আন্তর্জাতিকউখিয়াটেকনাফরোহিঙ্গা সমাচার

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

15665720_570915213100670_6326318388788595441_n
জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ ভিশন :
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এল পি মারসুদি । তিনি (২০ ডিসেম্বর) আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার সময় কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের সভাকক্ষে মিয়ানমার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে আসা ২০ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষের সাথে কথা বলেন।
এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ সরকারী উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, ইউএনএইচসিআর, আইওএমসহ এনজিও প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মিয়ানমার থেকে গুলিবদ্ধি আহত হয়ে আসা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা তাদের উপর অত্যাচারের বর্ননা দেন। পরে উভয় দেশের পররাস্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা কুতুপালং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে দুপুর দেড় টার সময় ঢাকার উদ্দ্যেশে রওয়ানা দেন। পরিদর্শন কালে মন্ত্রীদ্বয় এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
পঙ্গুত্ব বরণ করলেন আজিজুল মোস্তফাcoxs-uk-pic-ajijul-mustafa-pic
মিয়ানমারের মংডু কেয়ারী প্রাং এলাকার আজিজুল মোস্তফা (২৫)। সে হাফেজুল ইসলামের ছেলে। ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর হেলিকপ্টার হামলায়। আহত অবস্থায় নাফনদ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসার আসেন টেকনাফ। কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে পৌছে কিচিৎসা নেন। উন্নত চিতিৎসা নেন চট্টগ্রামে। চিকিৎসকের পরামর্শে সর্ম্পূণ ভাবে কেটে ফেলা হয় তার ডান পা। সক্ষম যুবক আজিজুল এখন পঙ্গুত্ব বরণ করে হুইল চেয়ার নির্ভর হয়ে পড়েন সে। আহত যুবক আজজিুল মোস্তফার সাথে মঙ্গলবার সকালে দেখা হয় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এল পি মারসুদি যে ২০ জন রোহিঙ্গার সাথে বৈঠক করে দেখা সাক্ষাত করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আজিজুল। তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর সকালে হেলিকপ্টার থেকে লাঞ্চার নিক্ষেপ করা হয়। কখন তিনি বাড়ীতে ছিলেন, মুর্হুতেই বাড়ীটি আগুনে পুড়ে যায়। এবং এক পর্যায়ে একটি গুলি এসে লাগে তার পায়ে। এতে সে আহত হয়। এরপর পর কয়েক দিনের মধ্যেই সে কৌশলে এক দালাধের মাধ্যমে সীমান্ত পাড় হয়ে বাংলাদেশের উখিয়ায় এসে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তিনি আরো বলেন, তিনি জানেন না তার কি অপরাধ। মনে হয় মুসলিম হওয়ার কারনে তাদের উপর এ নির্যাতন। মিয়ানমার সেনা বাহিনীর অত্যাচারে আজ তাকে পঙ্গুত্ব বরন করতে হলো। আজকে অন্যজনের উপর নির্ভর হয়ে তাকে চলতে হচ্ছে এর চেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা আর কি হতে পারে বলে আক্ষেপ করে বলেন, মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর এ নির্যাতন বন্ধ করার কি পৃথিবীতে কেউ নেই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
একই ভাবে মংডু কেয়ারী প্রাং এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (১৯) ও গুলিবিদ্ধ হয়। ইলিয়াছ জানান, সে স্থানীয় বাজারে পিতার সাথে দোকানদারীতে সহায়তা করতো। ওই দিন সে পিতার সাথে ছিলো। হতাৎ সেনা বাহিনী তাদের উপর গুলি বর্ষণ করে। তার বাম পায়ে গুলি লাগে। আহত হয়ে সে কোনমতে পালিয়ে একটি ধান ক্ষেতে আশ্রয় নেন। পরে তার পিতা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ৫ দিন পর টেকনাফের তুলাতলি সীমান্ত দিয়ে বাংলা ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে একজন দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকে। এ ঘটনায় তার দিন তারিখ কিছই মনে নেই। পরে কুতুপালং এনজিও হাসপাতালে সে চিকিৎসা নেন। তবে বৈঠকে উপস্থিত থেকেও তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা পররাষ্ট্রমন্তীদের জানাতে পারেনি কেয়ারী প্রাং এলাকার রোহিঙ্গা নারী নূর ফাতেমা। তিনি বলেন সে জানে না এখনো তার স্বামী বেচেঁ আছে কি না। সে স্বামী ছাড়া দু সন্তান নিয়ে কুতুপালং অবস্থান নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন মিয়নমারের শতকরা ৯০ ভাগ মেয়েকে সেনা বাহিনী ধর্ষণ করছে। এ ভয়ে সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা বোঝাই ৪ টি নৌকা এবং উখিয়া সীমান্ত দিয়ে ১২ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নাফ নদীর জলসীমার ৪ টি পয়েন্ট দিয়ে নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবশের চেষ্টা চালিয়েছিল।
বিজিবি টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ জানান, নাফ নদীর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের জলসীমার শূন্যরেখা অতিক্রম করে রোহিঙ্গা বোঝাই ৪টি নৌকা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এসময় তাদের স্বদেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়। প্রতিটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন রোহিঙ্গা ছিল বলে ও জানান বিজিবির এ কর্মকর্তা।
এদিকে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান মঙ্গলবার ভোরে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেস্টা করার সময় ১২ জনকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

Comment here