টেকনাফ

জীবনে প্রথম প্রেমের বিরহ-ব্যথা সহ্য করতে না পেরেই আত্নহত্যার পথ বেছে নেয় স্কুল ছাত্রী নুর বেগম

হুমায়ূন রশিদ, টেকনাফ:
টেকনাফে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহননকারী স্কুল ছাত্রীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মা-বাবা অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় জীবনে প্রথম প্রেমের বিরহ-ব্যথা সহ্য করতে না পেরেই এই নৃশংস ঘটনার সুত্রপাত বলে বিভিন্ন সুত্রে প্রকাশ।
২২ নভেম্বর বাদে আছর উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী গ্রামের গোরস্থানে জানাজা শেষে নুরুল আমিনের মেয়ে ও নয়া বাজার হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী নুর বেগম (১৫)কে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এদিকে আতœহত্যার সময় নুর বেগমের লিখে যাওয়া চিরকুটের সুত্রধরে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তার জীবনের প্রথম প্রেমের কাহিনী ও মা-বাবা অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার কাহিনী। যার কারণে নুর বেগম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আতœহত্যার মাধ্যমে আবেগঘন ও স্বপ্নভরা একটি প্রেমিক জুটির স্বপ্নভঙ্গ যন্ত্রনার ইতিহাস সৃষ্টি করল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,একই গ্রামের প্রবাসী নুরুল আমিনের মেয়ে নুর বেগম ও মৃত মৌলভী ছৈয়দ আহমদের পুত্র মোঃ শাহজাহান নয়াবাজার হাইস্কুলে পড়াশুনা করত। নুর বেগম শাহজাহানের বসত-বাড়ির উপরের রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করত। একসাথে আসা-যাওয়া, চলাফেরা, হাসি-কান্নার কারণে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শাহজাহান গরীব পরিবারের ছেলে ও সাদা মনের নিরহংকারী স্বভাবে। এদিকে মেয়ের পরিবার পুরান রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুত হলেও রক্ষণশীল পরিবারের হওয়ায় মেয়ে উপযুক্ত হওয়ার কারণে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং বাড়ির বাউন্ডারী দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। ইতিমধ্যে পাশ্ববর্তী শাহজাহানের সাথে স্কুলে পড়াশুনা ও আসা-যাওয়ার কারণে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার বিষয়টি জানতে পারেন মা। এদিকে শাহজাহানের পরিবার গরীব ও নুর বেগমের মা-বাবার পছন্দ না হওয়ায় মেয়েকে দ্রæত অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেন। এরই সুত্রধরে প্রবাসী বাবা নুরুল আমিন প্রায় ৬মাস আগে দেশে ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে মা-বাবা লেদার এক ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য কথা-বার্তা প্রায় পাকা করে ফেলে। বিষয়টি নুর বেগম জানতে পেরে জীবনে প্রথম প্রেমের বেদনায় ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু নুর বেগমের পিতা নুরুল আলম এই বিষয়টি অস্বীকার করে তার মেয়ের আতœার শান্তি কামনা করেন। মা-বাবার বড় মেয়ে ও অতি আদরের হওয়ায় মনের এই ব্যথা কাউকে বুঝাতে পারেনি। সে ভালবেসে না পারল মমতাজ হয়ে স¤্রাট শাহজাহানের মতো কুঁেড় ঘরে স্বপ্নের তাজমহল গড়তে। তাই শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে জনশূন্য নিজ বাড়িতে প্রেমের আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পরপারে চলে যায়। কিন্তু চিরকুটে লেখা পরিচয়হীন মোঃ শাহজাহানের মধ্যে তাকে দেখতে পাবে। তাকে কিছু না করার জন্য আহবান জানায়। এই নুর বেগমের আতœহননের বিষয়টি মাথায় রেখে স্কুল,কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দের সজাগ হওয়া দরকার বলে সচেতন মহল মনে করেন।
উল্লেখ্য,২১নভেম্বর দুপুর সোয়া ২টারদিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালীর নুরুল আমিনের মেয়ে ও নয়াবাজার হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী নুর বেগম (১৫) বাবা-মা বেড়াতে যাওয়ার সুযোগে খালি বাড়িতে ঘরের তীরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে। নিহতের ভাই পিইসি পরীক্ষার্থী নুরুল আবছার বাড়িতে এসে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে বোনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি ও চিৎকার করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর তদন্তে বেরিয়ে আসে কোমল হৃদয়ের অভিমানে ভরা স্কুল পড়–য়া প্রেমিক জুটির ধনী-গরীবের ব্যবধানে গড়া অব্যক্ত প্রেমের কাহিনী।

Comment here