আন্তর্জাতিকরাজনীতিসারাদেশ

ঐতিহ্যে সংগ্রামে ছাত্রলীগের ৬৯ বছর

শহীদুল্লাহ শহীদ ও লুৎফর সোহাগ :

ঐতিহ্যে সংগ্রামে ছাত্রলীগের ৬৯ বছর

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বুধবার (৪ জানুয়ারি)। বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ এর নামে সংগঠনির যাত্রা শুরু হয়।

নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে গঠন করা ১৪ সদস্যের প্রতিষ্ঠাকালীন ওই কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বেই স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করেছিল বাঙ্গালীরা, যে লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাঙ্গনের মুখে পড়া ছাত্রলীগ দুই দফা নাম বদলে বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামে সংগঠনটি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে সংগঠনটি তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য হিসেবেই দাবি করে। সাম্প্রতিক সময়ে ১/১১ এর সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনেও সরব ছিল ছাত্রলীগ।

দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় ছাত্রলীগের কর্মীরা যেমন শাসকগোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তেমনি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের হাতেও প্রাণ দিয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে নানা বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে সংগঠনটিকে।

তবে মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ত্যাগকে বিবেচনায় নিয়ে সংগঠনটিকে স্বাধীনতা পদক প্রদানের দাবি করে আসছেন বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।

প্রতিবারের মতো এবারো বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা।

সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় কাটা হবে কেক, পরে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ দলিয় পতাকা উত্তলনের মাধ্যেমে শুরু হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পরের দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হবে রক্তদান কর্মসূচি। আর ৬ জানুয়ারি দুপুর ২ টায় স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতবস্ত্র বিতরণ ও পরে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এছাড়া ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কলাভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করবে সংগঠণটির নেতাকর্মীরা।

এর আগে প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীকে কেন্দ্র করে নয়টি উপ-কমিটি করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হয় সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। ছবিগুলোতে ইতিহাস আর সমকালীন অর্জনগুলো তুলে ধরার হয় । রোকেয়া হলের সামনের দেয়ালে আঁকা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। অন্য ছবিগুলোতে আছে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান আর ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নানান চিত্র। একি সাথে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা ছিলো আলোকসজ্জিত।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমনা সোহাগ  বলেন, ছাত্রলীগ শুধুমাত্র ছাত্রসমাজের নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় সংগঠন। তাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সঙ্গে দেশের সকল মানুষকে যুক্ত করে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, এ বছর আমরা নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করব । তাই সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের এ কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

Comment here