টেকনাফসারাদেশ

হ্নীলা-হোয়াইক্যং বাজারে চাউল ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

সাদ্দাম হোসাইন:
রোহিঙ্গাদের প্রদত্ত চাউলসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসমুহ গ্রাম-গঞ্জ ও স্থানীয় বাজারে সয়লাব হওয়ায় উপজেলার হ্নীলা-হোয়াইক্যংয়ের শতাধিক চাউল ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দিতে হচ্ছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় ভূক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
জানা যায়, মিয়ানমারে সহিংসতার জেরধরে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু দমদমিয়া, জাদিমারা, নয়াপাড়া, মোচনী, লেদা, আলী খালী ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবনিয়া আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের ত্রাণস্বরূপ উন্নতমানের চাউল, ডাল, তৈলসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। এসব রোহিঙ্গাদের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অতিরিক্ত ত্রাণের চাউলসহ বিভিন্ন পণ্য স্থানীয় গ্রাম-গঞ্জের পাশাপাশি বাজার সমুহে সস্থামূল্যে বিক্রি করছে। এতে গুটি কয়েক ব্যক্তি লাভবান হলেও স্থানীয় জনসাধারণের কর্মসংস্থান কমে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। খেটে খাওয়া মানুষের জন-জীবন বিপর্যস্থ হওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয় বাজার সমুহে বাণিজ্যে লিপ্ত হওয়ায় প্রত্যক্ষভাবে উপজেলার হ্নীলা-হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দমদমিয়া, জাদিমোরা, নয়াপাড়া, মোচনী, লেদা, রঙ্গিখালী, হ্নীলা বাস স্টেশন, মৌলভী বাজার, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, নয়াবাজার, মিনাবাজার, নয়াপাড়া, কাঞ্জর পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ঊনছিপ্রাং, লম্বাবিল, হোয়াইক্যং ও উলুবনিয়ার শতাধিক পাইকারী ও খুচরা চাউল ব্যবসায়ীদের বেচা-বিক্রি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চাউল ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মুদি দোকানদার সমুহের বিক্রি তুলনামূলক কমে গেছে। চাউলের মূল্য কমে স্থানীয় বাজারে স্বাভাবিকভাবে কমলেও গত ৩দিন ধরে অনেক চাউল দোকানে চাউল বিক্রি পর্যন্ত হয়নি। এতে বাজারের চাউল ব্যবসায়ীরা তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসা নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছে।
হ্নীলা বাসষ্টেশনের মায়ের দোয়া ফাইভ স্টারের মালিক মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, দোকানে আগে দৈনিক দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার চাউল বিক্রি হত। এখন মাত্র ৫ থেকে ১০হাজার টাকায় নেমেছে। মেসার্স মক্কা-মদিনা রাইচের মালিক আনোয়ারুল হোসন জানান,দোকানে দৈনিক ১লাখ হতে ১লাখ ৩০হাজার পর্যন্ত চাউল বিক্রি হত। এখন ৫ থেকে ৬হাজারে নেমেছে। হাজী দিলদার আহমদ মেম্বার এন্টার প্রাইজের পরিচালক ইউছুপ বলেন, আগে দৈনিক ৫০ হতে ৬০হাজার টাকার চাউল বিক্রি হত। সপ্তাহ খানেক আগে দৈনিক ২/৩হাজার টাকার চাউল বিক্রি করলেও গত ৩দিন ধরে এখন পর্যন্ত কোন চাউল বিক্রি করতে পারেনি। মের্সাস সেলিম এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ সেলিম বলেন, আগে দৈনিক দেড় লক্ষ টাকার চাউল বিক্রি করত। রোহিঙ্গাদের কারণে দৈনিক বিক্রি ১০/১৫ হাজারে নেমে এসেছে। মের্সাস ফয়সাল এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ আলী জানান, আগে দৈনিক লাখের উপরে চাউল বিক্রি হত। এখন তা নেমে এসেছে ৫ থেকে ৬ হাজারে। বাবুল এন্টার প্রাইজের মালিক বাবুল বলেন, দৈনিক ৪০ হতে ৫০ হাজার টাকার চাউল বিক্রি হতো। এখন ৪/৫ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে দোকান ভাড়া এবং কর্মচারীদের বেতন তো দূরের কথা সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন মহল গুরুত্বের সাথে নিয়ে পদক্ষেপ না নিলে চাউল ব্যবসায়ীরা সাংবাদিক সম্মেলনসহ আন্দোলনের কর্মসূচী হাতে নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের চাউল বিক্রি বন্ধ করে স্থানীয় চাউল ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের পেশা অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Comment here