কক্সবাজার

কক্সবাজারে মানববন্ধন : কক্সবাজার-মহেশখালী, কক্সবাজার-কুতুবদিয়া ও কুতুবদিয়া-মগনামা ফেরিঘাটের ইজারা প্রথা বাতিল ও মিানসম্পন্ন গণপরিবহন সার্ভিস চালু’র দাবী

received_1835964960021765
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২৫ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় জনসংগঠন ও কোস্ট ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন ফেরিঘাটের ইজারা প্রথা বাতিল ও বি আই ডবিøউ টি এ-র সরাসরি নেতৃত্বে মানসম্পন্ন গণপরিবহন সার্ভিস চালুর দাবিতে এক মানববন্ধন ও নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী মহেশখালী ও কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা ও কক্সবাজার পৌরসভার নারী-পুরুষ উপস্থিত হন।

মানববন্ধনের সমাবেশে সভায় বক্তৃতা করেন জেলা সিটিজেন ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন; রূপালী সৈকত পত্রিকার সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী; মহেশখালী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মকবুল আহমেদ; সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম সোহেল; কোস্ট ট্রাস্ট-এর কর্মকর্তা মো: শফিউদ্দিন, রেজাউল করিম ও জিয়াউল করিম ঝন্টু।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে জেলা থেকে জেলায়, জেলা থেকে উপজেলায় যাতায়াত ব্যবস্থার অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও জেলা সদর থেকে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া দ্বীপে যাতায়াতের কোনো উন্নতি হয় নি। এই পথে ১৯৯১-এর পর ব্যয়বহুল স্পীডবোট সার্ভিস যুক্ত হওয়া ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থার আর কোনো পরিবর্তন হয় নি। স্পীডবোট ব্যবসাটাও এসেছে আকস্মিকভাবে ১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দুর্গত মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জরুরি কাজে নিযুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে। সর্বসাধারণের পরিবহন ব্যবস্থাকে একটি দুঃসহ ও দুরবস্থার মধ্যে ফেলে রাখার বিনিময়ে এই স্পীডবোট ব্যবসাটাও চালু রয়েছে এক উচ্চ ভাড়ার ও অতি মুনাফার ব্যবসা হিসেবে। মানসম্পন্ন গণপরিবহন (পাবলিক ট্রান্সপোর্ট) ব্যবস্থার উন্নতি না ঘটিয়ে গরিব সর্বসাধারণকে বাধ্য করছে ঝুঁকিপূর্ণ স্পীডবোটে চড়তে! বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পোড়ে ভয়ভীতি ও আতংক নিয়ে যাত্রী সাধারণ সারা বছর এই ঘাটসমূহে ইজারাদারের কৃপায় পারাপার করে থাকে।

এক দেশে দুই নীতি!

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সমতল এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার চাইতে উপকূলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি শোচনীয়- এই সত্যটি সরকারসহ সর্বমহলে স্বীকৃত। দেশের কোনো বাস স্টেশন/টার্মিনালে বাস ভাড়ার বাইরে ইজারাদারের কাছে টোল দিয়ে যাত্রীদেরকে বাসে উঠতে-নামতে হয় না। অথচ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত ও দুরবস্থাপূর্ণ উপকূলীয় মহেশখালী-কুতুবদিয়ার নদী পারাপারের ঘাটে ঘাটে ইজারাদার নৌকা ভাড়ার বাইরে যাত্রী প্রতি অতিরিক্তি ৩/৫ টাকা টোল আদায় করে চলেছে। বক্তারা বলেন, এই টোল আদায়ের জন্য ইজারাদার ঘাটগুলি বি আই ডবিøউ টি এ অথবা জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেয়। ইজারার শর্তাবলিতে লোক দেখানো টোল আদায়ের কিছু শর্ত লেখা থাকে। কিন্তু ইজরাদার সেই শর্তাবলি লঙ্গন করে উপকূলের ঘাটে ঘাটে মালামালের উপরে সরকার নির্ধারিত তালিকার দশ/বিশগুণ বেশি টাকা আদায় করে থাকে। অথচ সমতল এলাকায় বাসে উঠতে নামতে কোনো যাত্রীকে কারো কাছে বাস ভাড়ার বাইরে টোল দিতে হয় না। বক্তারা বলেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপকূলের বিভিন্ন ঘাট ইজারা দিয়ে ইজারাদার কর্তৃক শোষণমূলক টোল আদায় প্রথা জারি রেখে সরকার সমতলের জনগণের চেয়ে উপকূলের প্রাকৃতিক দুর্ভোগ পোহানো জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।

বক্তারা বলেন, যাত্রী সাধারণকে ইজারাদার কর্তৃক ঘাটে ঘাটে টোল আদায়ের নামে শোষণ করার এই ইজারা প্রথা উপনিবেশিক যুগের ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কথা মনে করিয়ে দেয়। স্বাধীন দেশে উপনিবেশিক যুগের নীতি চলতে পারে না। সমতলের যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে এ প্রথা একই দেশে দ্বৈত ও শোষনমূলক নীতি হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। আমরা ‘বি আই ডবিøউ টি এ’ ও জেলা প্রশাসনের ফেরিঘাট ইজারা প্রথা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

উচ্চ মূল্যের যাত্রী ভাড়া!

