আন্তর্জাতিকজাতীয়টেকনাফ

টেকনাফ চৌধুরী পাড়ার মৌলভী জহির সহ ৬ জন ঢাকায় গ্রেফতার : ২ লাখ ৭ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

yaba-1-20180816153340.jpg

টেকনাফ ভিশন ডেস্ক :
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই কখনও ডাবের ভেতরে করে, কখনও ফলের গাডিতে, কখনও বা বাসে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারে ইয়াবা আসার খবর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এবার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আড়ালে বাহক কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা আসার খবর দিলো র‌্যাব।

কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে একটি সিন্ডিকেট নির্ধারিত কিছু লোকের মাধ্যমে অভিজাত এলাকায় নেয়া ভাড়া বাসায় ইয়াবা মজুদ করে। এ ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীরা আকাশপথে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। পরিবারের সকলে মিলেই ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিলেন তারা। আর লেনদেন করতেন হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।

বুধবার রাজধানীর এ্যালিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে টেকনাফ এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী জহির আহমেদ ওরফে মৌলভি জহিরসহ (৬০) এ সিন্ডিকেটের ছয়জনকে আটক করেছে র‌্যাব-২।

আটককৃত অন্যরা হলেন- মমিনুল আলম (৩০), ফয়সাল আহম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১), তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১) ও সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৭ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির ৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, এ্যালিফ্যান্ট রোডের একটি বিলাসবহুল বাসার নিচ থেকে ফয়সাল, মিরাজ, সানি ও সঞ্জয়কে ৩৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে জহির ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মমিনুলকে আটক করা হয়। ওই বাসা এবং তাদের তথ্য দেয়া অপর একটি বাসা থেকে বাকি ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, জহিরের পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জহির ও তার বড় ছেলে বাবু (২৮) বিগত ৫-৬ বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

গত এপ্রিলে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে বাবুকে গ্রেফতার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ ছাড়া জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আব্দুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিনসহ টেকনাফের আরও কয়েকজন মোট ২০-৩০ জন এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, এ সিন্ডিকেটে বার্মাইয়া আলম নামে একজনের তথ্য পেয়েছি। যে রাখাইনে বসবাস করছেন এবং টেকনাফেও তার একটি বাড়ি রয়েছে। মূলত তার মাধ্যমেই নৌপথে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের বিভিন্ন ল্যান্ডিং স্টেশনে ইয়াবাগুলো আনা হতো। আর মমিন ও আমিন সেসব ইয়াবাগুলো রিসিভ করতেন।

মুফতি মাহমুদ বলেন, টেকনাফ থেকে ফ্যান, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ভেতরে ইয়াবা লুকিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠায় এ সিন্ডিকেট সদস্যরা। কুরিয়ারে ঝুঁকি থাকলে নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভার ও সহকারীদের মাধ্যমেও ইয়াবার চালান পাঠাতেন তারা।

নির্ধারিত বাস স্টেশন বা কুরিয়ার থেকে মমিন ও আমিন ইয়াবা সংগ্রহ করে জহিরের ভাড়া বাসায় পৌঁছে দিতেন। জহির ঢাকার ৫ ব্যবসায়ীকে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করতেন বলেও জানা গেছে। ইয়াবা বিক্রির অর্থ ইলেকট্রনিক্স মানি ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং ও হুন্ডির মাধ্যমে টেকনাফে পাঠানো হতো।

জহিরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, বিগত ১০-১৫ বছর আগে রোজিনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিএন্ডএফ ব্যবসা চালু করেন জহির। তখন সাইফুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। টেকনাফ এলাকার ইয়াবা ব্যবসার সব যোগাযোগ রক্ষা করতেন জহিরের স্ত্রী।

আমিন ও নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলেও জানান তিনি। ফয়সাল আহাম্মেদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত, নিশান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র, সানি একটি কলেজে ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং সঞ্জয় পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তারা সবাই ইয়াবাসেবী থেকে ক্রমান্বয়ে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে যায়।

Comment here