ক্রাইমটেকনাফ

টেকনাফে দু’লাখ পিস ইয়াবা হজম! ইয়াবা খালাসের পুরনো হাট , মুন্ডার ডেইল ঘাট

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
সাবরাং মুন্ডার ডেইল-আলীর ডেইল-খুরের মুখ উপকূল ইয়াবা খালাসের নিরপদ জোনে পরিণত হয়েছে। এখানের ঘাট দিয়ে মালয়েশিয়া মানব পাচার, মাদক খালাসের অভিযোগ বেশ পুরানো। বিভিন্ন সময়ে এ সব এলাকায় দিয়ে এতই অপকর্ম চলতো যে, সরকার ওই এলাকায় বিজিবি’র বিওপি স্থাপন করে তা দমনের উদ্যোগ নেয়। তারপরও অপকর্ম থামেনি। ওই এলাকায় এ সব অপকর্মের কারনে ২০১৮ সালের ২৫ মে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায় স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকতার কামাল। এরপর ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল টেকনাফ হাই স্কুলের মাঠে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির উপস্থিতিতে স্বঘোষিত মাদক কারবারী হিসেবে স্যারেন্ডার করে সাবরাং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোয়াজ্জেম হোসেনসহ এই এলাকার অন্তত দশ জন। এরা প্রায় দু’ বছর কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে আসে। তারপর অনেকে ভালো হয়ে য়ায়। আবার কেউ কেউ আগের পেশায় যুক্ত হয়ে পড়ে এমনটি জানান নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক একাধিক স্থানীয়। তারা বলছেন,
বেশ কয়েক মাস ধরে অন্তত চারটি সিন্ডিকেট নির্বিঘেœ এই এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে নৌকা যোগে ইয়াবা খালাস , মওজুদ ও পাচার অব্যাহত রাখে। গত ২২ এপ্রিল বৃহস্প্রতিবার ভোরে একটি ট্রলার হতে ইয়াবার কয়েক কাটুন লুটপাঠের ফলে তোলপাড় শুরু হয়। ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা যে যার মত অবস্থান গ্রহণ করে ইয়াবার মহজুদ. লুটপাঠ ও পাচারে একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য, মানব বন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার পেয়েছে। যার কারনে সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে র্ন্ভিরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাবরাং মুন্ডার ডেইল গ্রামের কবির আহমদের ছেলে ১০২ জনের আত্বস্বীকৃত মাদক কারবারী শাকের মাঝি , কালু ফকিরের ছেলে আব্দুল আমিন লুলা মাঝি, আবদু সালামের ছেলে আনোয়ার মাঝি, হোছন আহমদের ছেলে রহিমুল্লাহ মাঝিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মুন্ডার ডেইল ঘাট দিয়ে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এই চার মাঝির নেতৃত্বে আরো কিছু ট্রলার প্রতিনিয়ত মাছ ধরার কথা বলে পশ্চিম বঙ্গোপসাগর দিয়ে গভীর সাগরে রওয়া দেয়। পরে সময় সুযোগ বুঝে উপকূলে ফিরে এসে ইয়াবা খালাস করে থাকে। এমন একটি ইয়াবার চালান খালাস করে গত ২২ এপ্রিল বৃহস্প্রতিবার ভোরে সাবরাং মুন্ডার ডেইল-খুরের মুখ পয়েন্ট দিয়ে প্রায় দুই লাখ পিস ইয়াবা চালান খালাস করে আনোয়ার মাঝি।
ভোরে সাগর আসা ট্রলার হতে মাছের বদলে বস্তা দেখে হানা দেয় স্থানীয় টাইল্লার ছেলে ফজর রহমান, ইউসুফ আলীর ছেলে ফজল আহমদ , ফজল আহমদের ছেলে ইব্রাহিম, নাজির হোসেনের ছেলে নুরু, জলিল মিয়া, জাফরসহ বেশ কয়েকজন। তারা ইয়াবার চালানটি লুটপাট করে। যে যার মত হজম করেছে। এ ঘটনায় ইয়াবা চালান উদ¦ারে তৎপরতা শুরু করে মূল মালিক শাহপরীরদ্বীপের দক্ষিণ পাড়ার নুর হাকিম মাঝির ছেলে জাফর ও শাহপরীরদ্বীপ কোনা পাড়ার ফজল আহমদ ওরফে ভারা ফজলের ছেলে ইয়াছিন।
