টেকনাফসারাদেশ

হ্নীলায় ভূমিদস্যু ও চোরাকারবারীদের হামলায় দুই সংবাদকর্মী আহত

জসিম উদ্দিন টিপু : হ্নীলায় সরকারী স্লুইচ গেইট বন্ধ করে মৎস্য ঘেঁর তৈরীর মাধ্যমে ভোগ করে আসছে ভূমিদস্যু ও চোরাকারবারী চক্র। কৌশলে বসত-বাড়ি জবর দখলের লক্ষ্যে সম্প্রতি সময়ের টানা ভারীবর্ষণে ইচ্ছাকৃতভাবে স্লুইচ গেইট বন্ধ করে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বসত-বাড়ি ডুবে গিয়ে জন-জীবন ব্যাহত হয়। ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্মরত স্থানীয় দুই সংবাদকর্মী ছবি তুলতে গিয়েই সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু ও চোরাকারবারীদের হামলার শিকার হয়েছে। আহত সংবাদকর্মীদের উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার হ্নীলা মোচনী পাড়ার পূর্ব পাশের্^ প্লাবিত এলাকার ছবি তুলতে যায় দৈনিক আজকের কক্সবাজার পত্রিকার হ্নীলা প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসাইন ও দৈনিক আপন কণ্ঠের হ্নীলা প্রতিনিধি ফরিদুল আলম। ছবি করে ফিরে আসার সময় প্রধান সড়কের উপরে থাকা সরকারী স্লুইচ গেইট বন্ধকারী দক্ষিণ লেদার মৃত গোলাম শরীফের পুত্র কবির আহমদ (৫৬) এর ইন্ধনে মোচনীর শবি আলম, তার মদ্যপ পুত্র জাফর আলম (৪০), জাফর আলমের পুত্র ইয়াবা কারবারী আবুল কালাম (২২) ও সোহেল রানা অভি (২১) সহ ৭/৮ লোকজন মিলে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে এবং আটকে রাখে। তাদের সাথে থাকা ক্যামেরা, মুঠোফোন, আইডি কার্ড ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে অপরাপর সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বে তাদের ছেড়ে দেয়। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। এই ব্যাপারে হামলাকারী জাফর আলমকে প্রধান আসামী করে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, সংবাদকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। এই ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারী স্লুইচ গেইট বন্ধ করে মৎস্যঘেঁর বানিয়ে লীজ দিয়ে ভোগ-দখল করে আসছে একটি প্রভাবশালী চক্র। গত ৪/৫ দিনের টানা ভারীবর্ষণে লেদা-মোচনীর মধ্যবর্তী স্লুইচ গেইট খুলে না দেওয়ায় নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্থানীয় মৃত নাজির হোছনের পুত্র কালা মিয়া, কালা মিয়ার পুত্র অলি আহমদ, নজির আহমদ, আলী আহমদ, মৃত মোঃ সেলিমের পুত্র আজিজুর রহমানের বসত-বাড়ি ডুবে যায়। এতে কালা মিয়ার ১০ বস্তা ধান পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। অলি আহমদের এক বস্তা চাল ভিজে নষ্ট হয় এবং ৫/৬টি মোরগ-মুরগী ভেসে যায়। নজির আহমদের ২০ বস্তা চাল ভিজে যায় এবং স্বর্ণের আংটি ও চেইন পানিতে হারিয়ে যায়। আলী আহমদের ৮ম শ্রেণী পড়–য়া ছেলের বই, খাতা ভেসে যায় আর আজিজুর রহমানের ২বস্তা চাল ভিজে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে সংবাদকর্মীদ্বয় কৃত্রিমভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ছবি তুলতে গিয়েই ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হয়।
এই ব্যাপারে কালা মিয়া গং জানান, দক্ষিণ লেদার মৃত গোলাম শরীফের পুত্র কবির আহমদ (৫৬) ও তার ভাই নজির আহমদ (৫৮) মিলে মৎস্য ঘেঁর করে আসছে। পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মচারীদের হাতে নিয়ে স্লুইচের যন্ত্রপাতি তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা আমাদের জমি জবর দখল করে প্রজেক্ট করে আসছে। এই ব্যাপারে আদালতে মামলা চলে আসছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে স্লুইচ গেইট বন্ধ করে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানানোর পর তারা ছবি করতে এলে বিশেষ মহলের ইন্দনে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে।
নিরীহ দুই সংবাদকর্মীর উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় টেকনাফে কর্মরত জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকেরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন। ###

Comment here