টেকনাফরোহিঙ্গা সমাচার

থামছে না রোহিঙ্গা ¯্রােত : প্রসব বেদনা নিয়ে ভেলায় এসেছে স্বামী হারা জায়নুব

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার :
মিয়ানমার থেকে নৌ পথে প্রতিদিন পালিয়ে আসছে দলে দলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। থামছে না অনুপ্রবেশ। বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো রোহিঙ্গা। ২০ নভেম্বর সোমবার ভোরে টেকনাফের নয়া পাড়া দিয়ে ২ টি নৌকায় এসেছে ১৩ টি পরিবার। এ ছাড়া সকাল ১০ টার দিকে জারিকেন ও বাশঁ দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরী ভেলা যোগে নয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে ৮০ জন রোহিঙ্গা। যাদের মধ্যে ২৫ জন নারী, ২৩ জন পুরুষ এবং ৩২ শিশু রয়েছে। টেকনাফ থানার এসআই আশরাফ উজ্জামান জানিয়েছেন, সকাল থেকে শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে আসা ২৬ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো প্রক্রিয়া হয়েছে। এছাড়া ভোর রাতে ট্রলার যোগে পশ্চিম বঙ্গোপসাগর হয়ে আসা দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু এপারে ঢুকে টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয়। পরে থানা পুলিশ তাঁদেরকে সেনা ক্যাম্পে প্রেরণ করেছে।
নয়াপাড়া বিজিবি সুত্রে জানা গেছে, সোমবার ভোরে সীমান্তের বেড়ী বাধেঁ পাওয়া যায় প্রায় ৭০ জনের মতো রোহিঙ্গা । যারা কি না ওপাড় থেকে ডিংগি নৌকা যোগে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এ ছাড়া সকাল ১০ টার দিকে নাফ নদ দিয়ে একটি ভেলায় ভেসে ৮০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে এপারে ঢুকেছে। টেকনাফ ২ ব্যাটলিয়ান অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, মিয়ানমার হতে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের সকলকে উদ্ধার করে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যব¯’া নেওয়া হবেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এদিকে মিয়ানমারের বুচিডং গোদাম পাড়া হতে পালিয়ে আসা ৬৭ বছরের বৃদ্ধ রোহিঙ্গা মো: হাসান জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের অমানবিক অত্যাচারের মধ্যে খাদ্য ও কাজ কর্ম না থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করতে হয়েছে। তাই তারা এপারে চলে এসেছেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বুচিডং পেরুল্লা, গোদাম পাড়া, পুইমালী, বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এসব এলাকার দিয়ে এক সাথে ৪ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা বের হয়েছিল। ২ থেকে ৩ শত রোহিঙ্গা আসতে পারলেও বাকিরা ধং খালী , গর্জনদিয়া ও নাইক্ষ্যংদিয়া চরে এপারে আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। বুছিডং থানার পেরুল্লা গ্রামের সত্তোর্ধ বৃদ্ধা ধৌলত খাতুন জানান, দেড় মাস পূর্বে পরিবারের অন্যান্য সদস্য এদেশে আশ্রয়ে আসলেও এক ছেলে ও এক নাতিসহ সে মিয়ানমারে রয়ে যায়। বৃদ্ধকালে নিজ জম্মভূমি ছেড়ে চলে আসতে না চাইলেও খাদ্য, চিকিৎসা ও কর্মের সংকট প্রকট হওয়ায় এপারে আসতে বাধ্য হয়েছে বলেও জানান তিনি। গত ১৫ দিন আগে ঘর থেকে বের হলেও এপার থেকে নৌকা না যাওয়ায় রাখাইন সীমান্তের গর্জন দিয়া চরে অপেক্ষায় থাকি।
একই থানার ইয়ংসং গ্রামের আমিনা খাতুন (৩৫) জানান, পরিবারের ৭ জন সদস্য নিয়ে এপারে আশ্রয়ে আসার জন্য ৭ দিন ধরে গর্জনদিয়া চরে অপেক্ষায় থাকেন। সেখানে আরো ৫/৬ হাজার মতো রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে আছে। সেখানে সেনারা তালিকা তৈরী করছে। গ্রামে রাত দিন সেনাদের ভয়ে রাখাইনে বসবাস মুশকিল হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন আগেও পাশের বাড়ীর লালুর মেয়ে মোস্তাকিমকে সেনারা তুলে নিয়ে যায়। এখনো তার কোন খবর নেই।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে আগুন ও নির্যাতনের বর্ণনা শুনা না গেলেও এখন খাদ্য, চিকিৎসা ও অঘোষিত অবরোধের একই কাহিনী সবার মুখে মুখে ।

প্রসব বেদনা নিয়ে ভেলায় এসেছে স্বামী হারা জায়নুব
সন্তান সম্ভবা জায়নুব। এক সদ্য বিধাব নারী। মিয়ানমারের বুচিডং গোদাম পাড়ায় তাদের নিবাস। গেলো এক বছরের কম সময়ে বিয়ে হয় একই গ্রামের নজিম উদ্দিনের সাথে। ২৫ আগষ্ট থেকে স্বামী হারা জায়নুব। ৯ মাসের সন্তান সম্ভবা। যে কোন সময় সন্তান জন্ম নেবে তার কোলে। কিš‘ কী জবাব দেবে তার সন্তানকে ? যখন বড় হবে তার সন্তান। জায়নুব জানান, ২৫ আগষ্ট তার স্বামী সকাওে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি ঘরে। শুধু খবর পেয়েছে মগেরা তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। দেখেনি স্বামীর লাশ। শুধু মৃত স্বামীর উত্তারাধিকার নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরেছে। স্বামী হারার বেদনা নিয়ে পথে পথে হেটেছে। প্রাণ বাচাঁনোর তাগিদে। নদী পাহাড় পেরিয়েছে। কাদাঁর সময় পান নি। স্বামীর জানাযা বা দাফন কোথায় হয়েছে তাও দেখার বা জানান সুযোগ হয়নি। মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর তান্ডবে বাড়ী ঘর আগুনে জ্বলেছে। স্বামীকে হারিয়ে পাগলেরর মত পরিবারের অপর সদস্য মা-বাবা, ভাই বোনের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ধংখালী এলাকায় গত দুই দিন কাঠিয়েছে। এরপর সোমবার সকালে ভোরে করে নাফ নদী পেরিয়ে নয়া পাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে যেন শান্তির স্বাদ নিয়েছে। সন্তান সম্ভবা হওয়ায় পিতা আব্দুল নাসের তাকে কাধেঁ , কোলে নিয়ে বা কোথাও হাতে ধরে ধরে অনেক কষ্টে এখানে নিয়ে এসেছে। তাদের পরিবারের আরো রয়েছে ছোট বোন দিল আয়াছ, ভাই হামিদ নূও ও মা জরিনা খাতুন। জায়নুবেরর বাবা আব্দুল নাসের বলেন, ওখানে আমাদের থাকা খাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা ছিলো না। কিš‘ ২৫ আগষ্ট বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মেয়ের স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরপরও ভেবেছিলাম আর অত্যাচার হবে না। কিš‘ সময় যতই গড়িয়ে যায় ততই নির্যাতন-অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এভাবে তো থাকা যায় না। ওখানে আমাদের পক্ষে কথা বলার বা প্রতিবাদ করার কেউ নেই। তাই নিরুপায় হয়ে শেষমেশ দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া গত্যন্তর ছিলো। এখানেও কি হবে জানিনা। তারপরও মুসলিম রাস্ট্র হিসেবে চলে এসেছে।

Comment here