এক্সক্লুসিভজাতীয়সারাদেশ

দেশ থেকে ইয়াবা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশ-বিদেশে আলোচিত মরন ব্যাধী একটি ট্যাবলেটের নাম ইয়াবা। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ থেকে ইয়াবা এখন যাচ্ছে সুদূর মধ্যপ্রাচ্য সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যাত্রী বেশে লার্গেজ ও উপহার সামগ্রী বহনের নামে বড় বড় মালামালের গাইটে বিশেষ কৌশলে প্যাকেটজাত করে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার ইয়াবা।
টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ চট্রগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও বান্দরবান এলাকাসহ দেশের প্রায় উপকুলীয় এলাকার পেশাদার ইয়াবা ব্যরবসায়ীরা সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন আরো বেশ কয়েক বছর আগে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে। ইয়াবা বহন করতে তাদের নিজস্ব লোক রয়েছে। তারা নিজের আত্বীয় স্বজন ও ঘনিষ্টদের ভিজিট ভিসা ওমরাহ পালন করার নামে ইয়াবার চালান পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা বর্তমানে সাবরাং চান্দলী পাড়া এলাকার রশিদ আহমদ বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে ইয়াবা পাচার করলেও কখনো ধরা পড়েনি। সে ওই এলাকার বশির আহমদের পুত্র। রশিদ আহমদ প্রায় সময় সৌদি আরব থেকে দেশে আসার নামে মোটা অংকের ইয়াবা নিয়ে যায়। গেল বছরের ২৩ ডিসেম্বর ও প্রায় ২০ হাজারের মত ইয়াবা সুকৌশলে সৌদি আরবে পাচার করে নিয়ে যায় বলে বিশ্বস্থ সুত্রে জানা যায়। ওই বছর আটক টেকনাফ ডেইল পাড়ার হাবিব উল্লাহ ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী। হাবিব উল্লাহর রয়েছে দেশে-বিদেশে বিশালাকারের শক্তিশালী ইয়াবা পাচারের সিন্ডিকেট। অনেকে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে। তার চালান বহন কারী অনেকে আটক হলেও রশিদ আহমদ তার চলচাতুরী ও নিত্য নতুন কৌশলী হওয়ায় কখনো আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়নি। এবার ২৩ ডিসেম্বর ও প্রায় ২০ হাজারের মত ইয়াবা পাচারের গোপন সংবাদ পেয়ে তাকে আটকে চেষ্টা করেও ভুল তথ্যের কারনে আটক করা সম্ভব হয়নি। তারা ইয়াবার সাংকেতিক নামকরণ করেছে ‘গরু’। ইয়াবা বহনকারীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া গরু নিয়ে কতটুক এসেছেন। গরু সীমান্ত পার হয়েছে কি না।
সম্প্রতি মধ্যাপ্রাচ্যে ইয়াবা পাচারের সময় বিমান বন্দরে ইয়াবাসহ হাতে নাতে অনেকে আটক হয়েছে। শাহ আমানত বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সরওয়ার-ই-জামান জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৮টায় এয়ার এরাবিয়া জি-৫২৭ ফ্লাইটযোগে শারজাহ হয়ে জেদ্দা যাওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মো. ইউনুস নামের এক ব্যক্তির। বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিনে ওই যাত্রীর ট্রলি ব্যাগে ইয়াবার উপস্থিতি ধরা পড়ে। পরে ওই ব্যাগ তল্লাশি করে ১০ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। বিশেষ কৌশলে ইয়াবা নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় গেল বছরের বুধবার (১৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১২৮ পিস ইয়াবাসহ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩০) কে আটক করা হয়েছিল। আটক হয় টেকনাফ সদরের ডেইল পাড়া এলাকার হাবিব উল্লাহ। হাবিব উল্লাহ ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে যাচ্ছিলেন সৌদি আরবে, সেও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়ার কথাছিল। এরমধ্যে নগরীর পূর্ব ষোলশহর মালিবাড়ি এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিক্তিতে হাবিব উল্লাহকে আটক করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। সময় হাবিবের সাথে চাচাতো ভাই মহিউদ্দিনও ছিল। পরে হাবিবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর খতিবের হাট সিদ্দিক মার্কেট এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে আবু মনছুর মিনারকে আটক করে পুলিশ।
হাবিব বলেন, টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামগামী একটি বাসে উঠেছিলেন তিনি। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা আবু মনছুর মিনারের সাথে তাকে দেখা করতে বলেছিলেন প্রবাসী ইয়াবা ব্যবসায়ী আলি আহমদ। মিনার তাকে বিমান বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। বারো হাজার ইয়াবা সৌদি আরবে পৌঁছাতে পারলে তাকে দুই লাখ টাকা দিতো আলি আহমদ ও নাজির। বিমানের টিকিটের টাকাও তারা দিয়েছেন।
আটক মহিউদ্দিনের দাবি, হাবিব সম্পর্কে তার চাচা হয়। সৌদি আরব চলে যাবেন তাই বিমানে তুলে দিতে সাথে এসেছিলেন।
সুত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিক্তিতে হাবিব নামে এক ব্যক্তি টেকনাফ থেকে সৌদি আরবে বেশ কিছু ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাবিব ও তার প্রতিবেশী মহিউদ্দিনকে পূর্ব ষোলশহর মালির বাড়ি এলাকার রিদম স্কয়ার কমিউনিটি সেন্টার এলাকা থেকে আটক করে আইনশৃংখলা বাহিনী। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খতিবের হাট এলাকা থেকে আবু মনছুর মিনারকে আটক করে। মিনারের মুঠোফোনে সৌদি আরবে ইয়াবা পাচার সংক্রান্ত বেশ কিছু কথাবার্তার অডিও রেকর্ড পেয়েছিল আইনশৃংখলা বাহিনী।
মনসুরের ঘনিষ্ট সুত্রে জানা যায়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন মনসুর। ২০০৭ সালে তিনিও সৌদি আরব ছিলেন। এর আগে দীর্ঘদিন দুবাই ছিলেন। সৌদি আরবে থাকাকালে টেকনাফের ডেইল পাড়ার বাসিন্দা আলি আহমদ ও সাবরাংয়ের বাসিন্দা নাজিরের সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ আসা যাওয়া করেছেন মনসুর। সর্বশেষ গেল বছরের আগস্ট মাসে তিনি দেশে আসেন।
ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত থাকার কথা জানিয়ে মনসুর পুলিশকে জানান, হাবিব উল্লাহ মূলত ইয়াবা বহন করেন। সৌদি আরবে আবহা শহরে বসবাসরত আলি আহমদ ও নাজিরের এ ধরনের আরো বেশ কয়েকজন ইয়াবা বহনকারী রয়েছে। নির্দিষ্ট অংকের টাকার বিনিময়ে তারা ইয়াবা বহনের কাজ করে থাকে। টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসা ব্যক্তিদের বিমান বন্দরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে থাকে মনসুর। একজন যাত্রী বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে পারলে এক লাখ পেয়ে থাকে মনসুর। হাবিবকে পৌঁছে দিতে পারলেও এক লাখ টাকা পেতেন। কার্বন পেপার মুড়িয়ে ইয়াবা নেয়া প্রসঙ্গে মনসুর বলেন, কার্বন পেপার স্ক্যানার মেশিনে কালো দেখায়। এতে লাগেজের ভেতরে ইয়াবার অবস্থান খুব একট বুঝা যায়না। অনেকে এভাবে দেশের বাইরে ইয়াবা পাচার করছে এমনটি দাবি করেন মনসুর।

সুত্র- কক্সবাজার-৭১

Comment here