আন্তর্জাতিকউখিয়াটেকনাফ

মংডু সফর করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট

teknaf-pic-001-1
জাবেদ ইকবাল চৌধুরী,কক্সবাজার
মংডু সফর করেছেন সরকারের তদন্ত কমিটির প্রধান ও মিয়ানমার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল মাইন্থ সেও । তিনি রবিবার সকালে হেলিকপ্টার যোগে রাখাইন রাজ্যের মংডুর উত্তাঞ্চলের বলি বাজার ও নাকফুরা গ্রাম পরিদর্শন করেন। সেখানের বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। মিয়ানমান সরকার আরাকানের ঘটনা তদন্তে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আর এ কমিটির প্রধান করেছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল থাইন্থ সেও কে। যার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াংগুনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যাসহ দমন পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। তার পরিদর্শনের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ওইব গ্রামে বিজিপি সদস্যরা সম্পীতির বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন বলেও একটি সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মংডু এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার রয়েছে।
কাজের সন্ধানে এপাড়ে ছুটছে রোহিঙ্গারা!
বর্বরতার শিকার হয়ে মিয়ানমারের কাটাতার ভেদ করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেশ পুরানো বিষয়। তবে ৯ অক্টোবর ৩ টি বিজিপি স্থাপনার পর শুরু হওয়া অভিযানের পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেশ উল্লেখ যোগ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। ঘটনার প্রথম দিক থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার ১৫ টি রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে চলে সেনা বাহিনীর বর্বরতা। এতে কেউ আটক হয়, কেউ মারা যায়, পুড়ে যায় শিশু । ধষর্ণেন শিকার হয় অসংখ্য নারী। এমন চিত্র তুলে ধরেন মিয়ানমার সীমান্ত পাড়ি আসা রোহিঙ্গা পরিবার গুলো। কিন্তু কিন্তু বর্তমান সময়ে নির্যাতনের চিত্র ভিন্ন বলে জানিয়েছেন সদ্য আসা রোহিঙ্গারা। কেউ কেউ বলছেন, নারীদের গ্রামের একটি জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়। বাছাই করে সুন্দর সুন্দর যুবতীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। সেখানে যৌন হয়রানী করা হচ্ছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে না আগের মত নির্যাতনের চিত্র। আবার কেউ কেউ স্বীকার করছেন, মিয়ানমারের মংডু শহরের সাথে অন্য গ্রামের লোকজনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতও করা যাচ্ছে না। পরিবারের লোকজন পালিয়ে হয়তো বাংলাদেশে বা পাহাড় জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। আর এমন পরিবার চলছে খাদ্য সংকট। আয় রোজগার করার মত কোন সদস্য না থাকায় সেখানে অবস্থান করা দুরহ হয়ে পড়েছে। এক সময় বিভিন্ন এনজিও এসব এলাকায় কাজ করতো এখন তা বন্ধ রয়েছে। সরকার বা অন্য কোন দিক থেকে পাওয়া যাচ্ছে না মানবিক সাহায্যও। তবে একটি এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার সর্তে জানিয়েছেন, সরকারী বাহিনীর সহায়তায় সীমিত জায়গায় ওর্যাল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাবিøউএফপি) সহায়তা দিতে পেরেছে। তা কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।
তিনি আরো বলেন, এতোদিন দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লেও এখন প্রায় স্বাভাবিক বলা যায়। তবে গ্রাসের যারা শহর কেন্দ্রিক কাজকর্মে লিপ্ত ছিলো তারা শহরে আসতে না পারায় কিছুটা বিপাকে রয়েছে। আর খাদ্য সরবরাহ ও রয়েছে, তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম। খোজঁ নিয়ে জনিি যায়, মংডুতে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য রয়েছে এসিএফ, এমএসএফ, মাল্টিজার ইন্টারন্যাশনাল, প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে কেয়ার, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ডবিøউ এফপি, সুরক্ষা নিয়ে ইউএনএইচসিআর এবং অভিবাসন নিয়ে আইওএম। কিন্তু বর্তমান পনিস্থিতে সেখানে এখন বন্ধ রয়েছে এনজিও কার্যক্রম। কবে নাগাদ এসমস্ত এনজিওরা কাজ করতে পারবে তাও বলছে না মিয়ানমার সরকার। এরফলে কাজকর্ম করতে না পেরে অর্ধাহারে অনাহারে না থেকে বাংলাদেশে পাড়ি দেওয়া অনেক সুবিধাজনক মনে করে অনুপ্রবেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা পরিবার। যদিও বা প্রতিদিন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) নাফনদে ঠেকিয়ে দিয়ে থাকেন ১০/১২ টি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা। এ ছাড়া মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ(বিজিপি) ও নৌ বাহিনী ইতিমধ্যে কয়েক শত পরিবারকে নাফনদের মিয়ানমার অংশ থেকে আটক করেছে বলেও মিয়ানমারের একটি দায়িত্ত¡শীল সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু এরপর ও প্রতিদিন কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে বর্তমানে শুধু মাত্র খাদ্য সংকট বা আর্থিক সংকটের কারনে বাংলাদেশে পাড়ি জমাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ প্রসংগে টেকনাফে লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়রম্যান ডা.দুদু মিয়া বলেন, মংডুতে আগের তুলনায় সেনা বাহিনীর নির্যাতন কমে গেছে এমন তথ্য সদ্য ক্যাম্পে আসা লোকজন থেকে জানা গেছে। তবে সেখানে কোন কাজ না থাকায় আয় রোজগার করতে পারছেনা গরীব রোহিঙ্গা পরিবার গুলো। ফলে তার চেয়ে বাংলাদেশের ক্যাম্পে আসলে হয়তো কিছু সহযোগিতা পাবে এমন আশায় এখনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। লেদা অনিবন্ধিত শিবিরে কয়েকদিন আগে আসা আমিনা বেগম জানান, পরিবারের ৮ জন সদস্য, আয় রোজগারের কোন রাস্তা খোলা নেই মংডুতে, ছেলে মেয়েদের খাবার দিতে পানি না, নদীতে মাছ ধরতে পারি না। তাই বাংলাদেশে আসা। এখানে দৈনিক কাজকর্ম করে অন্তত সংসার চালাতে কষ্ট হবে না । কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে গত শনিবার টেকনাফে হোয়াইক্যং লস্বাবিল এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন হাসান আলীর পরিবার, ১০ সদস্য নিয়ে পাচঁ তিন সময লেগেছে এখানে পৌঁছতে। একএক দিন একএক জায়গায় থেকেছেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ভাগ করে কয়েকজনের বাড়ীতে খেয়েছেন। কয়দিন খাওয়াতে পারে । এরাওতো কষ্টে আছে। তাই কাজের সন্ধানে চলে আসা বাংলাদেশে। এখানে ধান ক্ষেতে কাজ করে বা পাহাড়ে গিয়ে লাকড়ি এনে সংসার চালাতে হচ্ছে বলেও জানান হাসান।

