পর্যটন

নাফে গাংচিলের মোহনীয়তায় পর্যটররা বিমোহিত


জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, সেন্টমার্টিন্স থেকে ফিরে:

কবি ওয়াহিদ বিন সিরাজ লিখেছেন-
–গাংচিল দেখে বলেছিলে, আকাশ ছুঁতে ই”েছ হয়,
আমি তখন নাহয় ,
একজোড়া ডানার খোঁজে ছুটে গেছি পাখিদের অভয়নগর,
তাই বলে সহজেই ছেড়ে যাবে সমুদ্রকোলের জমানো আদর?
তুমি জেনেছো কি সেই জোড়া ডানার গল্প কোনদিন?
কত পাখির ঘর ভেঙ্গেছি নরভুকের মতন দয়াহীন।–
সেই ওয়াহিদ বিন সিরাজের কবিতায় অমর হয়ে থাকা গাংচিল দেখা যায় নাফনদে। কক্সবাজারের দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে টেকনাফে প্রবাহিত এই নাফ নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা দিলো গাংচিল। এই গাংচিল নিয়ে অনেকের অনেক আবেগ উ”ছ¡াস। টেকনাফের দমদমিয়া দিয়ে সামুদ্রিক পর্যটক জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন্স যাওয়ার পথে মিতালি হয় শত শত গাংচিলের সঙ্গে। সেখানে সৃষ্টি হয় পর্যটক আর গাংচিলের বন্ধন। যে বন্ধন মনে করিয়ে দেয় পুরানো বন্ধ্ত্বু। সেই সময়ের বন্ধনের আবেগকে। গত শনিবার এ প্রতিবেদক সেন্টমার্টিন্স ঘুরে দেখা যায় গাংচিলের বিমোহিত কলরব।
পর্যটকদের ছুড়ে দেওয়া চিপস বা বিস্কুটের টুকরো নাফের নীলাভ জলে পড়ার আগেই ছোঁ মেরে ঠোঁটে যেমন নিতে থাকে , তেমনি সাগরের পানির উপরিভাগের ছোট ভাসমান মাছও ঠোঁটের ফাঁদে ধরে বসে গাংচিলের দল। আর সেই সব দুর্লভ দৃশ্য ধরা পড়ে সেন্টমার্টিন্সগামী শত শত পর্যটকের চোখে। মহেশখালী হতে সেন্টমার্টিন্স বেড়াতে যাওয়া পর্যটক আমান উল্লাহ বলেন, দমদমিয়া জেটি হতে শাজপরীরদ্বীপ পয়েন্ট পর্যন্ত গাংচিলের তালে তালে ,কিছিরমিছির ডাকে নৌ ভ্রমনটা ছিলো দারুন। চট্টগ্রামের আনোয়ারা হতে আসা পর্যটক মাহাবুবর রহমান বলেন, গাংচিল গুলোর সাথে চিপস দিয়ে বেশ দারুণ মিতালী করেছি। যা সেন্টমার্টিন্স যাত্রায় নতুন সংযোজন।
গাংচিল দেখতে মাথা-বুক-পেট কালচে। শরীরে সাদা আর ছাই ছাই ছোপ। পিঠ ও লেজ সাদা। পা দুটি লালচে। ঠোঁটের রং অনেকটাই লালচে-হলদে। লেজ অনেকটা ফিঙে পাখির মতো বিভক্ত। ডানার লম্বা পালকগুলো কালচে ধূসর।
সেন্টমার্টিন্স ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, গাংচিল শীত মৌসুমে দেখা যায়। তবে কোথাও এদের বাসাবাড়ী দেখা যায়। শীত কমতে থাকলে এরা হারিয়ে যায়। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে এদের দেখা যায়।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মো: আলী জানান, দমদমিয়া জেটি গাটের নাফের পাড়ে ভোরে শত শত গাংচিল দেখে মন বিমোহিত হয়ে যায়। এরা পর্যটক জাহাজকে অনুসরণ করে অনেক দূর চলে গেলেও আবার দমদমিয়াতে ফিরে আসে। তবে শীতের পর এদের আর দেখা মেলেনা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফ থেকে নীলজলরাশী ঘেরা দ্বীপ (জিনজিরা ) সেন্টমার্টিন্সে যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। ভ্রমনের শুরুর সময় সঙ্গ দিয়ে মন ভুলিয়ে রাখবে এই গাংচিলেরা। এভাবে প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছি সময় ধরে গাংচিল মিতালী করবে পর্যটকেদের সাথে। বিশেষ করে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন্সে যাওয়া শিশুরা এসব শীতকালীন মৌসুমী পাখিদের কলকাকলীতে বিমোহিত থাকে। গাংচিলেন মোহনীয় বিভিন্ন ভংগীমা দেখে পর্যটকরা বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেন।
কেয়ারী সিন্দাবাদের ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, গাংচিল গুলো সেন্টমার্টিন্স যাওয়া পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা। বাংলাদেশে অনেক জায়গায় গাংচিল দেখতে পাওয়া যায় না। যা টেকনাফে সহজে দেখতে পাওয়া যায়। টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, টেকনাফের গাংচিল গুলো সাইবেরিয়ান অঞ্চলের মত। ওখানে বেশি ঠান্ডা পড়লে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেড়িয়ে টেকনাফে চলে আসে শীতের মৌসুমে।

Comment here