কুতুবদিয়া

কুতুবদিয়া সুরক্ষার উপায় খুঁজতে মতবিনিময় সভা


জাবেদ ইকবাল চৌধুরী,কক্সবাজার
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও কোস্ট ট্রাস্টের সহযোগীতায় আজ কুতুবদিয়া উপজেলা হলরুমে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালেহীন তানভীর গাজীর সভাপতিত্বে কুতুবদিয়া সুরক্ষার উপায় শিরোনামে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান, আধুনিক ক্ষুদ্রঋনের জনক জনাব ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-০২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মূখ্য সচিব , পিকেএসএফ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুর করিম । এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জসীম উদ্দীন, কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ টি এম নুরুল বশর কোস্ট ট্রাস্ট নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ কুতুবদিয়া উপজেলার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক প্রথমে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে আসন গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন এবং সকলের সম্মুখে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের পরিচয় তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি বলেন আজকের এই মতবিনিময় সভার মূল লক্ষ্য হলো কুতুবদিয়ার প্রধান সমস্যাসমুহ উপস্থাপন করা ও বাস্তবসম্মত সমাধানের উপায় খুজে বের করা।

উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আ স ম শাহারিয়ার চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেছে। ফলে সামান্য জোয়ারে কুতুবদিয়ার অধিকাংশ এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালের পওে যে বেঁড়িবাধ হয়েছে তা কুতুরদিয়া সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। তার নকশা পরির্বতন করে উঁচু বেড়িবাধ তৈরি করতে হবে যার আকার ১৪ ফুট হতে ৩৪ ফুট হতে পারে। বেঁড়িবাধকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে আমাদের চর রক্ষায়ও এগিয়ে আসতে হবে এবং বেঁড়িবাধের বাইরে বনায়ন করতে হবে।

দক্ষিন ধুরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মূল ভ‚-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক থেকে দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস এই কুতুবদিয়ায়। কুতুবদিয়ার মানুষ তার মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। তিনি আরো বলেন, কুতুবদিয়া মানুষের ৩ টি মৌলিক সমস্যা হলো বেড়িবাধের সমস্যা, বিদ্যুতের সমস্যা ও যোগাযোগের সমস্যা। এই তিনটি মৌলিক চাহিদাকে প্রধান্য দিয়ে কুতুবদিয়া রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে কুতুবদিয়াকে রক্ষার জন্য যুগোপোযুগি প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। বেঁড়িবাধ কুতুবদিয়ার মানুষের জীবন মরন সমস্যা। বেঁড়িবাধ হলে কুতুবদিয়ার দেড় লক্ষ মানুষের জীবন বাচঁবে। তিনি পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি এই অবহেলিত জনপদের মৌলিক সমস্যা সমাধানে কুতুবদিয়াকে রক্ষার জন্য সবাইকে সাথে নিয়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহন করবেন।

আলীআকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব নুরুচ্ছফা বি কম বলেন, কুতুবদিয়া একটি বিপন্ন দ্বীপ। কুতুবদিয়াকে রক্ষার জন্য কোন সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করেনি। আমরা কেটে খাওয়া মানুষ, আমাদের তেমন কোন চাহিদা নেই। আমাদের তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণে আপনারা যথাযত পদেক্ষপ গ্রহন করবেন। সারা দেশে বিদ্যুৎ কিন্তু কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ হল সকল উন্নয়নের চাবিকাঠি। বিদ্যুৎ ছাড়া কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। কুতুবদিয়ার ৪০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ২০বর্গকি.মি. অরক্ষিত। অতি সত্তর বেঁড়িবাধ না দেওয়া হলে কুতুবদিয়ার মানুষ প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে ভাসবে।

কৈয়ার বিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব জালাল আহমদ বলেন, বাশঁখালী, ছনুয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজারকে রক্ষা করতে হলে কুতুবদিয়াকে সুরক্ষা করতে হবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে কুতুবদিয়াকে রক্ষার জন্য যুগোপোযুগি প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। বেঁড়িবাধ কুতুবদিয়ার মানুষের জীবন মরন সমস্যা। বেড়িবাধ হলে কুতুবদিয়ার দেড় লক্ষ মানুষের জীবন বাচঁবে।

বড়ঘোপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেন, একটা এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থাকে অর্থনৈতিক দিকে লক্ষ রাখতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল বিদ্যুৎ। শতবছর হয়ে গেছে কুতুবদিয়ার মানুষ বিদ্যুৎ দেখেনি এবং বিদ্যুতের সুবিধা পায়নি। মূল ভ‚-খন্ড থেকে ১৭ কি. মি. দুরে সন্দীপে সব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যামের বিদ্যুৎ যাচ্ছে অথচ মূল ভূ-খন্ড থেকে ৩ কি.মি. দুরে কুতুবদিয়ার মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। তিনি পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য বলেন, আপনি প্রধানমন্ত্রির খুব কাছের লোক। আপনি চাইলে পারবেন কুতুবদিয়ার মানুষের এই সমস্যা সমাধান করতে। প্রধানমন্ত্রির মাধ্যমে কুতুবদিয়ার জন্য বিশেষ প্রকল্প নিবেন ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।

