টেকনাফপর্যটন

ভাঙছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার :

ভাঙছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

ভাঙনের কবলে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এরইমধ্যে দ্বীপটির দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন ধরেছে। ভানের কবল থেকে এটিকে রক্ষা করা না গেলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে এমনটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই দ্বীপের চতুর্দিকে টেকসই বেড়িবাধঁ নির্মাণের দাবি উঠেছে সর্বত্র।

সেন্টমার্টিনে এখনো গড়ে ওঠেনি পরিকল্পিত পর্যটন শিল্প। তৈরি হয়নি পরিবেশবান্ধব কর্ম পরিকল্পনাও। এতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। সরকারিভাবে যেনতেন অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ থাকার কথা থাকলে এখানে প্রতিনিয়ত চলছে নির্মাণ কাজ।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব মিয়ানমার সীমান্তে ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপে প্রায় ৯ হাজার মানুষের বসবাস। দ্বীপের চতুর্দিকে প্রাকৃতিক প্রবাল দ্বারা আচ্ছাদিত। প্রতিবছর দেশ বিদেশের লাখ লাখ পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত দ্বীপটি। সরকারি বেসরকারিভাবে আধুনিক বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই মজবুত বেড়িবাঁধ। জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে অনেকাংশ সাগরে বিলীন হয়ে গিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ভবিষ্যতে প্রবাল দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন দ্বীপবাসী।

সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে  অতিজোয়ার ও বর্ষণে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভাঙনের কবলে পড়ে। যে ভাঙন বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করছে। যার কারণে সরকারের গৃহীত অনেক উন্নয়ন প্রকল্প কাজে আসছে না। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু রাস্তা ও স্থাপনা। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে সেন্টমার্টিনের ভাঙন ঠেকাতে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে সাগরের করাল গ্রাস এবং ভাঙন থেকে রক্ষার্থে টেকসই মজবুত বেড়িবাঁধ ও কাম সড়ক নির্মাণ খুবই দরকার।

অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিবলুল আজম কোরেশী বলেন, পর্যটন মৌসুমে অতিরিক্ত লোকজনের কারণে বাড়ছে স্থাপনা, উপকূলীয় বন হচ্ছে নিধন, বালি পাথর ব্যবহার হচ্ছে স্থাপনা নির্মানে, শামুক ঝিনুক ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলে জলবায়ু জনিত কারণে দ্বীপটির বেশ কিছু অংশে ভাঙন ধরেছে।

তিনি আরো জানান, পশ্চিম পাশের অবকাশ পয়েন্টটি এখন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে জেনারেটর রুম ভেঙে সাগরে মিশে গেছে। এ ভাঙন থামানো না গেলে অবকাশ রির্সোটটি সাগরে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পদেক্ষপ নেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে সেন্টমার্টিনে জীবন জীবিকা নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরীর কথা জানিয়েছেন ক্রেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের কর্মকর্তা মুজাহিদ ইবনে হাবিব বলেন, ‘দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে কোনো কর্মকৌশন বা পরিকল্পনা এখনো তৈরি করা হয়নি। যার কারণে এটি দিন দিন ধ্বংস হওয়ার পথে। এর থেকে উত্তরণ ঘটানোর জন্য ক্রেল প্রকল্প সেন্টমার্টিন নিয়ে একটি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা তৈরি করেছে। যা কি না আগামী ২৬ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এটি পাশ হলে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দ্বীপটিও রক্ষা পাবে।

সেন্টমর্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন,  সেন্টমার্টিনের দক্ষিণাংশ ও উত্তরাংশ সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে দ্বীপের আয়তন। বর্ষা এলেই ভাঙনের ভয়ে দ্বীপের মানুষ আতঙ্কে থাকেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, সেন্টমার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত ও অবস্থান যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। এখন অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে পরিবেশ ভারি হচ্ছে। জরবায়ুজনিত প্রভাবও লক্ষ করা যাচ্ছে। যার ফলে বেশকয়েক বছর ধরে বষার সময়ে সেন্টমার্টিনের কয়েটি স্পটে ভাঙন ধরেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা জিও ব্যাগের মাধ্যমে তা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে আসলে এটি রক্ষা করা দূরুহ। এ বিষয়ে বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি উচ্চমহলে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। এ লক্ষে উপজেলা প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

Comment here