এক্সক্লুসিভটেকনাফ

টেকনাফে অসুস্থ এক মুক্তিযোদ্ধা অর্থাভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত : প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম : টেকনাফে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের ভিড়ে নিরবে-নিভৃতে থাকা এক মুক্তিযোদ্ধা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এই ব্যাপারে তিনি বাংলার দরদী মা, বঙ্গবন্ধুর গর্বিত কন্যা, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধারদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে যিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করতে পেরে নিজেই ধন্য মনে করছে। বর্তমান সময়ে এমনই একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান পেয়ে দেশ ও জাতির সামনে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ তুলে ধরা হল। কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আলী আকবর পাড়ার মরহুম আব্দুল কাদের ও মরহুমা সিরাজ খাতুনের ঘরে ৫ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সোলতান আহমদ (বীর মুক্তিযোদ্ধা) তথা মুজিব বাহিনী, (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সনদ নং-৯৩৮৮)। তাঁর গ্রামের বাড়ি পরিদর্শনকালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে পাক হানাদারদের সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়ার কাহিনী।
স্মৃতিচারণকালে তিনি জানান, আমি একজন মুক্তিযুদ্ধ স্বপক্ষের মুজিবীয় আদর্শের লড়াকু সৈনিক। বিভিন্ন সময় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ১৯৬৬ সাল থেকে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টেকনাফ থানা শাখা তথা টেকনাফ উপজেলা শাখার বিভিন্ন পদে দীর্ঘ ৫২বছর যাবত আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বর্তমানে আমি হ্নীলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। বিগত ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে আমি মাতৃভূমি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর তৎকালীন টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ হাবিলদার এজাহার মিয়ার নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগীসহ প্রশিক্ষণ শুরু করি। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়। হ্নীলা তথা টেকনাফ থানার সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৭১ সালে ৫মে পাক হানাদার বাহিনী বিশাল বহর নিয়ে প্রবেশ করে নারকীয় নির্যাতন শুরু করলে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাগণ আতœগোপনে চলে যায়। আমিও তাদের মত পাশ^বর্তী এলাকা চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামে চলে যায়। সেখানে কয়েক দিন আতœগোপনে থাকার পর আমি পুনঃপ্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ১নং সেক্টর চট্টগ্রাম এর ফটিকছড়ি পাহাড়ে চলে যায়। গ্রæপ কমান্ডার মোহাম্মদ হাশেম এর নেতৃত্বে ২১ দিন প্রশিক্ষণের পর তাঁর সাথে ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, গহিরা, পাহাড়তলী, হাটহাজারীতে অপারেশন করি। এরপর আরো উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সাবরুম থানার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যায়। সেখানে দেখা হয় ফিরোজ আহমদ ও তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা কবি ও সাংবাদিক শওকত হাফিজ খান রুশ্নি। পরে যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর নেতৃত্বে ১২জনের একদল মুক্তিযোদ্ধার সাথে আমি চলে আসি মীরেরসরাই এলাকায়। ৭১ সালের আগষ্ঠ মাসে মীরেরসরাইতে প্রথম বারের মত পাক বাহিনীর সাথে ৩ঘন্টার এক সম্মুখযুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছি। পরে ফটিকছড়ি-রাঙ্গুনিয়াতে আরো ২বার পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করি। এসব এলাকায় রাজাকার-আল বদর ও শান্তি বাহিনী সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিকবার উল্লেখযোগ্য অপারেশনে অংশ নিই।
এরপর আমার সহযোদ্ধা ফিরোজ আহমদকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের স্থায়ী নিবাস হ্নীলায় চলে আসি। আসার পর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আমার সহযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমানসহ আরো কয়েক জনের সাথে দেখা হয়। আমার সহযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও অন্যান্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে স্বশস্ত্র অবস্থায় কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন করার উদ্দেশ্যে রীতিমত টহল দিতে থাকি। ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস অর্জিত হলে আমিও অন্যান্যদের মত জীবন ধারণে আতœনিয়োগ করি। এরপর হার্ট ডিজিজ, ফিস্টুলা ও কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাড়িতে অবস্থান করি। সে সময় হতে এখনো বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতেই বাংলার শাসনভার থাকাতে সন্তুষ্ট বলে জানান। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে অসুস্থ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধা, শুভাকাংখীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের নিকট দোয়া কামনা করেছেন।
তিনি দূরারোগ্য কিডনী, পিস্টুলা ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে পর্যান্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তিনি চিকিৎসা যথাযথ সেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

Comment here