জাতীয়

বিজয়ের দিন আজ মহান বিজয় দিবস, আত্মগৌরবের ৫১ বছর

বিজয়ের দিন আজ
মহান বিজয় দিবস, আত্মগৌরবের ৫১ বছর
টেকনাফ ভিশন ডেস্ক :

দুর্জয় শপথে নতুনের বারতায় জেগে ওঠার দিন আজ; মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতি বিজড়িত এবং পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কেঁপে ওঠার দিন আজ। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের দিন। আজ আত্মগৌরবের ৫১ বছর পার হল। কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ স্মরণ করছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেই অকুতোভয় বীরদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে চিরভাস্বর হয়ে আছে বাঙালির রক্তে রাঙা ইতিহাস আর লাল-সবুজের পতাকা। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্মৃতির মিনারগুলো আজ ছেয়ে যাবে ফুলে ফুলে। যতদিন বাংলাদেশ নামক এ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন এ দিনটি পালন করা হবে এমনই হূদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে।

ভালোবাসা আর জীবন এ দুইয়ের মূল্য যেমন দেওয়া যায় না, তেমনি মূল্য দেওয়া যায় না পতাকার। ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা ও পতাকা অর্জন করেছি তার মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। সেই স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালির অবদান কয়েক শতকের। ১৭৫৭ সালে মীরজাফরের লোভ স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলিত করেছিল। সেখান থেকে মুক্ত করতে যে ত্যাগ আমাদের রয়েছে তার মহিমা বর্ণনার মহাকাব্য যুগে যুগে গ্রন্থিত করে গেছেন কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক এবং রাজনীতিবিদরা। সংগ্রামের সেই গর্ব আমাদের স্বাধীনতা।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি। সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড্ডীন রাখা হবে। ঘরে ঘরে উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

নয় মাসের ত্যাগ শ্রম রক্ত আর ঘামে ভেজা আমাদের স্বাধীনতা। আমরা দাম দিয়ে কিনেছি এ বাংলা, কারো দানে পাইনি। আর এ জাতির স্বাধীনতার বিনিময়ে যারা জীবন দিয়ে দাম পরিশোধ করেছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির সুযোগ নিয়ে বারে বারে ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছে সদা ওঁৎপেতে থাকা একাত্তরের পরাজিত শক্তি। তারা এ স্বাধীন মানচিত্রটিকে খুবলে খেতে উদ্ধ্যত। বাঙালির কাছে বিজয় দিবস শুধু উৎসবের দিন নয়, স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার শপথেরও দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুখী-সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ার যাত্রা শুরুর দিনও এটি। ১৬ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারাদেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে রাতের শীত আর কুয়াশাকে তুচ্ছজ্ঞান করে লাখো বাঙালি সুশৃংখলভাবে তাদের প্রাণের অর্ঘ্য নিবেদন করছে আজ দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আর সব শহীদের প্রতি।

একান্ন বছর দীর্ঘ সময় আমাদের জীবনে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশের জন্য কৈশোর। ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ছিল বহু ত্যাগের বিনিময়ে এক গৌরবময় প্রাপ্তি। স্বাধীনতা পূর্ব শোষকদের শোষিত-নিঃশেষিত এক বাংলাদেশকে আমরা অর্জন করেছি আমাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে। আজ প্রশ্ন জাগে, কতটুকু মূল্য দিতে পেরেছি শহীদদের জীবনের? কেন একাত্তরে ভূমিষ্ঠ এ বাংলাকে আজও কৈশোরের গন্ডি পেরিয়ে যৌবনে পৌঁছে দিতে পারিনি ?

দীর্ঘ ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ডিসেম্বর স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা ‘সোনার বাংলা’। আমাদের লাল-সবুজের পতাকা অর্জন, সেই সঙ্গে দেশ গড়ে তোলার রক্ত শপথের কথা। মনে করিয়ে দেয় লাখো প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন দেশে অনাহারে-অভাবে থাকা মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কথা। তাই এই ডিসেম্বর অঙ্গীকারের মাস, প্রত্যয়বদ্ধ হওয়ার মাস। নতুন চেতনায় জেগে ওঠার মাস। দেশপ্রেমকে শানিত করার মাস।

মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও আমরা জাতিগত জীবনে যা অর্জন করতে পারিনি, জাতি হিসেবে আমাদের যেসব স্খলন তার উত্তরণ ঘটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ঘরে ঘরে, সমাজে-রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার দিন আজ। আমাদের অধিকার যেমন আমরাই ভোগ করব, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার দায় দায়িত্বও আমাদের। জেগে উঠতে হবে সবাইকে এক হয়ে। একাত্তরে অর্জিত বিজয় যেন ফ্রেমে বাঁধা ছবি, কুচকাওয়াজ আর পতাকা উত্তোলনে সীমাবদ্ধ না থাকে, সত্যিকারের বিজয় মূর্ত হোক শহীদদের স্বজনের চোখে-মুখে, গ্রামে-গঞ্জে, রাজনৈতিক ভ্রাতৃত্বে আর নেতৃত্ব্বে। বিজয় হোক ত্যাগে।

পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্মৃতিচারণ, আলোচনা, গণসঙ্গীত, চিত্রাংকন, মিছিল আর শোভাযাত্রাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধাবনত হূদয়ে স্মরণ করবে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান পুরুষ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে, যারা সে সময় ১ কোটি মানুষকে আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং আর সাহস দিয়েছিল। স্মরণ করা হবে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়াসহ অন্য বন্ধুরাষ্ট্রের ও ব্যক্তির অবদানের কথা।

Comment here