আন্তর্জাতিক

বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে যুক্ত হলো ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া পাঁচ লাখেরও বেশি শরণার্থী বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে যুক্ত হয়েছে। গত ২০১৮ সালের জুন মাস হতে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) যৌথভাবে এ নিবন্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। নিবন্ধিতদের হাতে দেয়া হচ্ছে বায়োমেট্রিক পরিচয় পত্র। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে এটাই তাদের জীবনের প্রথম কোন পরিচয় পত্র প্রাপ্তির ঘটনা। জানা যায়, এই কার্ডটি বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত। যা কিনা নকল বা জাল করা সম্ভব নয়। ১২ বছরের অধিক বয়সী যাচাইকৃত সকল শরণার্থীকে এ কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। সর্বাঙ্গীণ নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থী সম্পর্কিত তথ্যেরও যথাযথ নিশ্চিত করে, যা জাতীয় কর্তৃপক্ষ ও মানবিক সংস্থা সমূহকে শরণার্থী জনগোষ্ঠী ও তাঁদের প্রয়োজন সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করবে। সঠিক তথ্যভান্ডার কর্মরত সংস্থাসমূহকে তাদের কর্মসূচি পরিকল্পনা করতে এবং নারী ও শিশু পরিচালিত পরিবার ও প্রতিবন্ধীসহ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষদের জন্য বিশেষ সহযোগিতা প্রদানে সক্ষম করবে।
নিবন্ধনের সময় সংগৃহীত বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে কঙবাজারের রোহিঙ্গা স্থাপনায় প্রথমবারের মতো গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন টুল (এউঞ) উদ্বোধন করেছে। আঙ্গুলের ছাপ অথবা চোখের মনি’র স্ক্যান যাচাই করার মাধ্যমে এ পদ্ধতি সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে। সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যাতে বাদ না পড়ে সেটির নিশ্চয়তা দেয়া হয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে । সামনের সপ্তাহগুলোতে এ পদ্ধতিকে আরও অন্যান্য স্থাপনায় প্রয়োগ করা হবে।
ইউএনএইচসিআর-বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, ‘এটি আমাদের নিবন্ধন কর্মকান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
এ কার্ডটি থাকায় নিবন্ধিত শরণার্থীরা আরও নিরাপদ বোধ করবেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে তাদের প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন। এই কার্ডে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, তাঁদের মূল দেশ মিয়ানমার। তারা যখন নিজের দেশে ফিরে যেতে চাইবে তখন এই কার্ডটি তাঁদের নিজের দেশে ফেরার অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে । ’
জানা যায়, কঙবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৯ লাখেরও বেশি শরনার্থী বসবাস করে এরমধ্যে ৭ লাখ ৪০ হাজার শরণার্থী ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
এনিবন্ধন প্রক্রিয়াটি ২০১৮ সালের জুন মাসে শুরু হয়। বর্তমানে শরণার্থীদের আবাসন এলাকায় স্থাপিত ৭ টি কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার শরণার্থীকে নিবন্ধন করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ তিন মাসের মধ্যে সকল শরনার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন করার লক্ষে সাড়ে ৫ শ’ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। শরণার্থী নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় তাঁদের মৌলিক তথ্যসহ, পারিবারিক সংযোগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করা হয়।
ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নিয়মিত শরনার্থীদের সাথে সাক্ষাত করেন। কমিউনিটিতে নিবার্চিত নেতা নেত্রী, ইমাম, বয়স্ক এবং শিক্ষকসহ তাঁদের নেতাদের সাথে সাক্ষাত করে নিবন্ধনের উপযোগিতা ব্যাখ্যাসহ এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেন। শরনার্থী স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত টিম মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে তাঁদেরকে নিবন্ধন করতে উৎসাহিত করেন।
ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো: আবুল কালাম বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা যৌথভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা রয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের এমন একটি অংশে বসবাস করছেন যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ অব্যাহত রেখেছে। জুলাই মাসের শেষ নাগাদ ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে কর্মরত সহযোগী সংস্থাগুলো মোট ৩১৮ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। যা ২০১৯ সালের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ৯২০ মিলিয়ন ডলারের এক তৃতীয়াংশের সামান্য বেশি।

Comment here