রাজনীতি

এবার ঘরেও কঠোর হচ্ছে আ. লীগ

 

পাভেল হায়দার চৌধুরী

আওয়ামী লীগএবার দলের ভেতরে  হঠাৎ করেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কঠোর অবস্থান জানান দেওয়া শুরু করেছে ক্ষমতাসী দলটি। কোনও নেতাকর্মী অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পাশপাশি এখন থেকে কারও ব্যক্তিগত দায়ভার আর দল নেবে না বলেও সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন নীতি-নির্ধারকরা। কেন্দ্র থেকে শিগগিরই  এমন বার্তা সংগঠনের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার  দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয়রা।এদিকে, আওয়ামী লীগের বিশতম সম্মেলনের পর দলের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে একাধিকবার বলেছেন, ‘ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এরই অংশ হিসেবে ‘অ্যাকশন’ নেওয়াও শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফুটপাত মুক্তকরণ কাজে হকারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার অপরাধে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেছে দলটি। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ছাত্রলীগের এই নেতাকে বহিষ্কারের পর ওবায়দুল কাদের আবারও বলেন ‘অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।’ এরপর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষোভ প্রকাশ দ্বিতীয় দফা দলের কঠোর অবস্থান জানান দেওয়া হয়। এছাড়া কক্সবাজারের বিতর্কিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাজা হওয়ার ঘটনাকেও আওয়ামী লীগের কঠোরতার ইঙ্গিত বলে  মনে করছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই পদক্ষেপগুলোকে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দল ও সরকারের কঠোর অবস্থান সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য কেন্দ্র থেকে লিখিত বা মৌখিক সতর্কত বার্তাও পাঠানো হবে। তারা বলেন, কোনও অবস্থাতেই দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের রেহাই দেওয়া হবে না। তারা দলের কেউ হলেও মাপ দেওয়া হবে না।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে নাসিরনগরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে স্থানীয় এমপি ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নাসির নগরের ঘটনা দুই নেতার (ছায়েদুল হক ও মোকতাদির চৌধুরী) দ্বন্দ্বের কারণে বিরাট আকার ধারণ করেছে। এটা অনভিপ্রেত।’  বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে রেখেছি। ও এত বাড়াবাড়ি করছে কেন? ও পেয়েছে কী? সে কী শুরু করেছে? আমি ওকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আর রাখব না।’  তবে বুধবারে ওই বৈঠকে  উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি উপস্থিত ছিলেন না  সূত্র জানায়।

জানা গেছে, হঠাৎ কঠোর অবস্থানের মূল কারণই  আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল ও সরকারের ইমেজ অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা। তাই নির্বাচনের আগে সরকার ও দলের অর্জন ক্ষুণ্নকারী কাউকেই ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন দলটি। এরমধ্য দিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে নীতি-নির্ধারণী মহল মনে করছে। তাই এতদিন যে কঠোর অবস্থান রাজনৈতিক বিরোধী মহলকে জানান দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা, এবার তা দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ  বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা যেমন অক্ষুণ্ন রাখতে চায়, তেমনি সরকারের অর্জন ম্লান হয়, এমন কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দলের যত বড় নেতাই সম্পৃক্ত থাকুক, শাস্তি তাকে পেতে হবে—এমন নীতি অনুসরণ করেছে। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে।’

জানতে চাইলে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জনগণের সঙ্গে অন্যায় করে কেউ রেহাই পাবে না। সে দলের হোক আর অন্য দলেরই হোক, তা দেখবে না সরকার। অন্যায়কারীকে কখনোই আওয়ামী লীগ সমর্থন করবে না।’

অন্য যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসা। তাই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নই আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের পাশে থেকে রাজনীতি করার জন্য নতুন কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।’

Comment here