এক্সক্লুসিভটেকনাফপর্যটন

পর্যটক ডাকছে টেকনাফ

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ

পর্যটক ডাকছে টেকনাফ

টেকনাফ সমুদ্রসৈকত।

… বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র টেকনাফকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। ইয়াবার ‘বদনাম’ ঘুচাতে মনোরম পরিবেশে সাজানো পর্যটনকেন্দ্র হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশও …

 

সাম্প্রতিককালে ইয়াবা নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের ‘বদনাম’ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। অথচ এই উপজেলা দেশ-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের পর্যটনকেন্দ্র। সারাবছরই পর্যটকের আনাগোনা থাকে এখানে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে।

টেকনাফে রয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের উপন্যাসের আলোচিত প্রেমের কাহিনির মাথিন কূপ, কুদুম গুহা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধ্যানঘর, সমুদ্রসৈকত আর সৈকতে সারি সারি চাঁদ নৌকা, মনোরম পরিবেশে ন্যাচার পার্ক, জইল্যার দ্বীপ, নেটং পাহাড়, নাফ নদীর উপর নির্মিত মিয়ানমার-বাংলাদেশ ট্রানজিট জেটি এবং দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও উপকূলীয় গর্জনবাগান। এসব পর্যটনকেন্দ্র টেকনাফকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।

ইয়াবার ‘বদনাম’ ঘুচাতে মনোরম পরিবেশে সাজানো পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশও।

মাথিন কূপ : টেকনাফ শহরের প্রাণকেন্দ্র নাফ নদীর পাশে থানা কম্পাউন্ড চত্বরে রয়েছে মাথিনের কূপ।

এই কূপকে ঘিরে রচনা করা হয়েছে এক বেদনাবিধুর প্রেমকাহিনি। রাখাইন জমিদারকন্যা মাথিন আর এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রেম সময়কে জয় করে নিয়েছে প্রেমের বিরহ, অপেক্ষা আর প্রয়াণের কাব্যে।

ঐতিহাসিক প্রেমের এই দুই নর-নারীর আখ্যান আজও মনে নাড়া দিয়ে যায় সবাইকে। অমর প্রেমের সেই নিদর্শন এক নজরে দেখতে প্রেমিক যুগল ও পর্যটকরা ভিড় জমান।

কুদুম গুহা : টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের গেম রিজার্ভের রইক্ষ্যং এলাকায় কুদুমগুহার অবস্থান। কুদুমগুহাটির ভেতরে প্রচুর বাদুড়ের আশ্রয়স্থল। তাই এটিকে বাদুড়গুহাও বলা হয়। কুদুমগুহায় দুই প্রজাতির বাদুড় ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, মাকড়সা এবং যখন পানি ওঠে তখন জলচর জোঁকসহ নানা প্রাণীর দেখা মেলে। পর্যটকরা এখানে প্রাকৃতিক ঝরনায় গোসলের পাশাপাশি বাদুড়ের কিচির মিচির শব্দে আনন্দ উপভোগ করেন। এখানকার রোমাঞ্চকর পথ এবং গুহার ভেতরে প্রবেশ করার জন্য অবশ্যই গাইড বা বনবিভাগের প্রহরীর সাহায্য নিতে হয়।

ন্যাচার পার্ক : প্রায় এক হাজার হেক্টর আয়তনের টেকনাফের ন্যাচার পার্ক। পার্কটিকে ঘিরে টেকনাফের মানুষের স্বপ্ন অসীম। বিশাল বনভূমি ও প্রকৃতির সুনিপুণ সৌন্দর্য্যের সমারোহে পরিবেষ্টিত ন্যাচার পার্ক দেশ বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে এটি। এখানে বন গবেষণাগার, বিশ্রামাগার, টংঘর, কৃত্রিম পাখির ডাক সম্বলিত ডরমেটরি, বানর, হাতি, পাহাড়ি মোরগ, শুকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া সারি সারি জাম গাছ পর্যটকদের বিমোহিত করে তোলে। আর পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে মিয়ানমার ও নাফনদী অবলোকন করা যায়। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পাহারা দল ও গাইড।

টেকনাফ সৈকত : বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজারে। এটি মিশেছে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলায়। এখানকার সমুদ্রসৈকত দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সৈকতগুলোর একটি। এখানে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে।

সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে প্রেমিক যুগল, যুবক-যুবতিরা গোসল করে আনন্দে মেতে উঠেন।

এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে জেলেদের মাছ ধরার বর্ণিল সব ইঞ্জিন নৌকা। অনেকে এগুলোকে ‘চাঁদ নৌকা’ বলে অভিহিত করে। লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে জেলেরা তাঁদের নৌকাগুলো সাজিয়ে থাকেন। নৌকার গায়েও থাকে রংতুলির শৈল্পিক আঁচড়। যা পর্যটকদের ভীষণ আকৃষ্ট করে। এছাড়া সৈকতের পাশে একটু দূরেই আছে ঘন ঝাউবন। যা প্রেমিক যুগলের পছন্দনীয় স্থান।

প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন : আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার, তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল বৃক্ষের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু পবনের কোমল স্পর্শ-এটি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনার ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বালু, পাথর, প্রবাল কিংবা জীব বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য অনুপম অবকাশ কেন্দ্র সেন্টমার্টিন। স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ,

হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, প্রবাল বিশ্ব রহস্যের জীবন্ত পাঠশালায় পরিণত করেছে সেন্টমার্টিন ও তত্সংলগ্ন এলাকা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ।

টেকনাফ থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সাগরবক্ষের ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। সেন্টমার্টিনের অদূরে আরো একটি দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। যার নাম ছেড়া দ্বীপ।

টেকনাফ থেকে ট্রলারে লঞ্চে কিংবা জাহাজে যেতে লাগে দুই থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাঁদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। আরো রয়েছে গর্জন বাগান, শাহপরীর দ্বীপ জেটি, নেটং পাহাড়, বার্মিজ মাকেটসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র।

যেভাবে যাবেন : বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে বাসে চড়ে টেকনাফ। সেখান থেকে জিপ কিংবা মাইক্রোতে পর্যটনকেন্দ্র যাওয়া যায়। আর সেন্টমার্টিনে যেতে হলে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সি-ট্রাক, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ,

এলসিটি কুতুবদিয়াসহ ৭/৮টি জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্টমার্টিনে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে। ওই মৌসুম পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত সময় হলেও পুরো বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা রয়েছে। বছরের যেকোনো সময় নির্বিঘ্নে বেড়ানো যায় টেকনাফে।

Comment here