আন্তর্জাতিকরোহিঙ্গা সমাচার

নাফনদ হতে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ ভিশন :img_20161206_111318
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর উত্তর সংলগ্ন নাফনদীতে ভাসমান অবস্থায় এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার লাশটির পরিচয় মিলেনি। এ উদ্ধার লাশটি রোহিঙ্গা নারীর লাশ হতে পারে বলে ধারনা করা হচেছ। গত সোমবার ভোরে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতন থেকে রেহায় পেতে ৩৫ জনের রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য আসার পথে নাফনদীর মিয়ানমার জলসীমায় ডুবে যায়। এতে অনেক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু নিখোঁজ বলে জানা গেছে। এ নৌকায় নিখোঁজদের মধ্যে নারী রোহিঙ্গার লাশ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থল বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সূত্রে জানান, ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দর সংলগ্ন উত্তর নাফনদীতে ভাসমান অবস্থায় এক নারীর লাশ দেখে পাশ্বের বিজিবি পোষ্টকে খবর দেয়। পরে নৌকা যোগে বিজিবির একটি টিম লাশের স্থানে এসে লাশটি নাফনদী থেকে উদ্ধার করে ক’লে তুলে থানা পুলিশকে খবর দেয়। তবে থানা পুলিশের একটি টিম লাশের স্থানে উপস্থিত হয়ে সনাক্তের চেষ্টা করেন। পরে লাশ উদ্ধার করে সুরুতহাল তৈরি পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরনের ব্যবস্থা করছেন বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, উদ্ধার নারী লাশের হাতে টস লাইটও রয়েছে। তবে লাশের পড়নে কাপড়-ছোপড় অক্ষত অবস্থায় আছেন। তবে রাতের আধারে পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় এপারে চলে আসতে গিয়ে এ পরিনতি হয়েছে বলে এমনটি তাদের ধারনা।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ ওসি আব্দুল মজিদ জানান, টেকনাফ বন্দর সংলগ্ন নাফনদী উপক’লে একটি লাশের খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। তবে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা বোঝাই ৪ নৌকা ফেরত
টেকনাফস্থ ২ বর্ডার র্গাড ব্যাটলিয়ান অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোঃ আবু জার আল জাহিদ জানান, গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে নাফনদীর শূণ্যরেখা অতিক্রম কালে রোহিঙ্গা বোঝায় ৪টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতি নৌকায় ১০/১২ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু ছিল বলে জানা গেছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারী রয়েছে। কড়া নজরদারীর ফলে আগের মত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা নেই। বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত ও উপক’লে আগের চেয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা না ঢুকতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বিজিবি একাধিক চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে বলে জানায়।
শুধুই রোহিঙ্গা নয় আসছে ইয়াবাও
সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা মূলকভাবে ঢুকে পড়ছে মাদক ট্যাবলেট ইয়াবা । গত অক্টোবর-নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বর মাসের হিসেব পর্যালোচনা করলেই তা স্পষ্টত দৃশমান হয়। বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড গত ১ নভেম্বর হতে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি বোট ও ১২ জন কারবারীসহ ১২ লাখ ৫৭ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করেছে। এর আগে গত ৩ মে হতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মাসে দু’টি বোট ও ১৯ জন কারবারীসহ ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিলো। সব মিলিয়ে যার আনুমানিক মূল্য দাড়ায় ১২৬ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ প্রসংগে কোষ্টগার্ড টেকনাফ ষ্টেশন কমান্ডার লে. মোহাম্মদ নাফিউর রহমান বলেন, সীমান্তে বিজিবি ও কোষ্ট গার্ড অবৈধ ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঢুকে সে জন্য সর্তক ও তৎপর রয়েছে। এরফলে গত অন্যান্য মাসের চেয়ে গত দু’মাসে ইয়াবা উদ্ধার উল্লেখযোগ্য হারে বেশী ধরা পড়ছে। বিজিবি সুত্রে জানা যায়, নভেম্বরে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৩৯ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৫৫ কোটি ১৪ লাখ ৭১ হাজা ৭’শ টাকা। এ সংক্রান্ত ৪২ টি মামলায় ২৮ জন পাচারকারীকে আটক করা হয় ।