এখানে আর একটি বিষয সবার নজর কাড়তে শুরু করেছে তা হলো। গুলিতে বা আগুনে জ্বলসানো লোকজনের সন্ধান তেমন টি বাংলাদেশে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে ছিলো হাতেগোনা কয়েকজন। মিয়ানমারের বর্বরতার শিকার সেই সব আহত লোকজন কোথায় চিকিৎসা নিচেছ সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ প্রসংগে আইওএম ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার সৈকত বিশ্বাস জানান, লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও শিশু রুগীর সংখ্যা বেশী। গুলিবিদ্ধ , আহত ও আগুনে জ্বলছে গেছে এ ধরনের রোগী পাওয়া যায় নি । বর্তমানে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা নেই বললেই চলে বলেও তিনি জানান। এখানে অনাহারে থাকার কারনে অসুস্থ্য হয়ে পড়া বৃদ্ধ , নারী ও শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বেশী। এ ছাড়া ধষর্ণের শিকার হয়েছে এ ধরনের দু এক জন মাত্র চিকিৎসা নিয়েছে। আনেকে এসব বিষয়ে কথা বলতে চায় না বলেও প্রতিয়মান হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে এমনটি জানালেন ্ওই কর্মকর্তা।
রোহিঙ্গা বোঝাই ৭ টি নৌকা ফেরত
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা বোঝাই ৭ টি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) সদস্যরা।
আজ সোমবার ভোরে নাফ নদীর ২ টি পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে ছিল। বিজিবি টেকনাফস্থ ২ ব্যাটলিয়ানের উপ অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী জানান, নাফ নদীর ২ টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ৭ টি নৌকাকে নাফনদের জলসীমার বাংলাদেশ-মিয়ানমারের শূন্যরেখা থেকে ফেরত পাঠানো হয়। প্রতিটি নৌকাতে ১০ থেকে ১৫ জন করে রোহিঙ্গা ছিল।

Comment here