এক্সক্লুসিভজাতীয়সারাদেশ

গডফাদারসহ তিন হাজার মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা

ডেস্ক নিউজ::

সারাদেশে তিন হাজার মাদক কারবারির তালিকা তৈরি করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মাদক পাচারের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ এ তালিকায় উঠে এসেছে অর্ধশতাধিক গডফাদারের নাম। করা হয়েছে ৬৪ জেলার ১২৮ জনের শর্ট তালিকাও। অধিদপ্তর থেকে এই তালিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। যদিও ডিএনসির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটও পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করে থাকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ তালিকার সঙ্গে অন্যান্য ইউনিটের তালিকার সমন্বয় করে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।

ডিএনসি সূত্র জানায়, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গতি বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কৌশল অবলম্বন ও বারবার নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করায় মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে বেগ পেতে হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলার পাড়া-মহল্লায় মাদক ব্যবসা সচল রেখেছে এই তিন হাজার ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পাইকার। তারা গডফাদারদের সহায়তায় ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাদক সংগ্রহ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

সক্রিয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স) ডিআইজি এ এফ এম মাসুম রাব্বানি ভোরের কাগজকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করা অধিদপ্তরের রুটিন কাজ। কয়েকমাস পর পর এই তালিকা নবায়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। তালিকায় নাম থাকা কেউ গ্রেপ্তার হলে বা মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিলে তার নাম বাদ দেয়া হয়। পরে আপডেট তালিকা নিয়ে ওই ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এখানে কাউকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বর্তমানে সক্রিয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর কামাল হোসেন ও শামীম, গাজীপুরের আরিফ সরকার ও মহসিন মিয়া ওরফে ইকবাল হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জের রাসেল ও রনি কাজী, মুন্সীগঞ্জের রিপন শেখ ও আমেনা বেগম, নরসিংদীর হানিফ ও রবিউল ইসলাম রবি, টাঙ্গাইলের রাসেল ও সুচরিতা, রাজবাড়ীর বৃষ্টি আক্তার ও আলমগীর বেপারি, মানিকগঞ্জের আরজু ও পাখি মিয়া, শরীয়তপুরের লোকমান বেপারি ও জহির, মাদারীপুরের বাবুল সরদার ও রেজাউল হাওলাদার, কিশোরগঞ্জের সুমি ও রুবেল মিয়া, গোপালগঞ্জের সোনা মিয়া ও লাল চান ফকির, ফরিদপুরের প্রিন্স মাহমুদ ও দক্ষিণ চর কমলাপুরের লিয়াকত শিকদার, চট্টগ্রামের আজিজুল হক ওরফে জুলাইক্যা ও আমজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রহিম মিয়া ও মোবারক আলি, চাঁদপুরের হাবিব মোল্লা ও সোহেল ওরফে কাটলি সোহেল, কুমিল্লার নুরুল হক ও রবিন, কক্সবাজারের শাহজাহান আনছারী ও রশিদ আনছারী, খাগড়াছড়ির তপন দে ও সাজু আহমেদ, লক্ষ্মীপুরের আলি হোসেন ও মনির হোসেন, নোয়াখালীর নুর আলম রাজু ও নিজাম উদ্দিন, ফেনীর রসুল আহম্মদ বলী ও রায়হান উদ্দিন আহম্মদ ওরফে রিয়াদ, রাঙ্গামাটির বাদশা আলম ও মঞ্জুরা বেগম, বান্দরবানের ওয়েমং মারমা ও মিদু অং মারমা, রাজশাহীর বজলুর করিম ওরফে বজলু ও মিন্টু, বগুড়ার টোকেন ও শান্ত মিয়া, পাবনার কালা সাদ্দাম ও রমজান, জয়পুরহাটের ফারুক হোসেন ও জমিরউদ্দিন, সিরাজগঞ্জের শরীফ ও আলি আশরাফ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিপু সুলতান ও হোসেন আলি, নওগাঁর মিঠু ও শ্রী সুজন, নাটোরের মাসুম ও তৌহিদুল ইসলাম ডলার, খুলনার মমিন গাজী ও টেরা খোকন, বাগেরহাটের সেকান্দার ও খোকন, চুয়াগাঙ্গার তানজিল ও আমজাদ, যশোরের আমির হোসেন ও লোকমান হোসেন,ঝিনাইদহের শহীদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার রাজু আহম্মেদ ও সাজ্জাদ হোসেন, মাগুড়ার নজরুল ইসলাম বুধো ও শাহিনুল, মেহেরপুরের আজিজুল ইসলাম ও আবদুল কাশেম, নড়াইলের বাদশা মোল্যা ও ফিরোজ শেখ, সাতক্ষীরার নজরুল ইসলাম ওরফে বরনু ও আজিজুল ইসলাম, রংপুরের টিপু সুলতান ও পারভীন, দিনাজপুরের শাহজালাল ও মোমিনুর, গাইবান্ধার শাহানুল ইসলাম শাওন ও সুজন চৌধুরী, কুড়িগ্রামের আনিস ওরফে আনাস ও শ্রী মানিক চন্দ্র, লালমনিরহাটের রবিউল ইসলাম ও মমী বেগম, নীলফামারীর একরামুল ও নাদিম, পঞ্চগড়ের হাবুল ওরফে হাবলু ও শ্রী সুমন বাশফোড়, ঠাকুরগাঁওয়ের কলাডাঙ্গীর জহিরুল ইসলাম ও শিতলপুরের জহিরুল ইসলাম, সিলেটের আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ার মিয়া, হবিগঞ্জের জসিম উদ্দিন ও রশিদ মিয়া, সুনামগঞ্জের শামছুল হক ও মামুনুর রশিদ, মৌলভিবাজারের শামীম মিয়া ও ইসমত মিয়া, বরিশালের বাবুল হোসেন ও সোহেল আবদুল্লাহ, বরগুনার রশিদ মৃধা ও আফজাল হোসেন, ভোলার মুন্না ও নিলয়, ঝালকাঠির স্বপন ও রাজ্জাক, পটুয়াখালীর শাইন খান ও সাইফুল খান, পিরোজপুরের আবির শেখ প্রিন্স ও বাপ্পি শেখ, ময়মনসিংহের মজিবর ও শাওন, জামালপুরের আশরাফুল ইসলাম নাহিদ (রকি) ও আয়াত আলি, নেত্রকোনার সেলিম মিয়া ও রুমন খান পাঠান এবং শেরপুরের শেখ ফরিদ ও আবদুল মোতালেব।