বক্তারা বলেন, দুনিয়ার সকল উন্নত দেশ সমুদ্র বেষ্ঠিত এবং সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। সাগর তাদেরকে উন্নতির সুযোগ করে দিয়েছে। সাগরের উপরে সড়ক-ব্রিজ-কালভার্ট-রেললাইন কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নির্মাণ করতে হয় না। শুধু একটি উন্নত জলযান হলেই চলে। তাই দুনিয়ার দেশে দেশে সমতলের যাতায়াতের চেয়ে সাগরের যাতায়াত ও পরিবহন সস্তা এবং স্বল্পমূল্যের। বক্তারা বলেন, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা দ্বীপ হওয়াতে তার যাতায়াতের সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যাওয়ার কথা, যাতায়াত ব্যবস্থা আরো উন্নত, ভাড়া আরো কম হওয়ার কথা। কিন্তু উপনিবেশিক আমল থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে দ্বীপের মানুষের কাছে সাগর যেন বাঁধা ও অভিশাপ। বক্তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশেও যুগের পর যুগ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের নীতির আলোকে ঘাটের ইজরাদারী প্রথা চালু রেখে ঘাটে-ঘাটে যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে ফেরিঘাটে ব্যবসা চলছে। দ্বীপের যাত্রী সাধারণকে অন্য উপজেলার তুলনায় দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জেলা শহরে যেতে হয়। এ ফেরিঘাট যেন ইজারাদারের টাকা কামানোর কল বা যাত্রী শোষণের একটি পেশা। আমরা এই ইজারাপ্রথার অবসান চাই।

নৌপথে বিআইডবিøউটিএ-র গণপরিবহন সার্ভিস চালু করার লক্ষ্যে মহেশখালী-কুতুবদিয়া দ্বীপ উপজেলার যাত্রী সাধারণের পক্ষ থেকে মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রীর বরাবরে প্রেরিত স্মারকলিপি থেকে মানববন্ধনে নি¤œলিখিত ৮ দফা দাবি পড়ে শোনান মকবুল আহমেদ, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, মহেশখালী কলেজ।

দাবিসমূহ:
১. জেলা প্রশাসন ও বিআইডবিøউটিএ কর্তৃক স্থানীয় ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালিত অব্যবস্থাপূর্ণ ও নি¤œমানের ঔপনিবেশিক আমলের পরিবহন ব্যবস্থা ইজারা প্রথা বাতিল করে রাষ্ট্রীয় নৌপরিবহন সংস্থা বিআইডবিøউটিএ কর্তৃক সরাসরি ঘাট পরিচালনা এবং কক্সবাজার-মহেশখালী, কুতুবদিয়া-কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া-মগনামা ফেরীঘাটে নির্ধারিত সময়সূচি মেনে আসন ও ছাউনিবিশিষ্ট মানসম্পন্ন গণপরিবহন (পাবলিক ট্রান্সপোর্ট) সার্ভিস চালু করতে হবে।

২. কক্সবাজারস্থ ৬ নম্বর ঘাটে ৫ টাকা হারে টোল আদায় এবং মগনামা ও কুতুবদিয়া ঘাটের উভয় পাশে বোটে উঠতে ও নামতে যাত্রীপ্রতি ৩ টাকা হারে টোল আদায় বন্ধ ও বাতিল করতে হবে।

৩. উল্লিখিত ঘাটসমূহের উভয় পাশে সরকার নির্ধারিত যাত্রীভাড়া ও মালামাল পরিবহনের ভাড়ার তালিকা প্রকাশ্যস্থানে স্থায়ীভাবে এবং বিলবোর্ড আকারে টাঙ্গাতে হবে।

৪. ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে যাত্রী সাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ হওয়া কস্তুরাঘাট ড্রেজিং করে এবং ঘাটের এপ্রোচ রোড সংস্কার করে পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫. জলপথের ভাড়া কম বিবেচনায় রেখে কক্সবাজার-মহেশখালী, কুতুবদিয়া-কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া-মগনামা ফেরীঘাটে উচ্চ মূল্যের বোটভাড়া পূণ-নির্ধারণ করতে হবে।

৬. যাত্রী সাধারণের ও বিআইডবিøউটিএ-এর প্রতিনিধি সম্বলিত একটি ৭ সদস্যবিশিষ্ট ঘাটের অনিয়ম তদারকীর জন্য একটি নজরদারী কমিটি গঠন করতে হবে। উক্ত কমিটি মাসে একবার সভায় মিলিত হবে এবং যাত্রী সাধারণের অভিযোগ গ্রহণ করবে এবং তার নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

৭. ঘাটের উভয় পাশে টয়লেট সম্বলিত যাত্রী ছাউনী স্থাপন করতে হবে এবং তাতে যাত্রীর বসার আসনের সু-ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. কক্সবাজারস্থ বাঁকখালী নদী ও মহেশখালীর গোরকঘাটা নদী নৌ চলাচলের উপযোগী রাখতে প্রতিবছর ড্রেজিং করতে হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেরক: কোস্ট ট্রাস্ট। ০১৭১৩ ৩২ ৮৮ ২৮

Comment here