টেকনাফরোহিঙ্গা সমাচার

নুরুন্নবী ইন, শালমান শাহ আউট ! টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সশ্বস্ত্র আধিপত্য


বিশেষ প্রতিনিধি :

টেকনাফে শালবাগান, নয়াপাড়া ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে সংঘঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। এদের মধ্যে ক্যাম্পের দক্ষিনে জকির বাহিনী ও উত্তরে নুরুন্নবী বাহিনী আধিপত্য বিস্তার অব্যাহত রেখেছে। এদের মধ্যে চলছে ভাঙ্গাগড়ার খেলও। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির গুলো যেন সন্ত্রাসী ও ডাকাত তৈরীর কারখানা। ১৯৯১ সালে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ শরণার্থী মর্যাদায় অবস্থান করছে টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে। তখন থেকে এই দুই শিবিরকে ঘিরে গড়ে উঠে ডাকাতি-অপহরণ সহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের ঘটনায় প্রায় লক্ষাধিক আর
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে সেনা অভিযনের পর নতুন করে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা এপাড়ে চলে আসে। উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে সব মিলিয়ে অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। পুরোনো অপরাধীদের পাশাপাশি এসব শিবিরে গড়ে উঠে নতুন নতুন ডাকাত ও সন্ত্রাসী বাহিনী। গত কয়েকবছর ধরে রোহিঙ্গা শিবির ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আলোচিত নাম আব্দুল হাকিম, জকির, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আলম সহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী। এদের মধ্যে আনসার ক্যাম্প লুটের হোতা নুরুল আলম র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার পর আলোচনায় আসে নুর মোহাম্মদের নাম। এছাড়া টেকনাফের আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ডাকাত আব্দুল হাকিম এক আতংকের নাম। তবে ডাকাত জকির ও আব্দুল হাকিম এখনো অধরা। এইসব সন্ত্রাসী বাহিনী গুলোর রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র শস্ত্র। রোহিঙ্গা শিবিরের পাশের পাহাড় গুলোতে রয়েছে এদের আস্থাানা। সন্ধা নামলেই তারা পাহাড় থেকে নেমে এসে ক্যাম্প গুলোতে চালায় ত্রাসের রাজত্ব। শোনা যায় মুর্হুমুহ গুলির শব্দ। আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযানে গেলেই তারা পাহাড়ে আত্মগোপন করে। উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে রয়েছে তাদের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ। হেলিকপ্টার ও ড্রোন নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বেশ কয়েকদফা অভিযান চালালেও জকির অথবা হাকিম কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি এ পর্যন্ত। আবার এইসব সন্ত্রাসী বাহিনীর কোন সদস্যকে আইন শৃংখলা বাহিনী আটক করলেও অদৃশ্য ক্ষমতার বলে অল্পদিনেই তারা আইনের ফাঁক ফোকর গলে বেরিয়ে পড়ে পুনরায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে। সম্প্রতি টেকনাফের নয়াপাড়া-শালবাগান-লেদা ও জাদিমুড়া শিবিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরো বেশ কয়েকটি উঠতি সন্ত্রাসী বাহিনী। এদের মধ্যে নয়াপাড়া শিবির কেন্দ্রিক নুরুন্নবী, কামাল, সালমান শাহ, খায়রুন্নবী প্রকাশ হারিয়া, খালেক বাহিনী ইতিমধ্যে আতংক ছড়িয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে ও এর আশেপাশের এলাকায়। ইতিমধ্যে অনেকে তাদের হামলার শিকার হয়েছে। এদের হাতেও রয়েছে নানা অস্ত্র-শস্ত্র। স্বশস্ত্র গ্রুপ গুলো কথায় কথায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আবার সাধারন রোহিঙ্গাদের উপরও চড়াও হয় এরা কোন কারন ছাড়াই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারন রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দেও মতে এইসব উঠতি গ্রুপ গুলোকে এখনি আইনের আওতায় আনতে না পারলে একসময় এরাও জকির, হাকিম কিংবা নুরুল আলমের মতো বড় সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়ে আনসার ক্যাম্প লুটের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই এদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযানের দাবী তাদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নয়াপাড়া শিবিরের ই ব্লকের ৯৭২/১ নং শেডের শামসুল আলমের ছেলে