সাবরাং হাদুর ছড়া এলাকার বার্মায়া মোস্তফার হবু মেয়ের জামাই এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন দানুর (তালত ভাই) বেয়াই হচ্ছে জাফর। স্থানীয় ইউপি সদস্য দানু স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রয়ারি টেকনাফে আত্বস্বীকৃত ১০২ জনের একজন।
ইয়াবা চালালেন মূল মালিক জাফর শ্বশুর পক্ষ ও আত্বীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন দানুর সহযোগিতায় ইয়াবা উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। তারা কৌশলে স্থানীয় বিজিবি বিওপিতে গিয়ে কোথায় কোথায় ইয়াবা মওজুদ থাকে সে খবর দিতে থাকে। বিজিবি তৎপরতা শুরু করায় অনেকে ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকে। এতে ওই ঘাট দিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নৌকা য়াতায়াত এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ জেলে সম্প্রদায় দূর্ভোগে পরে। এর পক্ষে বিপক্ষে স্থানীয় রাজনীতির সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ওই আসনের তিন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন দানু, জয়নাল আবেদিন ও মো: সেলিম। এরা যে যার মত ঘায়েল করতে কেউ গণমাধ্যম,কেউ সংবাদ সম্মেলন বা মানব বন্ধন করে। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন দানু বলেন, ‘ এ ঘাট দিয়ে কয়েকটি সিন্ডিকেট পাচারকাজ চালিযে যাচ্ছে । ইয়াবা পাচার বা লুটের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরোদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মাদক কারবারে বাধা হয়ে দাড়াঁলেই প্রতিপক্ষ লোকজন উল্টো ষড়যন্ত্র শুরু করে। ’ তিনি আত্বীয়দের ইয়াবা পাচারে সহযোগীতার কথা দৃঢভাবে অস্বীকার করে বলেন,‘ সুষ্ঠু তদন্ত করলেই প্রকৃত পাচারকারীরা ধরা পড়বে। ’
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হাফিজুর রহমান বলেন, ইয়াবা খালাস বা লুটের বিষয়টি পুলিশের নজরে রয়েছে। মাদক পাচার প্রতিরোধে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শেষে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়ার কথাও তিনি জানান।
মুন্ডার ডেইল ঘাটের পাশে একটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিওপি রয়েছে। বিওপির কারো কারো সাথে নৌকার মাঝিদের সখ্যতা গড়ে উঠে। এরফলে প্রায় সময় ইয়াবা খালাস হলেও তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। আর পাচারকারী চক্রগুলো দল মতে ভিন্ন হলেও ইয়াবা পাচারের বেলায় সবাই এক। কেউ কারো প্রতিপক্ষ হয়ে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধেও এগিয়ে আসে না। এরফলে পাচার কাজ চলে অবাধে। এ বিষয়ে বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক মেজর রুবায়াৎ কবীর জানান, ‘ সীমান্তে মাদক পাচার রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ দেশের সীমানা রক্ষায় বিজিবি সদস্যরা সফলতার সাথে কাজ করছে।
অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরও টেকনাফ সীমান্ত বিশেষ করে নাফ নদী এলাকায় বিজিবি’র তৎপরতায় মাদক পাচার অনেকটা থমকে গেছে। পশ্চিম সী-বিচের বিশাল বঙ্গোপসাগরের দায়িত্বপুর্ণ এলাকায়ও বিজিবি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। মুন্ডার ডেইলে আসলে কি ঘটেছে না ঘটেছে সেটা দেখছিনা। যেখানেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়, বিজিবি নেখানেই অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এখানে দায়িত্বপালনে বিজিবি’র কেউ অবহেলা করলে বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। সুতরাং সীমান্ত সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ঠ সকলের সহযোগীতায় বিজিবি সাফল্যেও সাথে আরো এগোবে।’

Comment here