এক্সক্লুসিভক্রাইমটেকনাফসারাদেশ

টেকনাফে পরকীয়ার আগুনে এক নারীর সুখের সংসার পুড়ে ছাঁই

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম : টেকনাফে এক চালক স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা হয়ে দাড়ায় চরম নির্যাতনের মুখে ২ সন্তান কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হল অসহায় মনোয়ারা বেগম নামে এক গৃহবধুকে। এই গৃহবধুর সংসার পরকীয়ায় ঝড়ে তছনছ হলেও ছেলেদের ফিরে পেতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকলের সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।
জানা যায়, ২০১১ সালের দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়ার মৃত আমির হামজার ৯ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সবার ছোট মনোয়ারা বেগমের সাথে একই এলাকার মরহুম মোহাম্মদ হোছন মেম্বারের পুত্র গাড়ির চালক ফোরকান আহমদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। স্বামী গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোর সুযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গাড়ি চালক হওয়ার সুযোগে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে। নগদ টাকা আয় হওয়ায় পর নারীর প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। এরই মধ্যে তাদের সংসারে মোহাম্মদ সিফাত (সাড়ে ৫), মোহাম্মদ শাহীন (২) বছরের সন্তানের আগমন ঘটে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার সাথে সখ্যতার সুযোগে অগাধ টাকার মালিক বনে যাওয়া চালক স্বামী ফোরকান গত ৭/৮ মাস ধরে রামু এলাকার পারভীন নামে এক মহিলার সাথে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে অনৈতিক শারীরিক মেলামেশায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের সেইসব গোপনীয় ছবি মুঠোফোনে ধারণকৃত ছবি বাড়িতে এনে স্ত্রী মনোয়ারাকে ঘুমানোর সময় দেখালে প্রতিবাদ করায় চলে মারধর ও নির্যাতন। এই সুযোগে তাল মিলায় শ্বাশুড়ী ফুলবানু। অলক্ষী এই বউ বাদ দিয়ে টাকা ওয়ালা ছেলেকে আরো একটি বিয়ে করানোর ইচ্ছে পোষন করেন। কিন্তু স্বামী নতুন বিয়ে করার কথা প্রকাশ না করেই অনৈতিক ছবি দেখিয়ে স্ত্রী মনোয়ারাকে ক্ষুদ্ধ করে তুলে। এরই জেরধরে সর্বশেষ গত ৩জুলাই মঙ্গলবার সকালে স্ত্রী মনোয়ারাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরের পর বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং বিকালে আবারো মারধর করে। শেষ পর্যন্ত স্বামীর ঘরের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়ি চলে আসার কথা বললে স্বামী, শ্বাশুড়ী ও জনৈক ভাবী মনোয়ারার ছেলে দুইজনকে কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। গুরুতর আহত হয়ে ভাইয়ের বাড়ি এসে আশ্রয় নেওয়ার পর টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের নিকট সালিশ দায়ের করা হয়।
এই ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন,এই ব্যাপারে একটি সালিশ দায়ের করলে অভিযুক্ত স্বামীকে ডাকা হয়। কেন অপর একটি মহিলার জন্য নিজের স্ত্রীকে এতদিন অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দেয়নি। তাকে বুঝানো হয় তোমার এত সুন্দর স্ত্রী, ছেলে ও সংসার বাদ দিয়ে তুমি বখাটে মেয়ের ফাঁদে পা দিওনা। ঐ স্বামী এই কথা কোনমতে শুনতে রাজি নই। জেল হাজতে গেলেও ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে বলে জানান। তাই বাদী মনোয়ারার উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। এই ব্যাপারে নির্যাতিত মনোয়ারা বলেন, সতীনের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার উপর অমানুষিক নির্যাতনের সুবিচারের পাশাপাশি ছেলেদের ফিরে পেতে চাই। লম্পটদের আইনীভাবে মোকাবেলা করে আমার অধিকার আদায় করে ছাড়ব বলে মত প্রকাশ করেন।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত স্বামী মোহাম্মদ ফোরকান বলেন,আমার বউ শ্বাশুড়ীর কথার অবাধ্য হওয়া এবং ছেলেদের দেখাশুনা না করায় সংসারে অশান্তি চলে আসছে। আমি তার উস্কানিতেতে নিরুপায় হয়ে গত ৩/৪দিন আগে ২য় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। সে প্রথম স্ত্রীকে রাখবে বলে জানালেও ১ম স্ত্রী সতীনের ঘরে সংসার করতে রাজি না হওয়ায় তাদের সংসার ভাঙ্গনের পথে। দুই সন্তানের ভবিষ্যত ও এক নারীর সংসার রক্ষায় এই ব্যাপারে এলাকার সচেতন মহলের এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী এতদিনের সুখের সংসার হঠাৎ ভাঙ্গনের পথে থাকায় চালক স্বামীর ব্যাপারে নানা ধরনের মন্তব্য করতে শুনা যায়।

Comment here