আব্দু নবি, তার ভাই নুরুন্নবী ও খাইরুন্নবী, বি ব্লকের ১০৫২/২ নং শেডের সোনা মিয়ার ছেলে সালমান শাহ, এইচ ব্লকের ৮৭৬/৬ নং শেডের লাল মিয়ার ছেলে কামাল (আনসার ক্যাম্প লুটের হোতা র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নুরুল আলমের ভাই), সি ব্লকের ডি ব্লকের ৭৩৯/৪ নং শেডের মোগল আহমদেরর ছেলে মো. সাদেক, সি ব্লকের ৮২৬/৬ শেডের দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. শফি, এইচ ব্লকের ৫১৯/৪ শেডের ফারুকের ছেলে নুর হোসেন, ডি ব্লকের ৭৩৮/৫ শেডের লাল পুতিক্কার ছেলে মো. সাইফুল, সি ব্লকের ৮৩৩/১ শেডের ডা. নুর আলমের ছেলে ফয়েজ, ই ব্লকের ৯৪৯/২ শেডের হারুনের ছেলে আলম, তার ভাই মো. শাহ, ডি ব্লকের ৭২৩/১ শেডের মোস্তাক মাঝির ছেলে ফয়সাল, ভুলু ডাকাত সহ রয়েছে আরো বেশ কজন উঠতি সন্ত্রাসী।
নুরুন্নবী ইন, কালমান শাহ আউট!
এদের মধ্যে নুরুন্নবী গত এপ্রিল মাসে অস্ত্র-গুলিসহ উখিয়া থানা পুলিশের হাতে আরো কয়েকজন সন্ত্রাসীসহ আটক হলেও কয়েকদিন আগে জামিনে মুক্ত হয়ে ক্যাম্পে বিচরন করছে। নুরুন্নবী রোহিঙ্গ ক্যাম্পে ইন হওয়ার পরপরই বিভিন্ন বৈষয়িক কারনে শালমান শাহ’র সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে শালমান শাহ বেশ কয়েকজন অনুসারীসহ ক্যাম্প হতে আউট হয়েছে।সে পালিয়ে বার্মা বা ভারতে অন্যত্র অবস্থান করছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়। এরফলে নুরুন্নবী গ্রুপটি বেশ সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে উঠে। নুরুন্নবীরা ছয় ভাই । এর মধ্যে খায়রুন্নী হারিয়া গ্রুফ হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী । এরা মিয়ানমার হতে ইয়াবা এনে বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে ভারী অস্ত্র কিনছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধান সড়কে একটি বিশাল কাপড়ের দোকানেই ঘটে থাকে এদের সব লেনদেন।
এছাড়া এই গ্রুপের কামালের (নুরুল আলমের ভাই) রয়েছে হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা, আইন শৃংখলা বাহিনীর সোর্স হাসান হত্যা মামলার আসামী মো. আলম রয়েছে এই সন্ত্রাসী গ্রুপে। এছাড়া গ্রুপের অন্য অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। তারপরও রহস্যজনক কারনে তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারন রোহিঙ্গাদের। তারা কখনো ক্যাম্পে কখনো পাহাড়ে অবস্থান করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে গত গত ৮ সেপ্টেম্বর এ বাহিনীর হামলায় হামলায় আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী হন স্থানীয় মোছনী পাড়ার কাদের হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও মেয়ে কালা বানু। জানা গেছে সামান্য কথা কাটাকাটির ঘটনায় ভাইবোনকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।
১১ সেপ্টেম্বর হামলায় ছুরিকাহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে মো. আইয়ুব নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। তাকেও এলোপাতাড়ী ছুরিকাঘাত করে তারা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নয়াপাড়া ক্যাম্পের মোহাম্মদ আলমের দোকানে হামলা চালায় গ্রুপটি। তাকে না পেয়ে দোকানে কিরিচ দিয়ে এলোপাতাড়ী কুপায় তারা পরে ফাঁকা গুলি বর্ষন করে চলে যায়। বর্তমানে নয়াপাড়া-জাদিমুড়া-লেদা ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে ক্যাম্পের দক্ষিনে জকির ও উত্তরে নুরুন্নবী গ্রুপের আধিপত্য বিরাজমান রয়েছে। এসব গ্রুপের সাথে বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনীর কিছু কিছু সদস্যের সাথে গোপন আতাতঁ রয়েছে এমন কথাও সাধারন রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রচার রয়েছে।
এই ব্যাপারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৬ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন(এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. হেমায়ুতুল ইসলাম জানান, এপিবিএন রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্প গুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, মাদক সহ অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। যে কোন বাহিনী ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলে অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান

Comment here