আন্তর্জাতিকজাতীয়সারাদেশ

এবার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’

শাহীন রহমান ॥ এবার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শনিবার দুপুর নাগাদ আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এটি শনিবার রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। তবে ঠিক কোন উপকূলে এটি আঘাত হানবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি তারা। আর দুদিন পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট হয় একটি লঘুচাপের। এরপর এটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, গত শুক্রবার এটি নিম্নচাপে রূপলাভ করে। আরও শক্তি সঞ্চয় করে শনিবার দুপুরে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর শনিবার রাতেই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আভাস দেয় আবহাওয়া অফিস।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করছে এবং উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। তবে এটি ঠিক কোন উপকূলে আঘাত হানতে পারে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ও ভারতের যে কোন উপকূলে এটি আছড়ে পড়তে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন শনিবার গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়ার পর রাতে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আগামী বুধ অথবা বৃহস্পতিবার এটি দেশে উপকূলে আছড়ে পড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আবহাওয়া অফিস জানায় সাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য পশ্চিম-উত্তর পশ্চিমে সরে গিয়ে আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এ কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন এর নাম হবে ‘আমফান’। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপে থাইল্যান্ডের দেয়া নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে। তারা জানায়, এরপর পর যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে তার নাম হবে নিসর্গ। যেটি বাংলাদেশের দেয়া নাম।

এর আগে গত বছর মে মাসে প্রথম সপ্তাহে দেশের উপকূলে আঘাত হানে ফণি। ফণি নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের দেয়া নাম অনুসারে। গত বছর নম্বেবরে দেশের উপকূলে সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। বুলবুলের পরে আবারও ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। এটি এমন সময় দেশে উপকূলে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে যখন বাংলাদেশেও ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। আতঙ্কে লোকজন ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছে। সরকার করোনা প্রতিরোধে লোকজনকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ঘূর্ণিঝড় দেশের উপকূলে আঘাত হানলে তা মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে। করোনার কারণে যেখানে মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সেখানে এই ঝড় আঘাত হানলে উপকূলীয় অধিকাংশ লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে হবে। তখন করোনা পরিস্থিতি জন্য আরও খারাপ হতে পারে। এছাড়া দেশে যখন মানুষ ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক সেই সময় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে আমফান।

এদিকে ঘূর্ণিজড় মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকেও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর মহাপরিচালক মোঃ মোহসীন বলেন, করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যেই আমরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে এর গতিবিধি এবং সম্ভাব্য কোন উপকূলে আঘাত হানতে পারে সেই বিষয়ে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরও প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে। আজ রবিবার ঝড়ের অবস্থা বোঝা যাবে। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। লোকজনকে সরাতে হলে তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের বিষয়েও সজাগ রয়েছি আমরা। উপকূল সম্পৃক্ত ১৯ জেলায় যথাসময়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়াতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আবহাওয়া অফিস থেকে একের পর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে। শনিবার দুপুর নাগাদ ৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে শনিবার বেলা ১২টায় গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে জানিয়ে আবদুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এখন এটা ঘণ্টায় ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার করে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ উপকূল এখনও অনেক দূরে। ২০ মে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি আসতে পারে। এদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিসও বলছে, বাংলাদেশ সময় শনিবার সন্ধ্যার দিকে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। রবিবার সকাল নাগাদ সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হতে পারে। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার। পরে শক্তি আরও বাড়িয়ে তা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বা তার বেশি। ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি প্রাথমিকভাবে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগোনোর পর সোমবার সামান্য উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে। ১৮ থেকে ২০ মের মধ্যে সেটি পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছাতে পারে।

পায়রা বন্দরসহ কলাপাড়ার উপকূলজুড়ে শঙ্কা

নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আম্ফান ধেয়ে আসছে উপকূলে এমন খবরে পায়রা বন্দরসহ সংলগ্ন কলাপাড়ার উপকূলের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকায় গ্রাফিক্সে ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য আঘাতের স্পট খেপুপাড়া (কলাপাড়া) টার্গেট করে দেয়ায় মানুষ শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। একেতো করোনার দুর্যোগকালে মানুষ রয়েছে সন্ত্রস্ত, তার ওপরে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক। কলাপাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান খান জানান, ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জনকন্ঠ।

Comment here