এ ছাড়া গত জুলাই ও আগষ্ট দু’ মাসে বিজিবি টেকনাফে ১০৭ টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে ৯ লাখ ৫৩৯ পিস উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলায় ৬৪ জনকে আটক করে থানায় সোর্পদ করে বিজিবি।
অপর দিকে নভেম্বর মাসে নাফনদ থেকে রোহিঙ্গাদের ২’শ টি নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর সময়ের মধ্যে নাফনদের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসা এসব নৌকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এসব নৌকায় ২০০০ জন রোহিঙ্গা ছিলো বলে জানায় বিজিবি। যদিও বা অন্যান্য সময়ে মাসে শ’দুয়েক মিয়ানমার নাগরিক ধরা পরতো যারা কিনা ধান কাটা, চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে আসতো । যাদেরকে বিজিবি নাফনদের শূণ্য পয়েন্ট হতে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতো। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে ৩টি চৌকিতে হামলার ঘটনার পর প্রথম দিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চেষ্টা তেমনটি দেখা না গেলেও নভেম্বরের মাসে অনুপ্রবেশ চেষ্টা ছিলো ঊল্লেখযোগ্য। ২ বর্ডার র্গাড ব্যাটলিয়ন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ আবু জার আল জাহিদ বলেন , মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে বিজিবি টহল ও সদস্য সংখ্যা বেশী, স্থল নৌ পথে টহল জোরদার করায় ইয়াবা উদ্ধার অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশী ধরা পড়ছে। তিনি আরো জানান তারঁ দায়িত্বকালীন সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইয়াবা ধরা পড়েছে গত নভেম্বর মাসে।
বোটসহ ৪ পাচারকারী আটক:
সেন্টমার্টিন্সে পৃথক দুটি অভিযানে ৬ লাখ ইয়াবা জব্দ
সেন্টমার্টিন্সে পৃথক দুটি অভিযানে একটি বোটসহ ৬ লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে ৪ পাচারকারীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড । ৫ ডিসেম্বর সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টায় ও গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত পৌনেঁ ২ টার সময় এ দুটি অভিয়ান চালানো হয়। আটক চার পাচারকারী হচ্ছে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে বাবুল মিয়া (১৮), মোহাম্মদ সিরাজের ছেলে জমির আহমদ (৩৫), হোসেন আহমদের ছেলে ইদ্রিস (৩২) ও সলিম উল্লাহ’র ছেলে মোহাম্মদ জোবায়ের (১৮)।
কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন্স অফিস ইনর্চাজ লে. আতাউর রহমান জানান, সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের ছেড়াঁদিয়ার দু’নটিক্যাল মাইল পশ্চিম পার্শ্বে সোমবার রাতে কোস্ট গার্ড টহল টিম একটি বোটে তল্লাশি করে। এতে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে চার পাচারকারীসহ বোট ও ইয়াবা জব্দ করা হয়।
তিনি আরো কোস্টগার্ডের একটি টহল টিম মঙ্গলবার ভোররাত পৌঁনে ২ টার দিকে সেন্টমার্টিন্সের পশ্চিম বীচে ৩ জন লোককে হাটাহাটি করতে দেখে তাদের চ্যালেঞ্জ করে। এরা এ সময় কয়েকটি বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। পরে বস্তু গুলোতে সাড়ে ৫ লাখ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
কোস্টগার্ড টেকনাফ ষ্টেশন কমান্ডার লে. নাফিউর রহমান জানান, পৃথক অভিযানে ৬ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। উদ্ধার ইয়াবাসহ আটককৃতদের টেকনাফ মডেল থানায় সোর্পদ করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

Comment here