টেকনাফ

থামছে না কান্না স্ত্রী-মা’র : চৌদ্দ মাসেও ফিরেনি উপজেলা চেয়ারম্যান পুত্র মোস্তাক

teknaf-pic-2
টেকনাফ ভিশন ডেস্ক :
চৌদ্দ মাসেও ফিরেনি টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান যুবলীগ পুত্র মোস্তাক। ঘরে ফিরে আসবে এমন আশায় বুক বেধেঁ ঘুমড়ে কাদঁছে নব বিবাহিত স্ত্রী শিমু ও একমাত্র সন্তানের মা আমেনা বেগম। বছর পেরিয়ে গেলেও থামছে না কান্না তাদের। ২০১৫ সালের ১১ আগষ্ট রাতে নিজ ঘরের সামনে থেকে অপহরনের শিকার হয় সে।
অপহরণের পর থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে বহু চেষ্টা তদবির করা হলেও ঘরে ফিরতে পারেনি মোস্তাক। হয়নি অপহরণ রহস্যের কূল কিনারাও । এমনকি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। ফলে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে পরিবার। পরিবারে বিরাজ করছে গভীর হতাশা ও শূন্যতা। এখনও ফিরে পাওয়ার প্রখর গুনছে মা-বাবা, স্ত্রী, ভাই বোনসহ আত্মীয় স্বজনরা।
জানা যায়, গত বছরের ১১ আগস্ট রাত সাড়ে ৭টার দিকে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বড় ছেলে ও উপজেলা যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহমদকে পৌরসভার পল্লান পাড়া এলাকার নিজ বাড়ির সামনে থেকে দুইটি হাইয়েস মাইক্রো বাসে করে করে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা। মোস্তাককে অপহরণের পর মাইক্রোবাস দুইটি কক্সবাজারের দিকে রওয়ানা হয়। ঘটনার সাথে সাথে জাফর আহমদের কর্মী সমর্থকরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। মোস্তাককে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার দাবিতে তখন মানব বন্ধন ও সমাবেশও বেশ কয়েকবার হয়। কিন্তু পরে সে আন্দোলন যেন থমকেও যায় আবার। এর পর যেন সবখানে নীরবতা।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মোস্তাকের মা আমেনা খাতুন। ঘটনার পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে নির্জীব হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান স্ত্রী জয়নব রাজিয়া শিমু। স্বামীকে হারিয়ে শিমু এখন পাগল প্রায়, কান্না আর থামছে বছর ধরে কিন্তু স্বামী তার ফিরে আসে না।
পরিবার সহ এলাকাবাসীর প্রশ্ন এমন কি অপরাধ ছিল মোস্তাকের। যে কারণে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হলেন তিনি। মোস্তাকের মা আমেনা খাতুন জানান, ছেলে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন, উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়ে মাঠে চষে বেড়িয়েছেন। এ নিয়েও ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে তার আশংকা। তিনি এখনো আশাবাদী একমাত্র সন্তান তার বুকের ধন ফিরে আসবে।

অপরদিকে ঘটনার একদিন পর মোস্তাকের পিতা জাফর আহমদ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় এসংক্রান্ত মামলা (নং-২০) দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন টেকনাফ থানা পুলিশ তদন্ত করার পর স¤প্রতি পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কক্সবাজার অফিসের উপ-পরিদর্শক সাকের আহমদ মামলার অগ্রগতি প্রসংগে বলেন, মামলাটি হাতে পাওয়ার পর তিনি তদন্ত শুরু করেছেন তবে এখনো কোন ক্লু বের করতে পারেননি। রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তিনি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। এছাড়া ঘটনার দিন টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে অবস্থিত বিজিবির চেকপোস্টে ঘটনার দিন চলাচলকারী যানবাহনের ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। তবে এখনো এর ফল পাওয়া যায়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তা ।
মোস্তাকের পিতা উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ জানান, ছেলেকে ফিরে পেতে এক বছর যাবৎ সম্ভাব্য সব জায়গায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরে যোগাযোগ করেছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি। মামলারও কোন অগ্রগতি নেই। ছেলেকে ফিরে পেতে এখন শেষ ভরসা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

Comment here