ক্রাইমটেকনাফ

পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এলাকাবাসীর টেকনাফে স্কুল ছাত্র মুজিব উল্লাহ নিহতের ঘটনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক আসামী কারাগারে


টেকনাফের নয়া পাড়া নবী হোসাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মুজিব উল্লাহ (১৫) নিহতের ঘটনা নিয়ে চলছে পরস্পর বিরুধী আলোচনা সমালোচনা। গত ২২ জুন শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে স্কুল বাউন্ডরীতে পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে এক পর্যায়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে মাথায় আঘাত পায় সে। ঘটনাস্থল হতে আহতাবস্থায় মুজিব উল্লাহ পার্শ্ববর্তী বাড়িতে গেলে স্বজনরা প্রথমে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় । পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে রাত ২ টার সময় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করে। পরদিন শনিবার রাত ১০ টার সময় যানাজা শেষে তাকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ কবির আহম্মদকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় গত ২৪ জুন নিহতের পিতা মো: আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে ৫ জনকে জ্ঞাত ও ৮/১০জনকে অজ্ঞাত আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা রুজু করেন। মামলার আসামীরা হচেছন নয়াপাড়ার কবির আহম্মদের ছেলে জাহেদ উল্লাহ (২০), মৃত জালাল আহমদের ছেলে কবির আহম্মদ (৫২) ও তার ছেলে মো: সাদেক (২১) , মোক্তার আহমদের ছেলে নুরুন্নবী (২১) ও জাহেদ হোসেনের ছেলে মোস্তফা কামাল (২৩)।
তবে এখানে ঘটনার মূল আসামী জাহেদ উল্লাহ পিতা কবির আহম্মদকে আসামাী করা হয়নি । আসামী করা হয়েছে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসা অপর পঞ্চাশোর্ধ্ব অপর কবির আহম্মদকে। তাকে আটকও করে পুলিশ। এ নিয়ে চলছে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামীদের সাথে চলাচলের রাস্তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এর জের ধরে তারা বিভিন্ন সময় প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ নং আসামী নুরুন্নবী খেলাধুলার কথা বলে মুজিব উল্লাহকে ডেকে নিয়ে যায়। স্কুল বাউন্ডারির কাছে নিয়ে ১ নং আসামী জাহেদ উল্লাহ ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। অন্যান্যরা তাকে ধরে এলোপাতারি কিল ঘুষি মারে জখম করে। আহত অবস্থায় মুজিব উল্লাহ বাড়ীতে গিয়ে ঘটনা জানায় পিতসহ স্বজনদের। পরে আহত মুজিব উল্লাহ রক্তবমি করতে থাকলে পিতা আব্দুল্লাহ দ্রুত তাকে প্রথমে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে কক্সবাজাজ জেলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে কক্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করে। এ ঘটনায় পুলিশ ৫২ বছর বয়সের কবির আহম্মদ নামের একজন আসামীকে আটক কওে আদালতে সোর্পদ করে।
এদিকে কবির আহম্মদকে আসামী করা ও আটকের ঘটনা নিয়ে চলছে এলাকায় আলোচনা সমালোচনা। খোজঁ নিয়ে যানা যায়, ২০০৯ সালের জুন মাসে আটক কবির আহম্মদের মেয়ে পারভিন আক্তারকে অপহরন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত্র ঘটনা নিয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে মামলার বাদী আব্দুল্লাতার ছেলে ছলিম উল্লাহ, চাচতো ভাই হোছন আহামদের ছেলে ঈসমাইলের বিরুদ্ধে। এ দু পরিবারের সাথে চরম বিরোধ চলে আসছিলো, এ ছাড়া চলাচলের রাস্তা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। গত ১২ মার্চ সকাল ৯ টার সময় আব্দুল্লাহ গংরা হামলা চালিয়ে কবির আহম্মদের স্ত্রী রহিমা খাতুনকে রক্তাক্ত জখম করে। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে কবির আহম্মদ, মেয়ে পরভিন আক্তার, ছেলে মো: সাদেকও আহত হয়। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় ইউপ সদস্য ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ঘটনার সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরে এ ঘটনায় শালিস বৈঠকে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা আব্দুল্লাহ গং রা কবির আহম্মদে দিয়ে ৪ কড়া চলাচলের রাস্তা ক্রয় করে নিয়ে সরকার ২ কড়া খাস জমিসহ চলাচলের মোট ৬ কড়া জমি বুঝিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন কারনে সেটা আর হয়ে উঠেনি। এ নিয়েও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে।
টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি কাদের হোছাইন বলেন, শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার সময়ের ঘটনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যাক্তির ওখানে থাকার কথা নয়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে আসামী করা হয়েছে। তবে মুল আসামীকে আটক করা গেলে আসল রহস্য জানা যাবে।
নিহত মুজিব উল্লাহ’র পিতা আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তার স্কুল পড়–য়া ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে আটক কবির আহম্মদের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, কোথায় স্কুলের মাঠে সমবয়সী বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় কথা কাটাকাটির সুত্র ধরে এক জন পাথর ছুড়েঁ মেরেছে। সে ঘটনায় মুজিব উল্লাহ আহত হয়ে মারা যায়। ঘটনার সাথে তার স্বামী পঞ্চাশোর্ধ্ব কবির আহম্মদ সেখানে তাদের সাথে কেন উখানে থাকবে ? এ ছাড়া গত বছর ৪র্থ শ্রেণী থেকে নেমে যাওয়া ছেলে মো: সাদেকও ওখানে ছিলো না অথচ তাকেও আসামী করা হলো কেন ? আব্দুল্লাহ’র পরিবারের সাথে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলে আসলেও আমরা তাদের শিশু পুত্র মুজিব উল্লাহকে কোন ঘটনায় অভিযুক্ত করিনি। একটি নিছক বন্ধুদের অনাকাংখিত ঘটনা। এখানে শুধু মাত্র জমি দখলে নিতেই আমার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সুত্র মতে ঐদিন চার বন্ধু মিলে আড্ডায় বসে। এক পযার্য়ে জাহেদ উল্লাহ আড্ডা ভেঙ্গে চলে যেতে উদ্যোত হয়। এ নিয়ে মুজিব উল্লাহ’র সাথে জাহেদ উল্লাহ’র কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জাহেদ উল্লাহ একটি ইট নিয়ে মুজিব উল্লাহকে আঘাত করে। অন্যান্যরা তা থেকে তাদেও নিবৃত করে। সবাই যার যার মতো বাড়ীতে চলে যায়। বাড়ীতে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়া মুজিব উল্লাহ’র অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তখনই পিতাসহ অন্যন্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার মূল আসামী এখনো আটক হয়নি। তাই ঘটনার মূল রহস্যও উন্মোচন করা যায় নি।
এ ছাড়া কবির আহম্মদকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পর মোবাইলে একজন বার বার চলাচলের জমি ছেড়ে দেওয়া, এনিয়ে সমস্যা সৃষ্টি না করলে মামলায় আসামী করা হবে না। না হয় হত্যা মামলায় জড়িত করা হবে। এই মামলার মজা কি তা পরে বুঝবে ইত্যাতি বলে কয়েক বার থানা হাজতে কবির আহম্মেদ ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুনকে বুঝানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু এতে কবির আহম্মদ রাজি হয়নি তাই তাকে মামলায় জড়িত করা হয়েছে এমন দাবী করে স্ত্রী রহিমা খাতুন ৩ টি মোবাইল অডিও ক্লিপ গণমাধ্যমকর্মীদেও কাছে হস্তান্তর করেছে। এটি খতিয়ে দেখলেও এ ঘটনা রহস্য বা আসলে কারা জড়িত তা বের হয়ে আসবে এমন অভিমত স্থানীয়দের।
এ প্রসংগে টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: আতিক উল্লাহ বলেন, মামলার মূল আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন থাকায় বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।

Comment here