আন্তর্জাতিকজাতীয়সারাদেশ

বাংলাদেশে নারীদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, ইশরাতকে হিলারি ক্লিনটন

ডেস্ক নিউজ:
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সব দেশেই রাজনীতির সর্বস্তরে নারীদের জন্য আরো সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ফার্স্ট লেডি এবং দেশটির অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল (৮ মার্চ) ৩৭ টি দেশ থেকে আগত নারীদের নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস এর প্রথম ৩০/৫০ শীর্ষ সম্মেলনে হিলারি এমন মন্তব্য করেছেন বলে আয়োজক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

হিলারি ক্লিনটন নারীদের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। অনুষ্ঠানে লিঙ্গ সমতার লড়াইয়ে হিলারির কৃতিত্বকে স্মরণ করার জন্য ফোর্বস তাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস ডে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।

বাংলাদেশ থেকে সম্মেলনে অংশে নেওয়া সামাজিক সংগঠন ‘আমাল ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক ইশরাত করিম ইভ হিলারিকে প্রশ্ন করেন, “যে দেশে নারীদের রাজনীতিতে স্বাগত জানানো হয় না সে দেশে নারীদের রাজনীতি করা নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?”

জবাবে হিলারি বলেন, “আমি জানি যে, বাংলাদেশের নারীদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একটা ইতিহাস রয়েছে। তোমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। তবে, আমি মনে করি, রাজনীতির সর্বস্তরে মেয়েদের জন্য আরো সুযোগ থাকা উচিত। সেটা তোমাদের দেশেই বলো, আর অন্য যেকোন দেশের কথাই বলো, এটা অবশ্যই শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়।

তুমি যদি তোমার দেশের রাজনীতিতে আগ্রহী হও, আমি মনে করি এ সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। (রাজনৈতিক) ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও শিখতে এবং নিজে প্রার্থী হতে কী কী লাগে তার জন্য ইতিমধ্যেই যারা রাজনীতিতে আছেন তাদের অনুসরণ করতে পারো বা তাদের সাথে কাজ করতে পারো অথবা স্বেচ্ছাসেবকও হতে পারো। সরকারে কাজ করার সুযোগ থাকলে নীতিগুলো সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবে, যা তুমি সরকারে থেকে বা রাজনীতিতে থেকেও প্রচার করতে পারবে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে সেটা শেখা ভিন্ন অন্য কোন বাস্তব বিকল্প নেই। যারা প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর অবস্থানে রয়েছেন তাদের ওই ব্যবস্থায় নিজের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কিনা তা খুঁজে দেখো। আমি মনে করি যে, তোমাদের জন্য সুযোগ রয়েছে তবে তা যে সহজ নয় আমি সেটা ভালোমতোই জানি। তবে, আমি মনে করি, চেষ্টা করে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।”

হিলারিকে এমন প্রশ্ন করার কারণটা কী জানতে চাইলে আরব আমিরাত থেকে আমাল ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক ইশরাত করিম ইভ মানবজমিনকে বলেন, “এখানে অনেক দেশ থেকে অনেক মেয়েরা এসেছে। তাদের সাথে আমার রাজনীতি বিষয়ে, মেয়েদের সামাজিক অবস্থান, তাদের অধিকার ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা হয়। তখনই আমার মাথায় আসে যে, বিশ্বের অনেক দেশেই মেয়েদের রাজনীতিতে স্বাগত জানানো হয় না বা মেয়েদের রাজনীতিতে আসাটাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। তারা কিছু করতে চাইলেও তাদের জন্য পথটা অতোটা সুগম না। যাদের কোন পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই তাদের জন্য এটা অনেক সময় খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। শুধু বাংলাদেশে না, সব জায়গাতেই। আমি তাই উনাকে এই প্রশ্নটা করেছিলাম যেনো সম্মেলনে আগত অন্য যাদের মনেও এমন প্রশ্ন রয়েছে তারা যেনো এই উত্তরটা উনার কাছ থেকে পান।”

ইশরাতের কাছে জানতে চাওয়া হয় হিলারির মতো এমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বকে প্রশ্ন করার সময় কেমন লাগছিলো? ইশরাতের সহজ-স্বাভাবিক উত্তরঃ উনাকে প্রশ্ন করার সময় অবশ্যই আমার নার্ভাস লাগছিলো, এক্সাইটমেন্ট ছিল। সেই সাথে আমার অনেক ভালোও লাগছিলো কারণ পুরো সম্মেলনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন উনাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলো এবং তাদের মধ্যে আমিও একজন। আমাকে অনেক আগেই প্রশ্নটা করতে হয়েছিলো, তারপর ভেরিফিকেশনের ভেতর দিয়ে প্রশ্নটা নিয়েছে। তাছাড়া উনার যে পারসোনাল চিফ অফ স্টাফ হুমা (হুমা আবেদিন) তার সাথে সেখানে রাজনীতি বিষয়ে, মেয়েদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। সেখান থেকেও আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং আশা করছি ভবিষ্যতে তাদের সাথে আরো ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হবে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন ইশরাত। এই প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্যই ফোর্বস তাকে এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী ৩০ জনের তালিকায় সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

ওদিকে, আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন বছর নারীদের নিয়ে এমন শীর্ষ সম্মেলন আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে।

Comment here