কক্সবাজাররোহিঙ্গা সমাচার

এনভিসি নিতে বাধ্য করছে মিয়ানমার ফের রোহিঙ্গার ঢল

টেকনাফ প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী আন্‌জুমান পাড়া দিয়ে ফের রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। গত বুধবার রাত থেকে প্রায় ৫ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা এই পয়েন্টে প্রবেশ করেছে। তারা নাফ নদীর বেড়িবাঁধে অবস্থান করছে। বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় তাদের দেশের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নির্দেশনা পেলেই তাদের ক্যাম্পে পাঠানো হবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান আহমেদ জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশ করা ৩ হাজার রোহিঙ্গা বেড়িবাঁধে অবস্থান করছে। শাহপরীরদ্বীপের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে ভোর রোহিঙ্গা নারী পুরুষ এপারে ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা আরো জানান, তাদের নাম ঠিকানা তালিকাভুক্ত করছে প্রশাসন। শাহপরীর দ্বীপে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই নাজমুল আলম জানান, সকাল থেকে আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ শাহপরীর দ্বীপ হয়ে এপারে ঢুকেছে। অপর দিকে পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের হারিয়াখালী পয়েন্ট দিয়ে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। যাদের মধ্য থেকে দু শতাধিক রোহিঙ্গা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হারিয়াখালী রোহিঙ্গা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বৃদ্ধ মো. হাসান (৮৫) জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখনো তাদের কৌশল পরিবর্তন করে নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা আরো জানান, মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) নিতে বাধ্য করছে। এ কার্ড নিতে অস্বীকার করলে সেনারা নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, স্কুলে পড়া লেখা করেছি মিয়ানমারের, আকিয়াবে ব্যবসা বাণিজ্য করেছি। জনম জনম ধরে পূর্ব পুরুষেরা মিয়ানমারের আরাকানে বসবাস করে আসছে। এখন কেন বাঙ্গালি হিসেবে এনভিসি তে তথ্য লেখাব? তাই দেশ ছেড়েছি।

জানা গেছে, এনভিসি তে রোহিঙ্গাদের বাঙ্গালি উল্লেখ করায় রোহিঙ্গা তা নিতে প্রথম থেকেই অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। এদিকে নাফ নদী অংশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোস্ট গার্ড ও বিজিবি তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। তবে তা বেশ কিছু কারণে কাজে আসছে না। এর মধ্যে স্থানীয়দের যেমন রয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য সহানুভূতি, তেমনি রয়েছে আর্থিক বাণিজ্যের ব্যাপারটি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্তকর্তারা স্থানীয়দের দোষারোপ করছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু কিছু লোকজনের আর্থিক সুবিধা আদায়ের কারণেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গা ল্যান্ডিং স্টেশন ‘কুয়াংছিবং’ ও ‘নাইক্ষ্যংদিয়া’:

আরাকানের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য দুটি ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরী করেছে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা। বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে, এ দুটি স্টেশন হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমান পাড়া ও টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের নো–ম্যানস ল্যান্ড অংশের কুয়াংছিবং ও নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা। এ সব পয়েন্ট রোহিঙ্গারা পায়ে হেঁটে জড়ো হয়। সেখানে রয়েছে বিশাল দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। আরাকানের বুথিডং ও রাথেডং থানার গ্রাম অঞ্চলের রোহিঙ্গা কয়েকদিন পায়ে হেঁটে এ দুটি পয়েন্টে অবস্থান করবে। পরে বিভিন্ন দেশ বিদেশের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করবে। যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছে, মোবাইল ফোন, ফেসবুক, ইমু, হোয়াট্‌সআপ ইত্যাদি ইন্টারনেট মাধ্যম। না খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়া, স্বাভাবিক ভাবে মৃতদের অভুক্ত থেকে মারা যাওয়া ইত্যাদি বলে ক্রন্দনরত ভিডিও ভয়েস দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের সহানুভূতি কামনা করা হয়। যাতে তাড়াতাড়ি নৌকা পাঠিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় সে ধরনের ব্যাকুলতা প্রকাশ করে বিভিন্ন ভাবে আবেদন নিবেদন করা হয়। এভাবে ৫/১০ হাজার রোহিঙ্গা এ দুটি পয়েন্ট জড়ো হওয়ার পর যোগাযোগ করা হয় আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে। পরে কৌশলে দু পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। আর এ দুটি পয়েন্ট দিয়ে একটি নৌকা অনুপ্রবেশ করতে সময় লাগে ১০ থেকে ২০ মিনিট মাত্র। ফলে কম সময়ে সহয়েই ভোরে বা রাতে সীমান্ত ক্রস করছে রোহিঙ্গারা।

এবিবিভিএ ছাড়া শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অন্য একটি কারণ হচ্ছে, মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া সৈকতে অবস্থান করছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা প্রতিরাতে নৌকা যোগে নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগর পথে শাহপরীরদ্বীপ, হারিয়াখালী, মহেশখালীয়া পাড়া, শামলাপুর ইনানী পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। মাঝেমধ্যে নাই ্যংদিয়া ও শাহপরীরদ্বীপের চরের মধ্যে ট্রলার ডুবির ঘটনাও ঘটছে। এরপরও সীমান্তে অপেক্ষারত রোহিঙ্গাদের দাবি, উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে কোয়াংছিবন এবং শাহপরীর দ্বীপের ওপারে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় অনন্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

টেকনাফ কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা লে. কমান্ডার জাফর ইমাম সজীব জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া সৈকতে বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে এমন সংবাদ জানা রয়েছে। যাতে সীমান্ত পাড় হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্যে কোস্ট গার্ড নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

Comment here