় কেন্দ্রের শিক্ষা কেন্দ্র গুলোতে অধ্যয়নরত কম বয়সী শরণার্থী শিশুদের জন্য আরো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং শেখার উপকরণ ক্রমান্বয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য আরো কাঠামোবদ্ধ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে সহায়তা করার জন্য ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারকে জাতীয় শিক্ষামূলক সম্পদসমূহ- যেমন, শিক্ষা পাঠ্যক্রম, শিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ ম্যানুয়্যাল ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের আহবান জানিয়ে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) হেনরিয়েটা ফোর বলেন, “শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের উপকরণ সরবরাহ করা একটি বিশাল কাজ এবং সকল সহযোগীর পূর্ণ সমর্থন পাওয়া গেলেই কেবলমাত্র এটি করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, “কিন্তু একটি প্রজন্মের শিশু ও তরুণদের আশা-আকাংখা ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা তাদেরকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দিতে পারিনা।”
ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো: আবুল কালাম জানান, “বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ব্যাস্তুুচ্যুত মিয়ানমার শিশুদের শিক্ষা ও জীবন দক্ষতা বাড়াতে সরকারের সাথে জাতি সংঘ শিশু সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থা গুলো কাজ করে যাচ্ছে। তারা মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সহায়তা আরো বাড়াতে হবে।”
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ ছাড়া, কিশোর-কিশোরীরা পাচারকারীদের শিকার হতে পারে। কারন এই পাচারকারীরা হতাশপ্রস্থ তরুণ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বাইরে পাচারের প্রস্তাব দেয় এবং মাদক ব্যবসায়ীরাও এই এলাকায় সচল। বিশেষ করে, রাতের বেলায় নারীদের হয়রানি এবং নির্যাতনের সন্মুখিন হতে হয়।
এসব বিবেচনা হতে যুব কেন্দ্র এবং কিশোর ক্লাবের উন্নয়নে ইউনিসেফ সহায়তা প্রদান করছে। বিস্তৃত একটি প্যাকেজের অংশ হিসাবে এসব কেন্দ্র ও ক্লাবে জীবন-দক্ষতা, মনো-সামাজিক সহায়তা, মৌলিক সাক্ষরতা এবং সংখ্যা গণনা ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা দেয়া হয়। জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত এরকম প্রায় ৭০টি ক্লাব চালু করা হয়েছিল। তবে, এরকম আরো অনেক কার্যক্রম প্রয়োজন।
ইউনিসেফ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি টমো হোজুমি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো কিশোর-কিশোরীরা প্রতিনিয়ত পাচার, নির্যাতন, মেয়েরা বাল্যবিবাহ’র মত ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য তাদের যে সব দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো তৈরিতে সহায়তা করা।”
ইউনিসেফ সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে মানবিক সংস্থা গুলো স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ, শিক্ষা, সুরক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক সেবা সমূহকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে।
দিবারাত্রি গর্ভবতী মা ও শিশুদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা এবং পাইপযুক্ত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে (পানির কল) কল তলা গুলোতে ক্লোরিনযুক্ত পানির বিস্তৃত ব্যবস্থা করা।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ডাইরিয়া এবং পানিবাহিত রোগ এখনো একটি হুমকি হলেও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার হ্রাস পেয়েছে।

Comment here