টেকনাফদৃষ্টিপাত

দূনীর্তির প্রতিবাদে চাকুরী গেলো ফিল্ড অফিসারের : ‘সুশীলন’র কু-কীর্তি : টেকনাফে জাল সনদে ৬০ জনের চাকুরী !


টেকনাফ প্রতিনিধি :
নিয়োগ বানিজ্য, জাল সনদে চাকুরী প্রদান ও অনিয়ম-দূনীর্তির প্রতিবাদ করায় চাকুরী হারালেন সুশীলন নামের একটি কেসরকারী সংস্থার ফিল্ড অফিসার সুষেন মন্ডল। তাকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সংস্থার প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা নুরুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি আদেশে চাকুরীচ্যুত করা হয়। তিনি ৫ বছর ধরে এই সংস্থায় নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি বলেন, “টেকনাফে সংস্থাটি কাজ পাওয়ার সুবাদে তাকে এখানে ফিল্ড অফিসার পদে পদায়ন করা হয়। সংস্থাটি এখানে কাজ শুরুর পর থেকে জাল সনদে কর্মী নিয়োগ, এ সুযোগে টুপাইস হাতিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ন-দূর্নীতি চালিয়ে আসছিলেন প্রজেক্ট কর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম। এতে আমি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করি। কিন্তু ওই সময়ে আমার কথা কেউ কর্ণপাত করেনি। বরং সুযোগ বুঝে অফিসের অপর একজন ফিন্ড অফিসারকে কৌশলে ম্যানেজ করে মিথ্যা টুনকো অভিযোগে উল্টো আমাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। ” তিনি এর প্রতিকার চেয়ে টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদেও কাছে লিখিত আবেদন করবেন বলে জানান। এদিকে এ প্রকল্পের ফোকাল সচ্চিদানন্দ বিশ্বাসের ৩০ আগস্ট স্বাক্ষরিত কারণ দর্শাও পত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুলাই থেকে কক্সবাজার শহরের হোটেল মিশুক’এ প্রকল্পের ‘উদ্যেক্তা উন্নয়ন’ ২য় ব্যাচের প্রশিক্ষণ চলছিলো। এ সময় ফিল্ড অফিসার সুষেন মন্ডল, সালমা সুলতানাসহ আরো বেশ কয়েক জনের ১ ম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়। সালমা সুলতানার অপর দুই রুমমেট হাসনা হেনা ও বিথীকা রানী ২য় ব্যাচের প্রশিক্ষনে থাকা কালীন সালমা সোলতানার রুমের দরজায় নক করেছেন। এবং ফোনে কল দিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছিলেন সুষেন মন্ডল। এর জন্য ২ সেপ্টেমরের মধ্যে ব্যাখ্যাও চেয়েছেন পত্রে। এর পরিপেক্ষিতে সুষেন মন্ডল ১ সেপ্টেম্বর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করেছেন, ১৩ জুলাই শুক্রবার বিকেলে সুষেন মন্ডল, সালমা সুলতানা, ফিল্ড অফিসার দেবব্রত রায় ও তার স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন সৈকতে একটু ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা আটেন। সে অনুযায়ী সময় হলে সালমা সোলতানাকে মোবাইলে কল দেওয়া হয় বেশ কয়েক বার। পরে মোবাইলে পাওয়া না যাওয়ায় রুমে নক করা হয়েছিলো ঘুরতে যাওয়ার জন্য। অবশ্য পরে ঠিকই সবাই ঘুতে যায়, বিকাল ৪ টা হতে সাড়ে ৪ পর্যন্ত আধ ঘন্টা কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমনের পর সকলে টেকনাফ চলে আসে। এখানে খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। এরপরও এ ধরনের অভিযোগে লজ্জিত ও অনিচ্ছাকৃত ক্রটির জন্য ক্ষমা প্রার্থী বলে জবাব দেওয়ার পরও ক্ষমা পায় নি সুষেন মন্ডল। ১৫ সেপ্টেম্বর এক আদেশে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। এ প্রসংগে সুষেন মন্ডল বলেন, অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিবাদ করার আক্রোসে কৌশলে আমাকে একটি মিথ্যা অভিযোগে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। এতে অপর একজন সংস্থার ফিল্ড অফিসারকে ব্যবহার করা হয়েছে চাকুরীচ্যুত করার ভয় দেখিয়ে। এ ছাড়া যারা আমার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সত্য সাক্ষি দেবে তাদেরও চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সুষেন মন্ডল। এ বিষয়ে সালমা সোলতানা বলেন, এ ধরনের কারো সাথে কোন ধরনের ঘটনা তার সাথে ঘটেনি। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও জানান। প্রকল্প সমন্বয়কারী নুরুল ইসলাম জানান, বিষযটি সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলার এক্তিয়ার রাখেন না। তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। জাল সনদে চাকুরীর বিষয়ে তিনি বলেন, আপনার এলাকার লোকজনই চাকুরী করছে জাল সনদে। চাকুরী গেলে তাদেরই যাবে। এখন আমার করার কি আছে উল্টো জানতে চান এ প্রতিবেদক থেকে।
