টেকনাফ

৭ জনই ক্লোজ : ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ ৭ ডিবি পুলিশ সদস্য সেনা পোস্টে আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের টেকনাফে এক ব্যক্তিকে অপহরণেরর পর মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ৭ জন সদস্য ও নগদ ১৭ লাখ টাকাসহ আটক করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল। ২৫ অক্টোবর বুধবার ভোরে ডিবির ওই সাত সদস্যকে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরগারছড়া গোইজ্জাছড়ি পয়েন্ট চেক পেস্টে আটক করা হয়। এ সময় অসুস্থ্যতার ভান করে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামান পালিয়ে যায় । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফের সাবরাং রোহিঙ্গা ত্রাণকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মেজর নাজিম আহমেদ।
ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২৪ আগষ্ট কক্সবাজার হোটেল আল গণির সম্মুখ হতে টেকনাফ পৌর সভা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ীর আবদুল গফুরকে অপর হরণ করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের একটি দল। এই ব্যাবসয়ীকে একটি র্নির্দিষ্ট কক্ষে রেখে মুক্তিপণের লেনা দেনা করেন ডিবির এই দলটি
অপহৃত আব্দুল গফুর জানান, তারা আমার কাছ থেকে ১ কোটি টাকা দাবী করেন। অন্যথায় ক্রসফায়ারে দেয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। এর আগে ইয়াবাসহ ছবি তোলে রাখে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা।
সর্বশেষ ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণে ব্যবসায়ী আব্দুল গফুরকে মাইক্রোবাস যোগে টেকনাফের মহেশখালীপাড়া নেয়া হয়। ১৭ লাখ টাকা নগদ নিয়ে মেরিন ড্রাইভে অপহৃত আবদুল গফুরকে ছেড়ে দেয়া হয়। মেজর নাজিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি তাঁদের জানালে তল্লাশি চৌকিতে ডিবির ব্যাবহৃত গাড়িটি সংকেত দিয়ে থামানো হয়। গাড়ি থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ভোররাতেই তাঁদের সাবরাং সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।
মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, ‘জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন সেনাবাহিনী ক্যাম্পে এসে আলোচনার মাধ্যমে আটক গোয়ন্দা পুলিশের সদস্যদের নিয়ে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাদের জানান তাঁরা।
আবদুল গফুরের বড় ভাই টেকনাফ পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার ভাইকে কক্সবাজার থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল অপহরণ করেছে। তাঁকে আটক করে আমাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। আমরা টাকা দেওয়ার জন্য রাজিও হই। তবে টাকা দেওয়ার বিষয়টি টেকনাফ সেনাবাহিনীকে অবহিত করেছি। পরে ভোররাত চারটার দিকে সেনাবাহিনীর লম্বরী ক্যাম্পের কিছু দূরে ১৭ লাখ টাকা দেওয়ার পর আমার ভাইকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশের দল। আটক করা সাতজনের মধ্যে এসআই আবুল কালাম আযাদ, এএসআই আলা উদ্দিন বলে জানা গেছে। তবে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে এ ঘটনায় টিম প্রধান পুলিশ পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাত ঘটনাস্থলে ছিলেন না । তবে টিমের দায়িত্বশীল হিসেবে দায়ভার হতে তিনি মুক্ত থাকতে পারেন না বলেও দাবী করেন নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
৭ জনই ক্লোজ : ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের ৭ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল। সাময়িক ভাবে বহিস্কৃত গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা হলেন , এসআই আবুল কালাম আজাদ, এসআই মো: মনিরুজ্জামান, এএসআই মো: আলাউদ্দিন, এ এসআই মো: ফিরুজ, এএসআই গোলাম মোস্তাফা , কনস্টেবল মোস্তফা আজম ও মো: আল আমিন। এ ছাড়া পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাতের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল আরো জানান তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে জেলা পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।
অপর দিকে কাউন্সিলার মনিরুজ্জামান জানান, গোয়েন্দা পুলিশের হাত হতে উদ্ধার হওয়া ১৭ লাখ টাকা বিকেলে টেকনাফ মডেল থানায় জমা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো: মাইন উদ্দিন খান জানান, উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিদের্শে উদ্ধার হওয়া ১৭ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় নিদের্শনা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

Comment here