আন্তর্জাতিকরোহিঙ্গা সমাচার

মংডু সফরে কফি আনান : রাখাইনদের বিক্ষোভ রোহিঙ্গাদের কথা বলতে দেয়নি সেনারা

coxs-teknaf-mangdou-pic-02

তোফায়েল আহমদ, জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ থেকে   

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিষয়ক কমিশনের প্রধান কফি আনান গতকাল শনিবার দুপুরে মংডু এলাকার কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে ওই এলাকায় বর্বরতার শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি, যদিও কথা বলতে অনেক রোহিঙ্গা সেখানে জড়ো হয়েছিল।

কিন্তু জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে যান সেনা সদস্যরা।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু কেয়ারিপ্রাং এলাকার কয়েকজন রোহিঙ্গা (নিরাপত্তার কারণে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না) কালের কণ্ঠকে জানায়, সকাল (শনিবার) থেকে তাদের এলাকায় সেনা সদস্যরা কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এর পরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা সাহস করে জড়ো হয়েছিল কফি আনানসহ কমিশনের সদস্যদের কাছে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার জন্য। কিন্তু সেনা সদস্যরা তা বুঝতে পেরে তাদের সরিয়ে নেন। অনেককে পাশের একটি স্কুলে আটকে রাখেন তাঁরা।

এদিকে কফি আনান মংডুতে পৌঁছার খবর পেয়ে ওই এলাকার রাখাইন সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থী লোকজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন আনান কমিশনের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে এক্ষুনি রাখাইন রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার দাবি জানায়। তবে সেনা সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়নি বা সরে যেতেও বলেনি।

 

টেকনাফে ২ নৌকাবোঝাই ২২ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বিজিবি

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় দুই নৌকাবোঝাই ২২ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বিজিবি। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত নাফ নদের দুটি পয়েন্টে থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফের (২) বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী।

এদিকে টেকনাফ বন্দরের উত্তর পাশে নাফ নদে অভিযান চালিয়ে কোস্ট গার্ড সদস্যরা এক লাখ ৩৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছেন। গতকাল রাত আড়াইটার দিকে এ চালান উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. নাফিউর রহমান জানান, কোস্ট গার্ড সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসব ইয়াবা উদ্ধার করেন। টহলদলের উপস্থিতি টের পেয়ে এ সময় পাচারকারীরা টেকনাফ স্থলবন্দরের পাশে পাহাড়ে পালিয়ে যায়।

 

টাকা বিলি হচ্ছে শিবিরে!

টেকনাফ ও কুতুপালং শিবিরগুলোতে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তারা সময়-সুযোগ বুঝে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করছে বলে অভিযোগ মিলেছে। লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান ডা. দুদু মিয়া বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পে কিছু নতুন মুখের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। যারা ক্যাম্পের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে নতুন আসা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর মধ্যে নগদ টাকা বিতরণ করছে। গতকাল লেদা শিবিরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুজন অপরিচিত লোক শিবিরে নতুন আসা রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে নগদ টাকা বিতরণ করেছে। একপর্যায়ে বেশি লোকজন জড়ো হয়ে পড়লে মসজিদের এক ইমামের হাতে টাকার একটি বান্ডিল দিয়ে চম্পট দেয় তারা। লেদা শিবিরের বি-ব্লকের মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকের হোসেন, এ-ব্লকের মাওলানা মোস্তাক ও মাওলানা মোহাম্মদ নূরের কাছে এসব টাকা রেখে যায় তারা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকে আরো উৎসাহিত করতেই এমন টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। শিবিরের পরিচালনা কমিটির কয়েকজন শেড মাঝি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের এসব টাকা বিতরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে এ-ব্লকের রোহিঙ্গা হোসেন মাঝি ও ইলিয়াছ মাঝি অন্যতম।

লেদা শিবিরের চেয়ারম্যান ডা. দুদু মিয়া বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছেন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।

ওদিকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েক রাত ধরে অপরিচিত লোকজন নগদ টাকা ছাড়াও শীতের কম্বল বিতরণ করছে। কুতুপালং অনিবন্ধিত শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানায়, রাতে এসব লোকজন এসে টাকা ও শীতবস্ত্র বণ্টন করে থাকে। এসব বিতরণকারীর নাম-পরিচয় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাতের আঁধারে রোহিঙ্গা শিবিরে টাকা বিতরণের ঘটনাটি উদ্বেগজনক। আমি মনে করছি কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠী সুকৌশলে গোপনে টাকা বিলি করে ওপারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করছে। ’

 

নাফ নদে দুই ভাসমান লাশ

নাফ নদে দুটি লাশ ভাসছে। গতকাল কেরুনতলী এলাকার নাফ নদের লালদিয়া ছোঁয়ারদিয়া দ্বীপ এলাকায় এ লাশ দুটি ভাসতে দেখা গেছে। টেকনাফে নাফ নদে মাছ ধরারত আজিজ উদ্দিন নামের এক জেলে এ তথ্য জানান। প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে নাফ নদের মিয়ানমার অংশের প্রাংপ্রো এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপি পলায়নপর রোহিঙ্গাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনার পরদিন নাফ নদের মিয়ানমার অংশে একই এলাকায় ৪৩ লাশ ভাসতে দেখা যায়। গতকাল ভাসমান যে দুটি লাশ জেলেরা দেখতে পায় তা বিজিপির গুলিতে নিহত লাশ বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া একই সময়ে টেকনাফের ওপারে মিয়ানমার অংশে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে আনতে গিয়ে বিজিপির হাতে ধরা পড়েছে তিন বাংলাদেশি দালাল।

 

সেন্ট মার্টিনসের এক জেলে গুলিবিদ্ধ

শুক্রবার রাতে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে মাছ ধরারত জেলেদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সেন্ট মার্টিনস পূর্বপাড়ার শামসুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলম। তাঁকে গতকাল সকালে কক্সবাজারে  চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। ওই নৌকায় পাঁচজন মাঝিমাল্লা ছিল। এর কয়েক দিন আগে সেন্ট মার্টিনস থেকে মাঝিমাল্লাসহ একটি নৌকা ধরে নিয়ে যায় বিজিপি। তাদের এখনো দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।

Comment here