জনাব জহিরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক, কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বলেন, বর্তমান সরকারের আই সি টি বেইস্ড শিক্ষা কে বাস্তবায়ন করতে হলে সর্বপ্রথম বিদ্যুতের প্রয়োজনে। বিদ্যুতের জন্য তা ব্যবহত হচ্ছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে কুতুবদিয়াকে রক্ষার জন্য যুগোপযোগি প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

সাংবাদিক এস কে লিটন কুতুবি বলেন, আসছে জোয়ার ভাসছে মানুষ এ প্রবনতা থেকে মানুষকে বাচানোর জন্য বেঁড়িবাধ দরকার। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কুতুবদিয়ার মানুষের কি অপরাধ? কেন তাদের এত র্দূদশা? অনেক সেমিনার হয়, সভা হয় কিস্তু কুতুবদিয়াকে বাচানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসছেন না।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সমুদ্র বেষ্ঠিত একটি দ্বীপ কুতুবদিয়া। আমরা সমুদ্রের সাথে যুদ্ধ করে বেচে আছি। কোস্ট ট্রাস্ট কে ধন্যবাদ জানাই যে তারা কুতুবদিয়ার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা কোন আশা চাই না, চাই সঠিক বাস্তবায়ন।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এ টি এম নুরুল বশর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপূষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেছে। ফলে সামান্য জোয়রে কুতুবদিয়ার অধিকাংশ এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। ১৯৯১ ও ১৯৯৩ পর যে বেড়িবাধ হয়েছে তা কুতুরদিয়া সুরক্ষার জন্য যতেষ্ট নয়। তার নকশা পরির্বতন করে উঁচু বেড়িবাধ তৈরি করতে হবে। তিনি পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য বলেন, আপনি প্রধান মন্ত্রির খুব কাছের লোক আপনি চাইলে পারবেন কুতুবদিয়ার মানুষের এই সমস্যা সমাধান করতে। আপনি প্রধান মন্ত্রির খুব কাছের লোক প্রধান মন্ত্রির মাধ্যমে কুতুবদিয়ার জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। কুতুবদিয়ার মানুষ আপনাকে মনে রাখবে, মনে রাখবে কুতুবদিয়ার পরবর্তী প্রজন্ম।
আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, রোয়ানুর সময়ে আমি কুতুবদিয়া এসেছি মানুষকে রিলিফ দিতে গিয়েছি। কুতুবদিয়ার মানুষ আমাকে বলেন আমরা রিলিফ চাই না, আমরা চাই বেঁড়িবাধ। কুতুবদিয়ায় কোন সরকারী কর্মকর্তা থাকেন না, না থাকার প্রধান কারন হলো বিদ্যুৎ। কুতুবদিয়ার মানুষের প্রধান দাবি বেঁড়িবাধ। আপনারা জানেন, বেঁড়িবাধের কারনে কুতুবদিয়ায় প্রতিদিন দুইবার বন্যায় প্লাবিত হয়। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় কুতুবদিয়ায় ৫০ হাজার মানুষ মারা গেছেন এই বেঁড়িবাধের কারনে। সিসি বøক দিয়ে কাজ করলে ১০০ বছর নয় ১০০০বছরেও বেড়িবাধ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।। তিনি পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য বলেন, আপনি প্রধানমন্ত্রির খুব কাছের লোক আপনি চাইলে পারবেন কুতুবদিয়ার মানুষের এই সমস্যা সমাধান করতে।
বিশেষ অতিথি মোঃ আবদুর করিম বলেন এই উপকূলের সাথে আমার অনেক দিনের সর্ম্পক। কুতুবদিয়ার নানা সমস্যা সর্ম্পকে আমি অনেক আগে থেকে অবগত। আপনারা আপনাদের সমস্যা আমাদের স্যারের কাছে তুলে ধরেছেন। আমি আশা করছি উনি সর্বোচ্চ দিয়ে এই সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করবেন। আপনারা জানেন পিকে এস এফ সারা দেশে ২৭৫টি এন জি ও এর মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে। আজ আমরা কোস্ট ট্রাস্টের প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর উদ্ভোধন করেছি। কোস্ট ট্রাস্টে সহযোগীতায় আপনারা এই প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
আপনাদের যে সমস্যা বেঁড়িবাধ, বিদ্যুৎ তা সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ সচিব এর সাথে আলোচনা করে সমাধানের জন্য চেস্টা করব।

Comment here