টেকনাফরাজনীতি

ঈদ-পূর্ণমিলনী ব্যানারে প্রধান মন্ত্রীকে অভিনন্দন লিখলেও ‘শেখ হাসিনা’ নাম উপেক্ষিত : টেকনাফে ওলামা-মাশায়েখরা দ্বিধাবিভক্ত


টেকনাফ প্রতিনিধি:  
টেকনাফে কওমী মাদ্রাসার ওলামা-মাশায়েখরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ, আধিপত্য, আর্থিক অনিয়ম ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাস ইত্যাদি কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৬ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত ঈদ-পূর্নমিলনী অনুষ্ঠান নিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ইউএনও মো: রবিউল হাসান, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা রফিক উদ্দিন। তবে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক মুফতি কিফায়েত উল্লাহ সফিক অনুপস্থিত ছিরেন। উক্ত সভায় উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহাবুবর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রæফ অংশগ্রহণ করলেও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবছার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি গ্রæফ সমাবেশে অংশ নেন নি। ফলে ওলামা পরিষদের বিভক্তির বিষযটি পরিস্কার হয়ে উঠে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ পরিষদের নেতৃত্ব ও ভবিষৎ সাংগঠনিক অবস্থান নিয়ে।
জানা যায় , ২০০৯ সালে টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী, হ্নীলা জামিয়া দারুসসুন্নাহ’র তৎকালীন মুহতামিম মাওলানা আবছার উদ্দীন চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনার জন্য ওলামা পরিষদ নামের সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল। গঠিত হওয়ার পর থেকে ওই সংগঠনের মনোনিত প্রার্থী হিসাবে স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্ধীতা করেন তিনি । তবে ওই সময় তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এর পর পরবর্তী উপজেলা নির্বাচনেও মৌলানা রফিক উদ্দিন এ পরিষদের ব্যানারে নিবার্চন করে বিজয়ী হন। এত কিছুর পর ও নেই তাদের কোন সাংগঠনিক কাঠামো, নেই নীতিমালা বা কমিটি নবায়ন।
তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে টেকনাফে ওলামা পরিষদ নামের এরা কারা। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় ভাবে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে এ ওলামা সংগঠনটি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নেতৃত্বে সভা সমাবেশ করতে দেখা গেলে ও কার নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় এ সংগঠনটি এখনো অজানা। তবে ওলামা পরিষদের ব্যানারে মাঝেমধ্যে ইয়াবা পাচার , রাস্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী বা জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছে এমন অভিযুক্ত কিছু ব্যাক্তির সরব উপস্থিতি সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। আবার বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্বশীল মৌলানাদের সরব উপস্থিতি এ ব্যানারটিকে কোথায় নিয়ে দাড় করানো হচ্ছে এ নিয়ে সাধারণ অনেকে ওলামা-মাশায়েখ দ্বিধাবিভত্তির মধ্যে রয়েছেন।
এনিয়ে টেকনাফের সচেতন ওলামাদের মাঝে মিশ্র প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতির আইন পাশ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে, টেকনাফ উপজেলা ওলামা পরিষদের উদ্যোগে ঈদপূনর্মিলনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হলে ও সেখানে টেকনাফের প্রসিদ্ধ কোন আলেমকে দেখা যায়নি। এখান থেকে শুরু হয় রহস্য।
টেকনাফ বাস স্টেশন বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি মৌলানা আব্দুল হক, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ওলামা পরিষদ নামের সংগঠনটি অরাজনৈতিক ভাবে গঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কতিপয় স্থানীয় আলেম তাদের ব্যত্তি স্বার্থ উদ্ধারে উঠে পড়ে লেগেছে। এ সংগঠনের নাম বিক্রয় করে বিভিন্ন জায়গা হতে অনেকে টাকা নিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ করেছেন অনেকে। সাধারণ ওলামারা প্রশ্ন তুলেছেন ওলামা পরিষদের ব্যানারে নেতৃত্বটি কার। কেনো ব্যানারে মামনীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উপেক্ষিত ছিলো এর উত্তর জানা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৩ সালের দিকে উখিয়া সফর কালে টেকনাফ থেকে ওলামাদের বিশাল একটি বহর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশগ্রহন করেছিল সেখানে হ্নীলার ক্বারী ফরিদুল আলমকে সভাপতি, কয়েক বছর আগে টেকনাফ বাসটার্মিনালে বিজয় মেলা বন্ধের জন্য স্বারক লিপিতে পরিষদের সভাপতি হিসাবে মাওলানা আবদুল হক, কোন কোন সমাবেশে মাওলানা মাহবুবর রহমানকে সভাপতি হিসাবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আসলে মূল সভাপতি বা সম্পাদক তা নিয়ে চলছে নানান বাহানা।
তবে মাওলানা মাহাবুবর রহমানকে সকলেই আওয়ামী পন্থি হিসেবে চিনে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ওলামা পরিষদের ব্যানারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে যে বক্তব্য লেখা হয়েছে সেখানে উল্লেখ নেই “শেখ হাসিনা”র নাম। তাহলে কেনো আলেমদের জন্য এতো কিছু করার পরও ওই পরিষদ শেখ হাসিনার নাম মুখে আনতে লজ্জিত? আর এ ধরনের ব্যানারেই বা কেনো প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি আব্দুর রহমান বদি প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন।
ওলামা পরিষদের ব্যানারে থাকা এসব ওলামারা আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে ভোট দিবেন না অনেকটার নিশ্চিত। সুবিধা ভোগ করে তাদের পুরানো আস্তানায় চলে যাবেন তা পরিস্কার । না হয় ব্যানারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম নিষিদ্ধ প্রশ্ন তুলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুল বশর। তিনি বলেন, রাস্ট্রদ্রোহ, ইয়াবা পাচার ও জঙ্গি কার্যক্রমে অভিযুক্ত কিছু সুবিধা ভোগীরা যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন জনপ্রতিনিধিরে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তা স্পষ্ট করেছে ওলামা পরিষদের ৬ সেপ্টেম্বরের টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চত্বরের ঈদ-পূর্ণমিলণী নামের ব্যানার। যে ব্যানারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো যায়, কিন্তু নাম উল্লেখ করতে পারেনা তাহলে তাদের অবস্থান কি তা স্পষ্ট হয়ে যায়। এরা শুধু সুবিধা ভোগ করার জন্য এমপি’ কাছে ভিড়েছে। আসলে এরা আওয়ালীগের জন্য আর্শিবাদ হতে পারে না।
যেখানে ব্যানারে পর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার নাম না লিখে অসম্মানিত করা হয়েছে সেখানে একজন সরকারী আমলাও বসে থাকেন তাহলে আমাদেরও ভাবতে হবে তাদের নিয়ে। কাদের আস্কারাই এসব হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা জরুরী হয়ে পড়েছে বলেও মত দেন তিনি।
টেকনাফের সাবরাং কাটা বনিয়া মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক মৌলানা মুনির আহমদ বলেন, ওলামা পরিষদ নামটি এখন সুবিধাভোগী পরিষদে রুপান্তরিত হয়েছে। সম্পতি এ পরিষদের নেতৃত্বে থাকা কয়েকন মিলে এক জনপ্রতিনিধির দেওয়া ২১ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিজেরা ভোগ করেছেন। এ কারনে হাজার হাজার কওমী লাইনের ওলামা মাশায়েখ মনে আঘাত পেয়েছেন। যার ফলে শত শত আলেম গত ৬ সেপ্টেম্বরের ঈদ-পূর্নমিলনীতে যোগদান করেননি। তিনি আরো বলেন, কয়েকজন ওলামা নামধারী নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য ক্ষমতাসীন জনপ্রতিনিধিদের নাম ব্যবহার করে কিছু ওলামা হাজির করে তাদের অপকর্ম জায়েয করে যাচ্ছেন। এতে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।
এব্যাপারে পারিষদের সভাপতি মাওলানা মাহবুবুর রহমানের যোগাযোগ করা হলে জানান পরিষদটি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলে আসছে। দায়ীত্বে কারা জানতে চাইলে বলেন তিনি সভাপতি বেশ কয়েকজন সহ-সভাপতি পদে মাওলানা মুজিব, মৌলানা রফিক, মৌলানা আজিজ আছে বলে জানান। তবে সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবছার উদ্দিন চৌধুরী হলে এ মুর্হুতে সহ-সম্পাদক মৌলানা সাইফুল পরিষদের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন বলে জানায়। সাধারণ সম্পাদক কেন ওলামা পরিষদের সভায় অংশগ্রহন করেনি তার কোন সন্তোষজনক জবাব তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Comment here