ক্রাইমটেকনাফ

পুলিশের ইয়াবা বিরুধী অভিযানে দু’ সহোদর আটকের জের : টেকনাফ সড়ক অবরোধ : পুলিশ-বিজিবির হস্তক্ষেপে জনদূর্ভোগের অবসান


টেকনাফ প্রতিনিধি:
টেকনাফে পুলিশের ইয়াবা বিরুধী অভিযানে দু’সহোদরকে আটকের জের ধরে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের খারাংখালী ষ্টেশনে ব্যবসায়ী ও বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ প্রধান সড়কে খুঁটি ফেলে ও টায়ার জালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাবন্ধ করে দেয়। এ সময় দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ার খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি ও বিজিবি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুলিশ বলছে এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করায় অন্যান্য সহযোগিরা তা থমকিয়ে দিতে এ ঘটনার অবতারনা করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলেছে এরা নীরিহ ব্যবসায়ী, তাদের বিরুদ্ধে এ যাবত এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই, পাশাপাশি এ ধরনের কোন মামলাও নেই। নিছক হয়রানী করে মোটা অংক হাতিয়ে নেওয়ার জন্য একটি দালাল চক্র পুলিশের ইয়াবা বিরুধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নীরিহ লোকজনের বাড়ীঘরে অভিযান পরিচালনা করতে উৎসাহিত করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,২ মে মঙ্গলবার ভোররাত ৩টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং খারাংখালীতে টেকনাফ মডেল থানার একদল পুলিশ পূর্ব মহেশখালীয়া পাড়ার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র বিকাশ দোকানদার আব্দুস সালাম (৪০) প্রকাশ ভূলুর বাড়ি ইয়াবা বিরোধী অভিযানে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১০লক্ষ টাকাসহ আটক করে। এরপর আটক ব্যক্তির বড় ভাই মুদি দোকানদার আবুল কাশেম প্রকাশ হাছিম সওদাগরের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে তাকেও আটক করে। আটকে এ খবরে সকাল থেকে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষুদ্ধ হয়ে খারাংখালী ষ্টেশনে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে,গাছপালা কেটে এবং টায়ার জালিয়ে প্রায় ৩ঘন্টাব্যাপী অবরোধ সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় আতংকে স্থানীয় ব্যবসায়ী দোকান-পাট বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে। পরে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপাধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী ও ওসি মাঈন উদ্দিন খাঁনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ-বিজিবি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ী,জনপ্রতিনিধি ও জনতার সাথে আলাপকালে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন পুলিশী অভিযানের বর্ণনা দেন। এ সময় আবুল কাশেমের বাড়ী হতে পুলিশ মহিলাদের ব্যবহৃত ৩ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪২হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে গৃহবধু হালিমা আক্তার দাবী করেন। তিনি আরো বলেন, কতিপয় সুবিধাভোগী সোর্স নামধারী দালালদের ইন্দনে থানা পুলিশের একটি দল বিকাশ ব্যবসায়ী ও মুদি দোকানদার সহোদরের বসত-বাড়িতে ইয়াবা বিরোধী অভিযানের নামে নগদ টাকা ও মহিলাদের ব্যবহৃত স্বর্ণালংকারসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদে খারাংখালী বাজারে বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ প্রধান সড়কে খুঁটি ফেলে ও টায়ার জালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাবন্ধ করে দেয়।
এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান এবং প্রধান সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি মাঈন উদ্দিন খান। তিনি আরো জানান, আটককৃত দু সহোদর মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। অভিযানে স্বর্ণালংকার পাওয়ার কথা সঠিক নয় দাবী করে ওসি মাঈন উদ্দিন খান নগদ প্রায় ৯ লাখ ৯৫ হাজার নগদ টাকা ও ইয়াবা পাচারের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলে জানান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহেদ হোছাইন বলেন,ঘটনার রাত থেকে আমি বাইরে রয়েছি। স্থানীয় লোকজন হতে জানতে পারি বিকাশ ও মুদি দোকানদারকে নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকারসহ আটক করে নিয়ে যায়। যার ফলে সকালে বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন,পুলিশ ও দালালদের যোগ-সাজশে দীর্ঘদিনের এই জাতীয় কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন আইন-শৃংখলা সভায় বার বার বলা হলেও কোন পদক্ষেপ না থাকায় এই জাতীয় ঘটনার সুত্রপাত। পুলিশ ইয়াবা বিরোধী অভিযানের নামে নিরীহ দুই ব্যবসায়ীদের আটকের জেরধরে জ্বালাও-পোড়াও এবং অবরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান,ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিকট থেকে সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় মৃত উলা মিয়ার পুত্র আব্দুর রহিম ও তার ভাই হাকিম উদ্দিন মিন্টুর যোগসাজশে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন অপরাধী ধরে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। আসল অপরাধীদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া এবং টাকা দিতে না পারলে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তাই মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। তাই সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ,জ্বালাও-পোড়াওর মত ঘটনার আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা ।
এ ছাড়া গত ২৯ এপ্রিল স্থানীয় মহেশখালীয়া পাড়ার বাছু মিয়ার পুত্র আমির হোছনকে পুলিশ আটক করে। পরে দালালের মধ্যস্থতায় সাড়ে ১০ লক্ষ টাকায় ছেড়ে দেন বলে আমির হোছন দাবী করেন। গত দুই সপ্তাহ আগে জাফর আলীর পুত্র ইসমাঈলকে আটক করে ৩লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। ৩সপ্তাহ আগে মৃত মীর কাশেমের পুত্র মোহাম্মদ আলমকে আটক করে ৩লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাই জানান।

Comment here