টেকনাফপবিবেশ

নতুন রূপে ফিরবে শাহপরীর দ্বীপ

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ ভিশন ডটকম  /

নতুন রূপে ফিরবে শাহপরীর দ্বীপ

দেশের মূল স্থলভূখন্ডের সর্বদক্ষিণ সীমান্তের নাম শাহপরীর দ্বীপ। এটি বঙ্গোপসাগর হয়ে নাফনদে প্রবাহিত ‘বড় খাল’ দিয়ে আলাদা হলেও সড়ক ও জনপথের ব্রিজ  দ্বারা সংযুক্ত ছিলো।  কিন্তু সেই সড়ক বা ব্রিজ অস্তিত্ব নেই পাচঁ বছর ধরে। বিশেষ করে ভাঙন ধরে পশ্চিম পাড়া, মাঝের পাড়া, ডাংগর পাড়া, জাইল্লাপোতা, গোলা পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার বেশির ভাগ অংশ। ওই এলাকার হয়েক হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। এলাকা ছেড়ে এখন অনেকে আশ্রয় নিয়েছে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারের পাহাড়ি জায়গায়।

সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের জুন মাসে দ্বীপটির পশ্চিমাংশে ভাঙনের পাশাপাশি প্রবল স্রোতে বড় খালের ব্রিজ টি উপড়ে যায়, ভেঙে যায় সংযোগ সড়ক। এরপর থেকে এ রাস্তা ও ব্রিজ টি সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারস্থ নিবার্হী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া জানান, টাকা পড়ে রয়েছে, কিন্তু শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা বাঁধ না হওয়ায় এটি টেন্ডার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, এরইমধ্যে শাহপরীর দ্বীপ বেড়ীবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে।

তা দ্রুত বাস্তায়ন হলে সাথে সাথে রাস্তার কাজও শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের হারিয়াখালী পর্যন্ত দু লেনের সড়ক ও ব্রিজনির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

শাহপরীর দ্বীপ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এমএ হাসেম বলেন,  ৫ বছর আগে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম অংশে বেঁড়িবাধের সামান্য অংশ সাগরে ঢেউতে ভেঙে যায়।  ১৩ টি গ্রামের দ্বীপ এখন দাঁড়ায় ১০টি গ্রামে। এ সময়ে ভাঙনের কবলে হারিয়ে গেছে ৩টি গ্রাম। বাকি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ থাকে বর্ষাকালে পানিবন্দি থাকে। বর্ষাকালে এলাকার প্রায়  ৪০ হাজার মানুষ থাকেন আতঙ্কে।

তিনি আরো বলেন , শাহপরীর দ্বীপে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিল। এখন ওই সড়কটি জোয়ারের সময় দেখা যায় না।

শাহপরীর দ্বীপের অর্থনৈতিক গুরুত্ব  সম্পর্কে প্রবীন শিক্ষক মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন,  লবণ, চিংড়ি এবং সামুদ্রিক মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল শাহপরীর দ্বীপ। এখন এ দ্বীপে এখন  কোনো চিংড়ি ঘের নেই। লবণের মাঠ মানে তো সমুদ্র।

হাজী পাড়ার চিংড়ি চাষী আসাদ উল্লাহ জানান, ‘বেশ কয়েক একর জমিতে দক্ষিণ পাড়াতে শখ করে মাছের ঘের তৈরি করেছিলাম। কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্তু সামুদ্রিক ভাঙনের ঘেরও গেলো জমিও গেল।’ এখন এলাকা ছেড়ে শহরে গিয়ে অন্য পেশা শুরু করেছি।

সাবরাং ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন,  যে সড়কটি রয়েছে ওই সড়কটি যদি কয়েক ফুট  উঁচু করে সংস্কার করা হতো তবে তাদের ভোগান্তি কমতো। এখন জোয়ারের সময় ছোট্ট বোট, ডিঙ্গি নৌকায় টেকনাফের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। আর ভাটা মানে ৩ কিলোমিটার কাদা ও জরাজীর্ণ সড়কে পায়ে হাঁটার ভোগান্তি।

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, এ ভোগান্তি দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একনেকে পাশ হয়েছে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দ্বীপটি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। আগামী বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে দ্বীপটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৭ নং ওর্য়াডের মেম্বার নুরুল আমিন বলেন, সাগরের করাল গ্রাসে নিজের বাড়ী ঘর বিলীন হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। এখন অন্য স্থানে বাড়ী তৈরি করে আছি।  এভাবে দ্বীপটির প্রায় ১ হাজার পরিবার এলাকা ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বরাদ্দ হওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।

একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য নূর মোহাম্মদের সাথে । তিনি বলেন, জমি জমা, ব্যবসা সব সাগরের করাল গ্রাসে তলিয়ে গেছে। এখন টেকনাফের একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান নিয়েছি।

এদিকে সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা বাঁধ নিমার্ণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। ১৩ জানুয়ারী শুক্রবার বিকেল ৩ ট হতে ৪ টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে কয়েক হাজার এলাকাবাসী অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় সরকার ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প ‘একনেক’এ পাশ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ইতিমধ্যে ২০১১ সালের পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও দ্বীপটি রক্ষা করা যায়নি।

এবার যেহেতু ১০৬ কোটি টাকার বড় বাজেটের প্রকল্প তাই এটাতেও যদি দুর্নীতি হয় তাহলে আর শাহপরীর দ্বীপটি রক্ষা করা যাবে না। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় সেনা বা নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবধান ছাড়া টেকসই বেড়ি বাধঁ নির্মাণ  সম্ভব হবে না। তাই এলাকাবাসী সোচ্চার হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি কিভাবে বাস্তাবায়ন হবে সে ব্যাপারে এখনো নিদের্শনা পাওয়া যায়নি। তবে টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মিত হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়।

Comment here