এদিকে, একসময় কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান দেশে আসলেও এখন ভারতীয় সীমান্তই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ভরসা। ভারতীয় মাদকের গডফাদাররা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা কিনে বাংলাদেশে পাচার করছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় ওই গডফাদারদের তালিকাও করেছে বাংলাদেশ। গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ ভারত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যায়ের এক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বেশ কয়েকজন ভারতীয় মাদক গডফাদারের তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া শুধু একটি কোম্পানির ফেনসিডিল বাংলাদেশে আসায় সে বিষয়টিও অবগত করেছে বাংলাদেশ।

শুধু মাদক অধিদপ্তরই নয় সারাদেশে এখনো কারা মাদক ব্যবসা করছে তার তালিকা নবায়ন করছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। বিভিন্ন কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এসব ব্যবসায়ীদের ধরতে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। যত প্রভাবশালীই হোক কাউকেই মাদক ব্যবসা করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র।

উল্লেখ্য, মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে গত বছরের মে মাসে সারাদেশে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। গ্রেপ্তার করা হয় দেড় লক্ষাধিক মাদক কারবারিকে। র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রায় ৪০০ মাদক ব্যবসায়ী। ১০২ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণের পর প্রাণের ভয়ে গা ঢাকা দেয় অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় থমকে যাওয়া মাদক ব্যবসা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। মাদকের ঢল থামাতে সাড়াশি অভিযান আবার জোড়দার করতে হবে।

সুত্র-ভোরের কাগজ

Comment here