কক্সবাজার

কক্সবাজারে আইওএম  নির্মাণ করছে ১০০ কমিউনিটি ক্লিনিক :  টেকনাফে ১২টি নবনির্মিত ক্লিনিকের উদ্বোধন করলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি 


কক্সবাজারে আইওএম  নির্মাণ করছে ১০০ কমিউনিটি ক্লিনিক : 

টেকনাফে ১২টি নবনির্মিত ক্লিনিকের উদ্বোধন করলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি 

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার ; 

কক্সবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় ১০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নতুনভাবে নির্মাণ করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম-জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা)। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নির্মাণাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মধ্যে প্রথম ১২টি নবনির্মিত ক্লিনিকের উদ্বোধন করা হয়েছে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার (২ অক্টোবর)

 কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নবনির্মিত এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো উদ্বোধন করেন। জলবায়ু স্থিতিস্থাপক সুবিধাসম্বলিত এই স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনাগুলোর কিছু জেলার অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত এবং এগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় সেবাপ্রদানে উন্নত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি  বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি বৃদ্ধি করেছে এবং দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য স্থানে সরকারের এই প্রচেষ্টায় আইওএম-ও অংশগ্রহণ করেছে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা এখন একসঙ্গে কাজ করছি। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারের নানা পদক্ষেপগুলোর একটি হলো কক্সবাজারে উদ্বোধনকৃত নবনির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক। ” 

১০ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশ্রয় দেওয়া দেশের সর্বদক্ষিণের এই অংশে মৌলিক অবকাঠামো এবং পরিষেবাগুলো আগে থেকেই জাতীয় গড়ের তুলনায় কম ছিল। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই প্রায় দুই দশক আগে নির্মিত হয়েছিল এবং বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অবকাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্লিনিকগুলোর পুরানো ভবন ভেঙে আইওএম নতুন দুইতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছে। নবনির্মিত এই ভবনগুলো আগের চেয়ে আরো বড় ও পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং এগুলোতে রয়েছে সৌর-চালিত বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা।

আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান আব্দুসসাত্তার এসওয়েভ বলেন,  “শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানামুখী চাহিদা পূরণে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য মানবিক সহায়তাপ্রদানকারী সংস্থা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। মানবিক-উন্নয়ন সম্পর্কের ফলাফল যে দীর্ঘস্থায়ী হয়, তারই উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক এবং আইওএম-এর এই যৌথ প্রচেষ্টা।”

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে এই ক্লিনিকগুলয় খুব প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে যার মধ্যে রয়েছে প্রজনন এবং পারিবারিক ঔষধ, স্বাস্থ্য-পরীক্ষা, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতায় সহায়তা, পুষ্টি কাউন্সেলিং ইত্যাদি। 

বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ডান্ডান চেন বলেন, “আমরা মানবিক সহায়তাপ্রদানকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে বিশ্বব্যাংক কাজ করছে। এজন্য আইওএম-সহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও বরাদ্দ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।”

জেলার একমাত্র অধিকতর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সদর হাসপাতালেও আইওএম নানাভাবে উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি জনবল ও চিকিৎসার নানা যন্ত্রপাতিও প্রদান করেছে। ২৫০-শয্যার এই হাসপাতালে নানা সেবার মধ্যে রয়েছে নবজাতকের যত্নসহ বিশেষায়িত পরিষেবা, জরুরী, নিবিড় পরিচর্যা এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট, কোভিড-১৯ চিকিৎসা; রক্ত সঞ্চালন এবং এইচআইভি এবং এইডস রোগের জন্য স্বেচ্ছাসেবী পরামর্শ ও পরীক্ষা। অন্যান্য সুবিধাদি ছাড়াও উচ্চতর চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীদের অন্য স্বাস্থ্যসেবায় রেফার করার জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

সদর হাসপাতালে ভর্তি ৬০-বছর বয়সী রোগী আবুল হাসান বলেনঃ “যে ওয়ার্ড থেকে আমাদের স্থানান্তর করা হয়েছে তার চেয়ে সম্প্রতি নির্মিত রোগীর ওয়ার্ডটি ভালো। হাসপাতালটি সম্পূর্ণ সংস্কার হয়ে গেলে আমরা অনেক উপায়ে উপকৃত হব।”

অবশিষ্ট নির্মাণাধীন ক্লিনিকগুলো ও জেপলা হাসপাতালের সংস্কার কাজ ২০২৩ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রাক-নির্মাণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নির্বিঘ্নভাবে নিশ্চিত করার জন্য আইওএম অস্থায়ীভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল।

 স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) ও লাইন ডিরেক্টর (এইচজিএসপি অপারেশন প্ল্যান) জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খোরশেদ আলাম, জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ,

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান,  উপজেলার চেয়ারম্যান নুরুল আলম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল প্রমুখ।

Comment here