জাল সনদে ৬০ জনের চাকুরী !
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)’র অর্থায়নে পরিচালিত হতদরিদ্র পরিবারের দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান বৃদ্ধির চাহিদা মেটাতে বাস্তবায়িত সাতক্ষীরা জেলার পটুয়াখালীর দশমিনার ‘সুশীলন’ নামের এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে টেকনাফ উপজেলায় কাজের শুরুতেই নারী চাকুরী প্রার্থীদের যৌন হয়রানিসহ অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। পাশাপাশি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অগ্রানাইজার (সিডিও) পদে ৬০ জনকে ভূয়া ও জাল সনদ দিয়ে নিয়োগ, তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ, হতদরিদ্র উপকারভোগীদের নাম কর্তন করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে নাম অন্তর্ভুক্তি ও নিয়োগপত্রের মূলকপি না দেওয়া, স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে (ইএফএসএন) প্রকল্পের প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম ও এডমিন সঞ্জয়’র বিরুদ্ধে। এছাড়া স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগত লোকজন এনে কাজ পরিচালনা, যৌন প্রস্তাবে রাজি না হলে চাকুরিতে নিয়োগ না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সংস্থারটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
জানা যায় , রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশ স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এই এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তারা লোভে বশিভুত হয়ে মোটা অংকের বিনিময়ে উত্তরবঙ্গের ভাই-বোন থেকে শুরু করে শালক শালিকা ও আত্মীয় স্বজন এনে জাল সনদ দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ টেকনাফের শিক্ষিত যোগ্যরা চাকুরী প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি স্থানীয়দের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির ঘাটতি পূরণে জরিপ চালিয়ে পুরো উপজেলার উপকারভোগী চিহ্নিত করেন এবং সুশীলন নামে এনজিওকে কাজটি দেন। কিন্তু তারা বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম করে কাজটি পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে এ সংস্থায় সিডিও পদে যারা কর্মরত আছেন তারমধ্যে ৬০জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পারেনি। তারাই এখানে জাল সনদ দিয়ে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অগ্রানাইজার (সিডিও) পদে নিয়োগ পেয়েছেন শাহপরীরদ্বীপের বাজারপাড়া হাসিনা, ডেইলপাড়ার রাজিদা, সাবরাংয়ের ফাতেমা, সাবরাংয়ের নুর কায়দা, অলিয়াবাদের নুর নাহার ও শামছুর নাহার, ডেইলপাড়া শোভা রানী, লম্বরীর তসলিমা আক্তার, পুরাতন পল্লান পাড়ার গোলাপ জান , রাজারছড়ার সাদিয়া, কচুবনিয়ার আরিফা, রোজিনা, নুর বেগম, ইয়াছমিন, কামরুন নাহার, ছলেমা, আমিনা, মর্জিনা, রোজিনাসহ ১২০জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ জন জাল ও ভূয়া সনদ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
শাহপরীরদ্বীপ থেকে চাকরি নিতে আসা সনজিদা বেগম নামে নারী প্রার্থী বলেন, ১২০জন সিডিও পদে চাকরি নিল, তার মধ্যে প্রায় ৬০ জনের জাল এবং ভূয়া সনদ এটা আমি চ্যলেঞ্জ করছি, তারা সুশীলন কর্মকর্তাদেরকে টাকা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছে। আমাকে অন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি তাতে রাজি হয়নি। তাই আমাদের চাকুরী হয়নি। ২য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েনি এমন কয়েক জনও চাকুরী পেয়েছে। এমনকি কোন কোন কর্মকর্তারা জাল সনদ তৈরীর জন্য শিখিয়ে দিয়েছে।
হ্নীলার দেলোয়ার হোসেন নামে এক শিক্ষিত যুবক অভিযোগ করে বলেন, দেশী- বিদেশী এনজিও সংস্থা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে রংপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, নাটোর, খুলনা ও রাজশাহী থেকে লোক এনে চাকরি দিচ্ছে এবং সুশীলন এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা নিয়োগ বানিজ্য করছে। টাকার বিনিময়ে চাকুরী দেওয়া হয়। যারা টাকা দিতে পারে তাদেরই কেবল চাকুরী হয়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো: রবিউল হাসান সাংবাদিকদের জানান জানায়, বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

Comment here